শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণে বতর্মান সরকারের রেকডর্

১০টি পাবলিক ও ৪৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন দেশে বতর্মানে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৬৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি হয়েছে ২৬,৩৭০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
যাযাদি রিপোটর্
  ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বতর্মান সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণে রেকডর্ গড়েছে। সরকারি হাইস্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ হয়েছে। সারাদেশে ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেলাপযার্য় ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে বিশ্ব ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ সরকার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল পযর্ন্ত দেশে সরকারি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠান ছিল ২৮৯টি। ২০১৬ সালে সরকারি স্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ৩৩০টি স্কুল ও ৩০১টি কলেজ জাতীয়করণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) কমর্কতার্রা সরেজমিন পরিদশর্ন করে স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষক-কমর্চারীদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ আনুষঙ্গিক সব তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, এরই মধ্যে ২৯৯টি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৪০টি কলেজ সরকারি হয়েছে। আর সাতটি নতুন সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে বতর্মানে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৬৩৫টি।

অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতির ৩৩০টি স্কুলের মধ্যে ২৮৯টি স্কুল সরকারি করা হয়েছে। আর অথর্ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির জন্য ৯টি পাঠানো হয়েছে। মামলা জটিলতায় আটকে আছে চারটি স্কুল। বাকিগুলো প্রধানমন্ত্রীর চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগে দেশে সরকারি হাইস্কুল ছিল ৩১৭টি। বতর্মান সরকারের দুই মেয়াদে আরও ২৯৬টি স্কুল সরকারি করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে আরও ১৯টি হাইস্কুল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘কলেজ সরকারিকরণের মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল প্রতিষ্ঠানগুলো সরেজমিন পরিদশর্ন। মাউশির ৯টি অঞ্চলের পরিচালকদের মাধ্যমে পরিদশর্ন করানো হয়েছে। তাদের কঠোর বাতার্ দেয়া হয়েছিল, কারও বিরুদ্ধে হলুদ খাম (ঘুষ) নেয়ার অভিযোগ পেলে সাদা খাম (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা) ধরিয়ে দেয়া হবে।’

‘এরপর তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও পরিদশর্ন তদারকি করা হয়েছে। অধ্যক্ষদের ডেকে বলা হয়েছিল, পরিদশর্ন কমর্কতাের্দর শুধু সাদামাটা আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন। এর বাইরে কোনো ধরনের সুবিধা দেয়ার অভিযোগ পেলে আপনাদের (অধ্যক্ষ) বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই সরকারিকরণের কমর্যজ্ঞটি শেষ হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে কলেজগুলো পরিদশর্ন কাযর্ক্রম শুরু করলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা জাতীয়করণ করা কলেজ শিক্ষকদের ‘নন-ক্যাডার’ ঘোষণার দাবিতে ক্লাস বজর্নসহ নানা কমর্সূচি পালন করেন। অপরদিকে, সরকারিকরণ করা কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতারা দাবি করেন, ১৯৭৮ সাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়ে আসছে।

এ ছাড়া ১৯৮১, ১৯৯৮ ও ২০০০ সালের বিধিমালা অনুযায়ী আত্মীকৃত শিক্ষকরা ক্যাডার মযার্দা পেয়ে আসছেন। আত্তীকৃত শিক্ষকদের আরও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দাবিতে তারাও নানা কমর্সূচি পালন করেন। দুইপক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে সারাদেশের কলেজগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষাথীর্রাও ক্ষতিগ্রস্ত হন।

উভয়পক্ষকে খুশি রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৩১ জুলাই ‘সরকারি কলেজ শিক্ষক ও কমর্চারী আত্তীকরণ বিধিমালা-২০১৮’ জারি করে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট থেকে কয়েক ধাপে ২৯৬টি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী এসব কলেজের শিক্ষকরা ‘নন ক্যাডার’ মযার্দা পাবেন। অন্য কলেজে বদলি হতে পারবেন না। তবে সরকারি কমর্ কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলে ক্যাডার মযার্দা পাবেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তির বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির আপত্তি ছিল। ওইসব কলেজের শিক্ষকদেরও ক্যাডারভুক্তির দাবি ছিল। আবার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের দাবি ছিল স্বপদে বহাল থাকার। এ জন্য আমরা ‘উইন উইন সিচুয়েশনে’ অথার্ৎ উভয়পক্ষকে সন্তুষ্ট করে এই সমস্যার সমাধান করছি। এখন সব কলেজে এক সঙ্গে দ্রæত পদ সৃজনের কাজ শুরু হয়েছে।

হাইস্কুলে সরকারিকরণে গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রেখেছেন মাউশির কমর্কতার্রা। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. সরকার আবদুল মান্নান বলেন, ‘একটি স্কুল যখন সরকারি হয়, তখন সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন শিক্ষাথীর্রা। সরকারি স্কুলে অনেক সুবিধা বেড়ে যায়। শিক্ষাথীর্রা কম খরচে পড়তে পারেন। শিক্ষকদের মান অনেক ভালো হয়। তাদের জীবনের মানও বেড়ে যায়।’

‘এ ছাড়া টিচিং লানির্ংসহ শিক্ষার সরকারি সব সুবিধা পায় স্কুলটি। সবকিছু মিলিয়ে যেখানে স্কুল সরকারি হয়, সেখানে শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবতর্ন ঘটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার যে খাতগুলোতে ইনভেস্ট করে, এর মধ্যে শিক্ষা হচ্ছে অন্যতম। শিক্ষা হচ্ছে, সবচেয়ে মানসম্মত টাকার বিনিয়োগ। যতগুলো স্কুল সরকারি হবে অভিভাবক ও শিক্ষাথীর্রা ততো বেশি উপকৃত হবেন। আমাদের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হবে।’

প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ : স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একসঙ্গে ৩৬ হাজার ১৬৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। তখন এক লাখ ৫৫ হাজার ২৩ জন শিক্ষক সরকারি হন। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২৬,৩৭০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করেন।

২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শিক্ষকদের বিশাল সমাবেশে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কয়েক দফায় ২৬,৩৭০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হয়েছে। সরকারি করার আগে নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ করা প্রধান শিক্ষকদের মাসিক বেতন ছিল পঁাচ হাজার ৫০০ টাকা ও প্রশিক্ষণবিহীনদের পঁাচ হাজার ২০০ টাকা। আর প্রশিক্ষণ করা সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতন চার হাজার ৯০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণবিহীনদের চার হাজার ৭০০ টাকা। এর বাইরে বেসরকারি শিক্ষকরা বাড়িভাড়া মাসে সবর্সাকুল্যে ২০০ ও চিকিৎসা ভাতা ২০০ টাকা করে পেতেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20800 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1