দেড় শতাধিক আসনে মহাজোটভুক্ত দলগুলোর একাধিক প্রাথীর্ রাখাকে একটি কৌশল বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলছেন, বিএনপি যদি শেষ মুহূতের্ নিবার্চন থেকে সরে যায়, তাহলেও যেন প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূণর্ ভোট হয়, সেজন্য আগেভাগে এই কৌশল ঠিক করে রেখেছেন তারা।
একাদশ সংসদ নিবার্চনে ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পাটির্-জাপা, বিকল্পধারা ও জাতীয় পাটির্-জেপিকে নিয়ে মহাজোট গড়েছে আওয়ামী লীগ।
৩০০ আসনে মহাজোটের প্রাথীর্ ঠিক হওয়ার পরও দেখা গেছে, দেড় শতাধিক আসনে অন্য দলগুলোর প্রাথীর্রা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেনি। এর মধ্যে শতাধিক আসনে জাতীয় পাটির্র প্রাথীর্ও রয়ে গেছে।
শরিক দলগুলোর প্রাথীর্ থেকে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পযাের্য় উদ্বেগের মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত আলর্ রবাটর্ মিলারের সঙ্গে বৈঠকের পর দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের ‘কৌশলের’ কথা জানালেন।
তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, মহাজোট থেকে জাতীয় পাটির্, ১৪ দল, বিকল্পধারার মধ্যে আসন ভাগাভাগি হলেও তার বাইরে অন্য দলগুলোর নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে ভোট করায় আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই।
এতে ভোটের ফলে প্রভাব পড়বে না- প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, ‘আমাদের একটা কৌশল আছে, কৌশলটা তো বলব না। সুস্পষ্ট কৌশল আছে।
‘আমাদের প্রাথীর্র বিরুদ্ধে অ্যালায়েন্স দঁাড়িয়ে গেছে। আমরা না বুঝে দিয়েছি এটা? ইলেকশনের দিন বুঝতে পারবেন, অন্যরা ?যদি সরে যায় তারপর।’
‘এবার বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতার ফঁাদ তৈরি করতে দেব না,’ পরক্ষণেই বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপির বজের্নর মধ্যে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নিবার্চনে অধেের্কর বেশি আসনে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলোর প্রাথীর্রা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নিবাির্চত হয়েছিলেন।
এবার বিএনপি কামাল হোসেনের সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটের লড়াইয়ে নামলেও তারা শেষ মুহূতের্ সরে গিয়ে নিবার্চন বিতকির্ত করতে পারে বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সন্দেহ।
বিএনপি নিবার্চন থেকে সরে দঁাড়াবে বলে মনে করছেন কি না- প্রশ্ন করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি এখনো সেটা মনে করি না, তারা থাকবে এটাই আশা করব।
‘কিন্তু তাদের সিদ্ধান্ত তো আমি জানি না, এখনো তারা পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। তাদের যে কাযর্কলাপ, তাতে সংশয় জাগে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, তাদের ভোট থেকে সরিয়ে দিতে চায় ক্ষমতাসীন দল।
বেশি প্রাথীর্ রাখার কৌশল কি বিএনপিকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা থেকে- এই প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘না, না; তারা সরে যেতে পারে বলেই অ্যালায়েন্সকে নিয়ে কৌশল নিয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মন্ত্রী কাদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ফ্রি ও ফেয়ার নিবার্চন আশা করে। আমি বলেছি, এখন পযর্ন্ত নিবার্চনের পরিবেশ অনেক ভালো। তাই প্রত্যাশা করছি, পিসফুলি হবে।
‘সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু নিবার্চন কমিশনকে সহযোগিতা করবে, যাতে নিউট্রাল ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা এই আশ্বাস আবারও দিয়েছি।’
রাষ্ট্রদূত মিলার সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন চাওয়ার কথা তিনি বলেছেন। নিবার্চনী সহিংসতা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
‘বলা হয়েছে, সবার এটা পরিহার করা উচিত, কারণ গণতান্ত্রিক ও নিবার্চনী প্রক্রিয়ায় এটি অংশ হতে পারে না। সহিংতা এড়িয়ে যেতে হবে, কারণ সহিংসতা নিবার্চনী প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সহিংসতা এড়িয়ে চলতে তার দল ‘যথাসাধ্য’ চেষ্টা করছে।
‘নিবার্চনকেন্দ্রিক ভায়োলেন্স চরম রূপ নিয়েছে নোয়াখালী ও ফরিদপুরে। ক্যাজুয়াল্টির দুজনই আওয়ামী লীগের। সরকার হিসেবে এখানে ভায়োলেন্সকে এড়িয়ে চলেছি যথাসাধ্য। আমাদের নেত্রীর সংযম ও সহিষ্ণুতা প্র্যাকটিস করার বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি।’
প্রচারে বাধা পাওয়া নিয়ে বিএনপির অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনি একজন প্রাথীর্, আপনার পক্ষে জনমত যদি প্রবল হয়, কেউ বাধা দেয়ার সাহস পাবে না।
‘কারও মিটিংয়ে পুলিশ বাধা দিয়েছে সে রকম কী হয়েছে? একটা-দুটো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটতেও পারে। এখন কারও যদি অবস্থান দুবর্ল হয়, দুবর্ল অবস্থানের কারণে তারা পিছিয়ে যায়, অবস্থানটা সবল হলে এগিয়ে যেতে পারত।’
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, ‘দুবর্ল পাটির্ বেশি বেশি গোলমাল করে। জেতার ব্যাপারে যারা আশাবাদী, তারা গোলমাল করতে যাবে না।’
গাড়িতে হামলা ও গ্রেপ্তারে ক্ষেত্রে দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করে কাদের বলেন, ‘এ ক্ষোভটা আমাদের দলেও আছে, বিএনপির ক্ষেত্রেও তো এটা হতে পারে।’
নিবার্চনে সবার সমান সুযোগ না থাকার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অসুবিধা দেখছি না। আমি আমার গাড়িতে পতাকা ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এলাকায় গেছি, প্রটেকশন তো দিতে পারে।
‘যারা বিপক্ষ যেমন ধরেন মওদুদ আহমদ সাহেবকেও নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। যার জীবনের ওপর যত প্রকার আক্রমণের আশঙ্কার কথা গোয়েন্দা রিপোটের্ আছে, সে আওয়ামী লীগের হোক আর বিএনপির হোক, তাকে যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া ইসির নিশ্চিত করা উচিত।’