বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি হবে চট্টগ্রামে

যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
পাত্রে রাখা বিভিন্ন জাতের সাপের বিষ Ñফাইল ছবি

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ। দেশের ইতিহাসে প্রথম সাপের কামড়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) প্রতিষ্ঠিত হয় আলাদা গবেষণাগার।

প্রথমে ৫টি এবং পরে আরও ৭টি বিষধর সাপকে লালন-পালন করা হয় ওই গবেষণাগারে। ক্রেইট ও গোখরাসহ বিষধর ১২টি সাপের মধ্যে দুই মাসের মাথায় ৩টি ক্রেইট বাচ্চা ফুটায় ৩৮টি।

সে হিসেবে গবেষণাগারে বাচ্চাসহ এখন ৫০টি সাপ লালন-পালন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পূণর্বয়স্ক ১২টি সাপ থেকে ভেনমও (বিষ) সংগ্রহ করা হয়েছে।

গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া চমেকের পুরাতন ভবনের সুতপা লেকচার গ্যালারিতে ৩৬টি বক্সে রাখা হয়েছে এসব সাপ ও সাপের বাচ্চা। সেখানে নিবিড় পরিচযার্য় তাদের পালন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে। আর সাপ কামড়ানোর পর প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ।

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতি বছর এই হাসপাতালে গড়ে এক হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে আহত হয়ে ভতির্ হন। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর পযর্ন্ত ১ হাজার ৮০ জন ভতির্ হয়েছেন। এর মধ্যে ৮১৯ জনকে সাধারণ সাপ কামড় দেওয়ায় তাদের দেহে বিষ পাওয়া যায়নি। তবে ২৩ জনের শরীরে বিষধর সাপের বিষ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে সুস্থ হয়েছে ১৮ জন, আর মারা গেছে ৪ জন।

দেশে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এখন যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়, তা ভারতসহ অন্যান্য দেশে থেকে আসছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, একেক দেশের সাপের বিষ একেক রকম। ভারতের গোখরা সাপের বিষ আর বাংলাদেশে এই সাপের বিষ একইরকম নয়। অন্যান্য সাপের বেলায়ও একই। তাই ভারতের তৈরি অ্যান্টিভেনম ইঞ্জেকশনে বাংলাদেশের কোনো রোগী ভালো নাও হতে পারে। অথচ বছরের পর বছর ধরে ভারতের অ্যান্টিভেনম দিয়েই বাংলাদেশে সাপের কামড়ের রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এরই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আথির্ক সহায়তায় ৫ বছর মেয়াদি অ্যান্টিভেনম তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়। এ কাজে দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জামাির্নর গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা।

প্রকল্পের মূল দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ইতোমধ্যে পরিপক্ব ১২টি সাপ থেকে ভেনম সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া দু’মাস লালন-পালন করার পর ৩টি ক্রেইট (কেউটে) ৩৮টি বাচ্চা দেয়। প্রথম পযাের্য়র কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর, আশা করছি এর মধ্যেই অ্যান্টিভেনম তৈরিতে আমরা সফল হব।

তিনি বলেন, বিষ সংগ্রহের উপযোগী করে তোলার জন্য এই সাপগুলো পালন করা হচ্ছে। প্রাপ্ত ভেনমে কোন ধরনের প্রোটিন উপাদান আছে, তা নিণর্য় করা এবং যেসব অ্যান্টিভেনম দেশে আছে সেগুলো কতটা কাযর্কর হয়, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে শেষ করে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরির পর তা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করা হবে। সফলতা পেলেই মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে এ অ্যান্টিভেনম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21567 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1