বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপচিকিৎসার শিকার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা!

যাযাদি রিপোটর্
  ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু Ñফাইল ছবি

ডায়রিয়া হলে শিশুকে ওরস্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি সব ধরনের খাবার দিতে হবেÑ এটাই স্বাভাবিক চিকিৎসা। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। এই অবস্থা প্রতিরোধে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসকরা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে কথা হয় সোহরাওয়াদীর্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার দেড় বছরের ছেলে সাইফ ইবনে আলিফ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য ভতির্ করেছেন এখানে। সুমাইয়া জানান, ছেলের ডায়রিয়া হওয়ায় স্থানীয় ফামেির্সতে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক (ফামেির্সর সেলসম্যান) ওরস্যালাইনের পাশাপাশি চারটি অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দেয় এবং কোনো খাবার খাওয়াতে না করেছে।

সুমাইয়া বলেন, ‘ছেলের ডায়রিয়া কমে না দেখে প্রথমে ওরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে সিট খালি নেই দেখে ছেলেকে এখানে নিয়ে এসেছি। এখানকার চিকিৎসক বলেছেন, ওকে ওরস্যালাইন খাওয়াইলেই হতো। সব ধরনের খাবার ও যা যা খায়, সবই দিতে হতো। আমি তো বুঝি নাই চিকিৎসক (ফামেির্সর দোকানদার) যা বলেছে, তাই করেছি।’

প্রায় একই ধরনের ঘটনার শিকার রাজধানীর লালবাগের শিশু নিশাত আক্তার (১৪ মাস)। সেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তার মা সুফিয়া বেগম সন্তানকে নিয়ে প্রথমে স্থানীয় ফামেির্সতে গিয়েছিলেন। তাকেও ওরস্যালাইনের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় এবং কোনো খাবার দিতে নিষেধ করা হয়। বললেন নিশাতের মা সুফিয়া বেগম।

শুধু সুমাইয়া আক্তার বা সুফিয়া বেগম নয়, বেশির ভাগ মা-বাবাই শিশুদের ডায়রিয়া হলে হাসপাতালে না নিয়ে ছুটে যান স্থানীয় ফামেির্সতে। অনেক মা আবার শিশুর জন্য এক প্যাকেট ওরস্যালাইন নিধাির্রত আধা লিটার পানিতে না গুলিয়ে অল্প পানিতে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ান। অজ্ঞতা থেকেই তারা এটি করেন। আর এই ভুলের শিকার হচ্ছে শিশুরা। ফলে শিশুরা সুস্থ হওয়ার বদলে ভুল চিকিৎসায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি ফামেির্সর বিক্রেতা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি গত ৩৭ বছর ধরে ফামেির্স চালাই। বিভিন্ন সময় রোগীরা চাইলে ওষুধ দেয়াই লাগে। ডায়রিয়া হলে ফিলমেট ট্যাবলেট খেতে দিই।’

এ অবস্থা পরিবতের্ন ফামেির্স থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে ঢাকা জেলা সিভিল সাজর্ন ডা. মো. এহসানুল করিম বলেন, ‘আমার কমর্ এলাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়ার বাইরে। ওইসব এলাকায় আমাদের নিজস্ব কমীর্ আছে, যারা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সচেতনতার কাজগুলো করে। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশনের মধ্যে আমাদের নিজস্ব কোনো কমর্কতার্ নেই, সিটি করপোরেশনেরও নিজস্ব কোনো কমর্কতার্ বা কমীর্ নেই। তাদের নিজস্ব কোনো নেটওয়াকর্ নেই। তারা কিছু এনজিওর মাধ্যমে কাযর্ক্রম চালায়, যেটা খুব সমন্বিত না এবং খুব একটা কাযর্করও না। ঢাকা সিটির তথ্যগুলো আমরা তখনই পাই যখন কোনো হাসপাতালে বেশি রোগী ভতির্ হয়।’

ফামেির্সতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওষুধ বিক্রি হবে রেজিস্টাডর্ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। কিছু কিছু ওষুধ ফামেির্স বিক্রি করতে পারে। যেমনÑ প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতি হবে না। এ ধরনের প্রোডাক্ট সারা পৃথিবীতে আছে, যেগুলো ফামেির্স থেকে কেনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হচ্ছে, যদিও এটা আইনসম্মত না।’

জাতীয় পুষ্টি সাভিের্সর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. এম ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমরা সাধারণত ডায়রিয়া হলে শিশুকে স্বাভাবিক খাবার, ওরস্যালাইন এবং শিশুদের জিঙ্ক সিরাপ খাওয়াতে বলি। এগুলো খাওয়ানোর পর অবজারভেশন করতে বলি। তিন দিন পযর্ন্ত মোটামুটি এভাবে শিশুকে অবজারভেশনে রাখা হয়। তিন দিনে সাধারণত ডায়রিয়া কমে যায়। যদি না কমে তখন যেকোনো চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামশর্ নেয়া ভালো। অথবা শিশুকে সরাসরি হাসপাতালে ভতির্ করানো উচিত। আমাদের সবগুলো সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুদের ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেয়া হয়। আর ডায়রিয়া নিয়ে অভিভাবকদের সচেতনতার কাজটি স্পেশালি যদি বেশি পরিমাণ কেস থাকে, কলেরা বা ডায়রিয়া তখন এই কাজটি আইসিডিডিআর-বি করে থাকে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘ফামেির্সগুলো রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক নিজেরাই দেয়। কিন্তু তাদেরতো অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার কথা না। দেখি, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাপ করব, কীভাবে বিষয়টির সমাধান করা যায়।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<30913 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1