বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রোববার বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ও পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় চার নেতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন -ফোকাস বাংলা

সাড়ে চার দশক আগে কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার দিনটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করেছে বাংলাদেশ।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর তার ঘনিষ্ঠ চার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে কারাগারে হত্যা করা হয়।

রাষ্ট্রের হেফাজতে হত্যাকান্ডের এই ঘটনাটি 'জেলহত্যা দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

তিনি প্রথমে সরকারপ্রধান হিসেবে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে জোটের নেতারা এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, 'সবচেয়ে কলঙ্কজনক রক্তাক্ত দুটি ঘটনা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর ৩ নভেম্বর। ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর একই সূত্রেগাঁথা, একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা।

'বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে দেওয়ার জন্য কারাভ্যন্তরে আমাদের জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির চারজন সংগঠককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।'

কাদের বলেন, 'আজকে যারা খুনি, তাদের অনেকেরই দন্ড কার্যকর করা হয়েছে। যাদের দন্ড কার্যকর হয়নি। যারা বিদেশে পলাতক, তাদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য জোরদার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে এবং এই কূটনৈতিক প্রয়াস সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।' ৩ নভেম্বরের হত্যাকান্ডের 'সুবিধাভোগীদের' বিষয়ে কমিশন গঠনের অগ্রগতি জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'সেটি এখনো সরকারের আলাপ আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'

তিনি বলেন, 'আজকে আমাদের শপথ হবে, শহিদদের স্বপ্ন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, জাতীয় চার নেতার যে স্বপ্ন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এটাই আজকে আমাদের অঙ্গীকার।'

দিনের কর্মসূচির শুরুতে সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়; উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা। সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও এম মনসুর আলী এবং একই সময়ে রাজশাহীতে কামারুজ্জামানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগে নেতারা।

বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, 'বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা হাজার বছরেও কাটিয়ে ওঠার মতো নয়। এই রাজনৈতিক শূন্যতা অপূরণীয় ক্ষতি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'দেশবিরোধী শক্তি এখনো রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এই সকল চক্রান্ত মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।'

যেখানে চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল, ঢাকার সেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর। সকালে সেখানে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

দন্ডিত আসামিদের মধ্যে যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদের দেশে ফেরাতে সংশ্লিষ্ট সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'যারা বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে, আইন অনুযায়ী তাদের প্রত্যাবর্তন করাতে হবে। আমরা সে প্রচেষ্টায় রয়েছি এবং তাদের সঙ্গে আমাদের নেগোসিয়েশন হচ্ছে।'

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতকারী সেনাসমর্থিত চক্রান্তকারীরাই কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছিল। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের হত্যাকান্ড ইতিহাসে বিরল।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কু্য-পাল্টা কু্যর ধূম্রজালের মধ্যে ৩ নভেম্বর সংঘটিত হয় জেল হত্যাকান্ড।

জেলহত্যার পর ২১ বছর এ হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে।

১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর এ মামলায় আসামি সৈয়দ ফারুক রহমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তারপর বিচারিক আদালতে রায় হয়।

তবে শুধু সেনাসদস্য মোসলেউদ্দিনের মৃতু্যদন্ড বহাল রেখে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট আপিলের রায় দেয়। ওই রায়ে নিম্ন আদালতে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি মারফত আলী এবং আবুল হোসেন মৃধাকে খালাস দেওয়া হয়।

নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহাম্মদকেও খালাস দেওয়া হয়।

হত্যাকান্ডের সুদীর্ঘ ২৯ বছর পর এর বিচারের রায় হলেও জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরা এ রায়কে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রহসনের রায়' আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের অভিযোগ, জেলহত্যার ষড়যন্ত্রের দায়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করা হয়।

২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে।

কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যামামলায় হাইকোর্টের রায়ে বাদ পড়লেও ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগ দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি দফাদার আবুল হাসেম মৃধার মৃতু্যদন্ড বহাল রেখে রায় দেয়।

কাকতালীয়ভাবে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে এই চার নেতা হত্যা মামলার চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ের শুনানি শেষ হয়। ১৯৭১ সালের ওই দিনে এই চার নেতার নেতৃত্বে কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে শপথ নিয়েছিল স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74053 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1