বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
চলছে আধুনিকায়নের কাজ

সরছে না সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের শিশুপাকর্

যাযাদি রিপোটর্
  ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের শিশুপাকের্ একটি রাইডে একটি পরিবার Ñফাইল ছবি

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমপের্ণর ঐতিহাসিক স্থান রাজধানীর সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের এক পাশে অবস্থিত শিশুপাকির্ট স্থানান্তর করা হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানটি সংরক্ষণ করতে দীঘির্দন ধরে পাকির্ট স্থানান্তরের কথা জানানো হলেও সে উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে সরকার। বরং পাকির্টর আধুনিকায়নে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নিমার্ণ (৩য় পযার্য়)’ শীষর্ক প্রকল্পের আওতায় এ কাজ শেষ করা হবে। এ প্রকল্পে শুধু পাকের্র অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এরই মধ্যে পাকির্ট অনিদির্ষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এর আগে ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ২৬ মাচের্র মধ্যে রাজধানীর শাহবাগ থেকে শিশুপাকর্ স্থানান্তর করা হবে। পরবতীের্ত বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নাকচ করে দেন। পাশাপাশি সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের সঙ্গে একীভূত করে পাকির্টর আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, পাকের্ ঘুরতে আসা শিশুরা সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের গøাস টাওয়ার দেখে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পকের্ জানতে পারবে। প্রকল্পে শিশুপাকের্র পাশাপাশি সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের সৌন্দযর্ বৃদ্ধির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। গøাস টাওয়ারের দৃষ্টিসীমায় যেন বিঘœ না ঘটে সে কথা মাথায় রেখে স্থাপনা নিমার্ণ করা হবে।

এরই মধ্যে পাকের্র উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। পাকের্ নতুন রাইড বসিয়ে দশর্নাথীের্দর কাছে আকষর্ণীয় করে তোলার পাশাপাশি সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের নিচে তৈরি হবে ভূ-গভর্স্থ ৫০০টি গাড়ি রাখার পাকির্ং। নিমার্ণ করা হবে পাকর্ ও উদ্যান মিলিয়ে কয়েকটি ফুড কোটর্। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন জলাধারসহ হঁাটার পথ, দশর্নাথীের্দর জন্য বসার স্থান, আন্ডারপাস, মসজিদসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নিমার্ণ করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রণীত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে গণপূতর্ অধিদফতর। শিশুপাকের্র আধুনিকায়নের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এজন্য সংস্থাটিকে মূল বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে ৭৮ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এ থেকে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার জন্য কনসালটেন্সি ফি বাবদ এক কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। পঁাচ কোটি টাকা রাখা হয়েছে পুরনো স্থাপনা অপসারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে। বাকি ৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে ১৩টি ইকুয়েপমেন্ট ও আন্ডার গ্রাউন্ড পাকির্ং নিমাের্ণ। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ পযর্ন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়াসর্ লিমিডেট (এনডিই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে শিশু-কিশোরদের জন্য গড়ে ওঠা সরকারি এই বিনোদন কেন্দ্রটির সবগুলো রাইডই মেয়াদোত্তীণর্। ৩৯ বছরের পুরানো এসব রাইডের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৯ বছর আগে। ফলে ঝুঁকি নিয়েই এসবে চড়ছে শিশুরা। পাকের্র পরিবেশও ভালো নয়। তা সত্তে¡ও শিশুদের অন্যতম আকষর্ণ এই পাকের্ ভিড় লেগেই থাকে। রাইডগুলোতে ওঠার পর আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা। বিষয়টি চিন্তা করে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ পযর্টন করপোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের শাহবাগ সংলগ্ন অংশে ১৫ একর জায়গায় গড়ে ওঠা পাকির্টর ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৯৭৮ সালের ২৩ নভেম্বর। পরের বছরের ১১ জুলাই পাকির্ট খুলে দেয়া হয় শিশুদের জন্য। সে সময় পাকের্র রাইডগুলো জাপানের মিশো করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে।

জানা গেছে, শুরুতে পাকের্ রাইডের সংখ্যা ছিল ১৪। তবে ঝুঁকিপূণর্ হওয়ায় আচাির্র, বেবি সাইকেল ও স্কেটিং রাইড বাদ দেয়া হয়। বতর্মানে সচল ১১ রাইড হলো রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূণির্, এসো গাড়ি চড়ি, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, ফুলদানি আমেজ, ঝুলন্ত চেয়ার, লম্ফ ঝম্ফ, এফ-৬ জঙ্গিবিমান, রেলগাড়ি ও বিস্ময় চক্র। এর মধ্যে এফ-৬ ফাইটার জেট জঙ্গিবিমানটি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সহায়তায় স্থাপন করা হয়। এছাড়া পাকের্ একটি ঝরনা রয়েছে। এই ১১ রাইডের সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি খেলনা রয়েছে। কতৃর্পক্ষের অনুমতি নিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৯-ডি অ্যানিমেশন ও দুটি ঝুলন্ত নৌকার খেলনা রেখেছে। সম্প্রতি পাকির্টতে গিয়ে এর প্রধান ফটক বন্ধ দেখা গেছে। ভেতরে চলছে উন্নয়ন কাজ।

কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, উন্নয়ন কাজ চলায় অনিদির্ষ্টকালের জন্য পাকির্ট বন্ধ থাকবে। নানা ঝুঁকি ও প্রতিবন্ধকতার পরেও প্রতিদিন পাকির্টতে গড়ে সাত হাজার দশর্নাথীর্ আসত। এ থেকে বছরে সিটি করপোরেশনের আয় হয় সাড়ে চার কোটি টাকা। আধুনিকায়নের পর দশর্নাথীর্ বাড়ার পাশাপাশি আয়ও বাড়বে।

সিটি করপোরেশন বলছে, প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ পাকের্র ড্রয়িং ও ডিজাইনে অনেক পরিবতর্ন আনা হচ্ছে। পাকির্ট বিভিন্ন সময় স্থানান্তরের কথা বলা হলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। পাকের্র আধুনিকায়নের পাশাপাশি বাড়বে এর আয়তনও।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সাকের্ল) আনিছুর রহমান বলেন, ‘শিশু পাকর্ স্থানান্তর করা হচ্ছে না বরং আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। পাকের্র রাইডগুলো অনেক পুরাতন ও ঝুঁকিপূণর্। এ জন্য সরকার একে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্য গৃহায়ণ ও গণপূতর্ অধিদফতর তাদের কাজ শুরু করেছে। আমাদের কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। টেন্ডার শেষ হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাইডগুলো চলে আসবে। এরপর কাজ শুরু হবে। সংস্কার কাজ শেষ হলে পাকের্র চেহারাই বদলে যাবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<31659 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1