বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
নজরদারির অভাব

ডিএমপির নির্ধারিত বাস স্টপেজেই বিশৃঙ্খলা

দিনের বেশিরভাগ সময় এসব স্টপেজ ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা পার্কিংয়ের কাজে। কোথাও হকাররা দখল করে আছে বাসস্টপের জায়গা।
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাসস্টপেজের জায়গায় প্রতিনিয়ত এভাবেই রাখা হয় রিকশা -যাযাদি

রাজধানীর যেখানে সেখানে বাসে যাত্রী ওঠানামা প্রতিরোধে বাস স্টপেজের স্থান নির্ধারণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু, ডিএমপি নির্ধারিত বাস স্টপেজে নিয়ম মেনে চালকরা বাস রাখছেন না। বাসস্টপে বাস না থামিয়ে যত্রতত্র থামানোর কারণ খুঁজে দেখা গেছে, দিনের বেশিরভাগ সময় এসব স্টপেজ ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা পার্কিংয়ের কাজে। কোথাও হকাররা দখল করে আছে বাসস্টপের জায়গা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঢিলেমি বা নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে কোথাও কোথাও বাস স্টপেজের নির্ধারিত জায়গার ওপরেই বসে গেছে বাজার পর্যন্ত। আবার, যেসব স্থানে স্টপেজ ফাঁকা থাকে অনভ্যাস ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণে বাসচালকরা সেখানে বাস থামান না। চালকদের টার্গেট থাকে যাত্রী আর যাত্রীরা সড়কের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত তুলেই বাসে উঠতে পারেন। তবে ডিএমপির পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চালকরাই স্টপেজগুলো ব্যবহার করেন না। তারা সেখানে দাঁড়াতেও চান না। যাত্রীদের দাবি, বাসস্টপের জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন থাকে না, অনেক জায়গায় হকারদের কারণে দাঁড়ানোও যায় না। এ ব্যাপারে ডিএমপির দাবি, স্টপেজ ও যাত্রীদের স্টপেজে দাঁড়ানোর মতো পরিবেশের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, পুলিশের নয়।

সরেজমিন রাজধানীর বাবুবাজার, সোয়ারিঘাট, মিরপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, মতিঝিল, রামপুরা, বনানী-কাকলী, বাড্ডা শ্যামলী, কাওরানবাজার, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ডিএমপির নির্ধারিত স্টপেজে বাস থামছে না। যত্রতত্র বাস থামিয়ে বাসে যাত্রী ওঠানামার পুরনো চিত্রই রয়েছে।

২ এপ্রিল রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে (ল্যাব এইড হাসপাতাল থেকে নিউমার্কেটের দিকে যেতে) ডিএমপির নির্ধারিত বাস স্টপেজে দেখা গেছে, সেখানে একাধিক প্রাইভেটকার পার্কিং করা। প্রতিটি বাস সায়েন্সল্যাব সিগন্যাল ছাড়ার পরই চালকের ইচ্ছা অনুযায়ী যাত্রী তুলছে। সড়কের মাঝামাঝি আড়াআড়ি বাস রেখেও যাত্রী তুলতে দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুর থেকে আজিমপুরগামী ১৩ নম্বর রুটের একটি বাসের চালক রাসেল। সায়েন্সল্যাব স্টপেজে বাস না থামিয়ে কেন অন্য জায়গায় বাস থামিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'স্টপেজে যাওয়ার আগেই যাত্রীরা বাসের সামনে এসে হাত তোলে, দরজা ধরে ঝুলে পড়ে। আবার অনেকে আগে নামতে চায়। যাত্রীদের ইচ্ছামতো না নামিয়ে দিলে তারা গালিগালাজ করে। তাই স্টপেজে যাওয়ার আগেই গাড়ি থামাতে হয়।'

এদিকে, সোয়ারিঘাট এলাকায় ডিএমপির একটি নির্ধারিত বাস স্টপেজ রয়েছে। তবে শ্রমিকদের পণ্য ওঠানামার কারণে সেখানে বাস থামে না। এই স্টপেজে ৩ এপ্রিল দুপুরবেলা ঠেলাগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

রাজধানীর মগবাজারের নির্ধারিত বাস স্টপেজে প্রতিদিন সকালে মাছের বাজার বসতে দেখা গেছে।

আবার দেখা গেছে, যেখানে বাস স্টপেজ নেই সেখানেও কিছু কিছু কোম্পানির গাড়ি থামিয়ে ওয়েবিলে স্বাক্ষর করেন কোম্পানিগুলোর চেকার।

দেখা গেছে, স্টপেজে বাস না থামার জন্য যাত্রীরাও দায়ী। যাত্রীরা সুযোগ পেলেই সড়কে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে বাস থামার জন্য হাত তোলেন। কেউ কেউ দৌড়ে বাসের দরজা ধরে ঝুলে পড়েন। রাজধানীর প্রায় সবখানে এই চিত্র দেখা গেছে।

মহানগরের বনানীর কাকলী ফুটওভার ব্রিজের পাশেই ডিএমপির নির্ধারিত বাস স্টপেজ। সেখানে বিভিন্ন অ্যাপসচালিত মোটরসাইকেল দেখা গেছে ২ এপ্রিল দুপুরে। খালি জায়গা পেয়ে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও দেখা গেছে। এর মধ্যে টঙ্গী-গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী বলাকা পরিবহনের একটি মিনিবাস আসে। বাসটি স্টপেজে না থেমে স্টপেজ বরাবর সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামায়। কয়েকজন তরুণ দৌড়ে বাসটিতে ওঠার চেষ্টা করেন। তবে বাসের কন্ডাক্টর দরজা আটকে দেয়ায় তারা উঠতে পারেননি। তিন তরুণ আবার সড়কের পাশে চলে আসেন। ওই তিন তরুণের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের মধ্যে একজনের নাম শামীম। কেন ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়িতে উঠতে চেয়েছিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কোনো গাড়িতে ঝুঁকিমুক্তভাবে ওঠার সুযোগ নেই। সবসময় দৌড়েই উঠতে হয়। কারণ গাড়ির সংখ্যা খুবই কম।'

গত বছরের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা এলাকায় দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে যাত্রী ওঠানোর সময় একটি বাসের নিচে পড়ে মারা যান দুই কলেজ শিক্ষার্থী। এরপর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ই ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়। গত ১৬ আগস্ট কমিটি ১৭টি নির্দেশনা জারি করে, যার মধ্যে নির্ধারিত স্থানে বাস থামানোর নির্দেশনাও আছে। এ নির্দেশনা না মানায় মামলাও করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও বাসগুলোকে নির্ধারিত স্থানে থামানো যাচ্ছে না।'

ঢাকা শহরের বাস ও পথচারী ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ডিএমপির পক্ষ থেকে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাস স্টপেজের স্থান চিহ্নিত করে 'বাস স্টপেজ শুরু' এবং 'বাস স্টপেজে শেষ' লেখাযুক্ত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। তবে এরপরও কাজ হচ্ছে না। এজন্য বাসচালকদের অভিযুক্ত করেছে ডিএমপি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, 'বাসচালকরা স্টপেজে গাড়ি থামান না। এজন্য এসব জায়গায় রিকশা, প্রাইভেটকার থাকে। তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা করে দেয়ার পরও তারা সেখানে গাড়ি থামাচ্ছে না। এসব দেখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনেরও। তাদেরও দেখা উচিত।'

এদিকে নির্ধারিত ১৫৫ স্টপেজে যাত্রী ছাউনি করার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়াও বাস স্টপেজগুলো পরিচ্ছন্ন রাখারও অনুরোধ করেছে পুলিশ।

তবে পুলিশের এই দাবি অস্বীকার করেছে সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, গত ৩ এপ্রিল ডিএমপির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও বিআরটিসির কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে নির্ধারিত বাস স্টপেজে বাস থামানো ও যাত্রী ওঠানামার বিষয়ে আলোচনা হয়। উত্তম কুমার বলেন, 'ওই বৈঠকে বিআরটিসির কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তাদের চালকরা যাতে নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামান। বিষয়টি পুলিশ দেখাশোনা করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<44514 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1