শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দোকান ভাড়া দেবে নাকি ক্ষুধা মেটাবে, শঙ্কায় সেলুনকর্মীরা

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
কাজে ব্যস্ত এক সেলুনকর্মী -ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। সংক্রমণরোধে দেশে দেশে চলছে লকডাউন। সেই প্রাদুর্ভাবের ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। তাই শহর, বন্দর, নগর সব স্থানে মানুষে মানুষে বজায় রাখা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব, যাকে মূলত শারীরিক দূরত্ব বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশেও সামাজিক নানা বিধিনিষেধ চালু হয়েছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি আরও বাড়ানো হয়েছে। এদিকে দিনের পর দিন বন্ধ রয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের সেলুন। আর দিনকে দিন অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে নগরের অধিকাংশ সেলুনকর্মীর। যখন হাতে অফুরন্ত কাজ ছিল তখই কেবল খেয়ে পড়ে থাকতেন সেলুনকর্মীরা। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে। আরও কয়েকদিন গেলে কীভাবে তারা পরিস্থিতি সামাল দেবেন, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে দেশে কার্যত লকডাউন অবস্থা চলছে। ছোট-বড় সবাইকে বাসার ভেতর থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, ফার্মেসি ছাড়া অন্যান্য সব কিছু বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকার ঘোষিত এই নিষেধাজ্ঞা চলছে গত ২৬ মার্চ থেকে। চলবে এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হতেও পারে। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই দীর্ঘ সময় কাজ না থাকায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে নরসুন্দরদের।

বিপাকে পড়া এসব সেলুনকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ নরসুন্দর হাটে, বাজারে শহরের অলিগলি, পাড়া-মহলস্নার ছোট-বড় সেলুনে কাজ করেন। তদের সেলুনে চুল কাটার কাজ হলেই টাকা উপার্জন হয় নতুবা না। তাই এখন সেলুন বন্ধ করে কাজ-কর্মহীন দিন কাটছে তাদের।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর ও মগবাজারসহ শহরের কোথাও কোনো সেলুন খোলা নেই। এর মধ্যে অনেক নরসুন্দর গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আবার যারা ঢাকায় আটকা পড়েছেন, তারা রয়েছেন ব্যাপক চিন্তায়।

মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় সেলুনে কাজ করেন আজিম। তিনি বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। বসবাস করেন জেনেভা ক্যাম্পে। তিনি বলেন, 'গত ছয়-সাত দিনেই অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। কোনো রকম খাইয়া, না খাইয়া আছি। সামনের বাকি দিনগুলাতে কী করব বুঝতেছি না।'

মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডের ৩ নম্বর সড়কের একটি সেলুনে কাজ করেন মোহাম্মদ কালাম। এই উর্দুভাষী থাকেন কৃষি মার্কেট টোল ক্যাম্পে। তিনি জানান, হাতে জমা রাখা কিছু টাকা দিয়ে হাটবাজার, তরিতরকারি সবজি কিনে রেখেছিলেন। তা শেষ, এখন কী করবেন, তার কোনো পথ জানা নেই।

হতাশা প্রকাশ করেন কারওয়ান বাজারের সেলুন মালিক রিপনও। তিনি বলেন, 'কী করোনা আইলো, কাজকাম তো দূরে থাক, দোকানপাটও বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে! কর্মচারীরা বাড়ি চলে গেছে। পুরো দেশ লকডাউনে থাকায় বাস গাড়ি বন্ধ, তাই কর্মচারীরা বাড়ি গেলেও নিজে গ্রামের বাড়িতে যাইতে পারি নাই।'

তিনি বলেন, 'বউ বাচ্চা থাকে বাড়িতে। প্রতি মাসে না হলেও দুই দেড় মাস অন্তর অন্তর টাকা পাঠাই। গত ১৯ তারিখে বাড়িতে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়ে কোনোভাবে খাইয়া, না খাইয়া আছি।'

তিনি আরও বলেন, 'হাতে কিছু টাকা ছিল, এই সামান্য কিছু জমা! খরচ হয়ে গেলে বউ বাচ্চা নিয়া কি খামু? এখন যে কারও কাছ থেকে ধার নিমু, সে সুযোগও নাই। যারা ঢাকায় সেলুনে কাজ করে, সবারতো একই অবস্থা। কারও কাছে হাততো পাততে পারি না ভাই। আমরা কাজ করার লোক।'

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক সেলুনের কর্মচারী এমনকি মালিকও নিষেধাজ্ঞা শুনেই ঢাকা ছেড়েছেন। কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, এসব সেলুনের মালিক ঠিক সময় ঢাকায় না ফিরলে তাদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

যদিও খাবারের চিন্তা তেমন নেই সেলুন মালিকদের। তবে তাদের কপাল কুঁচকে আছে দোকান ভাড়া, বিদু্যৎ ও পানির বিলের কারণে। ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে হতেই খরচের খাতা খুলবে। তাই শঙ্কায় দিন কাটছে সেলুনকর্মীদের দোকান ভাড়া দেবে নাকি পেটের ক্ষুধা মেটাবে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94998 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1