বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুজন্মে অস্ত্রোপচার বেড়েছে ৫১ শতাংশ

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জুন ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২২ জুন ২০১৯, ১০:৩৮
সদ্যজাত এক শিশু

বাংলাদেশে শিশুজন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত দুই বছরে অস্ত্রোপচার ৫১ শতাংশ বেড়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন প্রকাশিত নতুন এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র গত বছরই বাংলাদেশে ৮ লাখ ৬০ হাজার অপ্রয়োজনীয় প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ৩ লাখ নারী থেকে যাচ্ছেন যাদের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলেও ব্যয় বহনের সামর্থ্য নেই কিংবা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন না। সেভ দ্য চিলড্রেনের সমকালীন এ রিপোর্টটি প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির দিকে গুরুত্ব দিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে মা ও শিশু দুইজনের ঝুঁকির কথা জেনেও দেশের ধনী শ্রেণির মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ অস্ত্রোপচারের দিকে ঝুঁকছে। বিশ্লেষণ বা রিপোর্টের মূল পর্যবেক্ষণগুলো হলো- ২০১৮ সালে বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা সিজারিয়ানের পেছনে খরচ করেছে ৪৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। এ খরচ প্রতিজনে গড়ে ৬১২ মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে হওয়া সমস্ত প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের মধ্যে ৭৭ শতাংশই অর্থাৎ ৮ লাখ ৬০ হাজার অস্ত্রোপচারই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল যেখানে ২০১৬ তে এই সংখ্যাটি ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার অর্থাৎ বৃদ্ধি ঘটেছে ৫১ শতাংশ। একই সময়ে প্রায় ৩ লাখ নারী থেকে যাচ্ছেন যাদের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলেও ব্যয় বহনের সামর্থ্য না থাকায় কিংবা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন না। ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ৪ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন এই বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব সহকারে দেখে ডাক্তারদের ওপর নজরদারি রেখে একটি সুষম ভারসাম্যে আসার জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও ফান্ডিং বাড়ানোর আশা রাখছে। সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং নবযাতক ও মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান বলেন, 'অস্ত্রোপচারের এই জনপ্রিয়তা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে দিনকে দিন মায়েরা আরও বেশি এই অস্ত্রোপচারের দিকে ঝুঁকছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে হয়তো এটি আরও বেশি আরামদায়ক হবে কিংবা তারা তাদের চিকিৎসকদের কথায়ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে দারিদ্র্য মায়েদের সত্যিই সিজারিয়ান প্রয়োজন হয় তারা সেটি পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেন না।' বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে হওয়া সমস্ত জন্মের ৮০ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। এর জন্য আংশিকভাবে বাংলাদেশের মেডিকেল সেক্টরের অব্যবস্থাপনা দায়ী এবং কিছু অসাধু চিকিৎসক দায়ী, যাদের কাছে সিজারিয়ান একটি লাভজনক ব্যবসা। ড. মান্নান আরও বলেন, 'চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সুবিধা আসলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে না গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে অনুপ্রাণিত করে।' 'শিশুজন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন, মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় নেয় এবং মা ও শিশু উভয়কে ঝুঁকিতে ফেলে। এটি প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট করে ফেলে। যেমন- শিশু মায়ের প্রসব রাস্তা দিয়ে বের হবার ফলে তার শরীরে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করতে পারে যা কিনা তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে, অস্ত্রোপচারের ফলে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে যেতে পারে না। এ ছাড়া মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য মায়ের সাথে শিশুর যে শারীরিক নৈকট্যে আসা দরকার সেটি প্রয়োজনের তুলনায় দেরিতে ঘটে।' বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হচ্ছে স্বীকৃত মিডওয়াইফের অভাব, যারা প্রাকৃতিক জন্মদানে সাহায্য করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই কেবল করে না, বরং ব্যস্ত চিকিৎসকদের বোঝাও অনেকাংশে কমায়। বাংলাদেশে এখন কেবল ২৫০০ মিডওয়াইফ রয়েছেন, সাম্প্রতিক একটি স্বাস্থ্যখাত পর্যালোচনা অনুযায়ী যা কিনা ২২ হাজার সুপারিশকৃত মিওয়াইফের এক দশমাংশ। এই অভাব পূরণের লক্ষ্যে ইউএন পপুলেশন ফান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে সেভ দ্য চিলড্রেন একটি মিডওয়াইফ ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। ড. মান্নান আরও বলেন, 'আয়, ভৌগোলিক ও সামাজিক অবস্থান এসব ভেদে প্রতিটি নারীর অধিকার রয়েছে সঠিক তথ্য ও সেবা পাওয়ার যাতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি উপায়ে তারা সন্তান জন্মদান করতে চান। মিডওয়াইফের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এই প্রক্রিয়ার একটি বড় অংশ। এ ছাড়া চিকিৎসাগতভাবে যদি সত্যিই সিজারিয়ান প্রয়োজন হয় তবে প্রতিটি মায়ের সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারা নিশ্চিত করতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে