বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওজন স্কেল না সরালে ধমর্ঘটের হুমকি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের

যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১০:২২
চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা রোববার দোকান বন্ধ রেখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান নেন এবং মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে স্মারকলিপি প্রদান করেন Ñযাযাদি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সাত দিনের মধ্যে ওজন স্কেল সরিয়ে নেয়া না হলে চট্টগ্রামে পাইকারি পণ্যের বাজার এবং পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ওই দাবিতে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা রোববার সকালে দোকান বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান নেন এবং মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়ে নিজেদের দাবি পূরণের জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির পর এখন বড় দারোগাহাটে আরেকটি ওজন স্কেল চালু করা হয়েছে। অথচ দেশের অন্য কোথাও মহাসড়কে তা করা হয়নি। আগে প্রতি গাড়িতে ২০ থেকে ৩০ টন পণ্য আনা-নেয়া করা হলেও চট্টগ্রামের বড় দারোগাহাট এলাকায় ওজন স্কেল চালুর পর এখন ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। এতে করে চট্টগ্রামে মালামাল আনা-নেয়ায় দ্বিমুখী পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং খরচ বেশি পড়ায় চট্টগ্রামের মালামাল বাজারজাত করতে পাইকাররা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনসহ ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পগ্রæপ মিলিয়ে মোট ২৭টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সিটি মেয়রকে দেয়া ওই স্মারকলিপিতে ওজন স্কেল প্রত্যাহারের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে গ্যাস ও পানির স্বল্পতা দূর করাসহ চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। স্মারকলিপি দেয়ার পর এক সমাবেশে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের তুলনায় ‘নানারকম বৈষম্যের’ শিকার হচ্ছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। যার ফলে দেশে ‘ভারসাম্যহীন বাণিজ্য পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা আথির্ক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, “আগামী সাত দিনের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল প্রত্যাহার করা না হলে খাতুনগঞ্জের সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। পাশাপাশি মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হবে।” খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক অনিল চন্দ্র পাল বলেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু এখন দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা নদীপথে মংলা, নারায়ণগঞ্জ দিয়ে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। ‘আর দুটো ওজন স্কেলের কারণে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম থেকে মালামাল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে।’ আন্তঃজেলা ট্রাক ও কভাডর্ ভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিউর রহমান টিপু বলেন, চট্টগ্রাম থেকে মালামাল আনা-নেয়ার জন্য আগে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার গাড়ির প্রয়োজন হতো। এখন প্রতি গাড়িতে আগের মতো পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না বলে দ্বিগুণ ‘ট্রিপ’ লাগছে। ‘বড় দারোগাহাট আর দাউদকান্দিতে দুইবার করে গাড়ির ওজন মাপা হয়। দেখা যায় দুই স্থানে ওজন আসে দুইরকম। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১২টন ওজন করে গাড়িতে তুলে দেয়ার পরও মহাসড়কের ওজন স্কেলে যাওয়ার পর ওজন দেখা যায় বেশি। ফলে জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে পরিবহন ব্যবসায়ীদের। স্মারকলিপি গ্রহণ করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ব্যবসায়ীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানো হলেও দেশের অন্যান্য মহাসড়কে তা নেই। এতে করে চট্টগ্রামে মালামাল আনা-নেয়ায় খরচ তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। এক দেশে দুই আইন তৈরি হয়েছে।’ বিষয়টি নিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন মেয়র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে