শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইন মানার গরজ নেই চট্টগ্রাম পথচারীদের

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ১২:১৫
সড়কে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পরও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা -যাযাদি

নতুন সড়ক পরিবহণ আইন কার্যকর হয়েছে শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে। এ আইনে যানবাহন চালকদের জন্য যেমন নির্দেশনা রয়েছে, তেমনি আছে পথচারীদের আইন না মানলে দন্ডের বিধান। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক সপ্তাহ ধরে নতুন আইন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। এতে যানবাহন চালকরা অনেকটা সতর্ক হলেও আইন মানার ব্যাপারে উদাসীন দেখা গেছে পথচারীদের। নতুন সড়ক আইনে যানবাহন চালকদের সংকেত মেনে চলতে হবে, পথচারীকে সড়ক-মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, পদচারী-সেতু, পাতালপথসহ নির্ধারিত স্থান দিয়ে পার হতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে চালক ও পথচারীকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে পড়তে হবে। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, রাস্তা অপ্রশস্ত হওয়ায়, প্রয়োজনের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায়, অনিয়ন্ত্রিত যাত্রী পারাপারের কারণে, বাস স্টপেজের অপ্রতুলতায়, যত্রতত্র গাড়ি রাখায় এবং অনেক বেশি মোটরসাইকেল চলাচল করায় সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা কষ্টকর হয়ে যায়। তাছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সড়কের পাশে কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাজার, পেট্রোল পাম্পের মত স্থাপনার উপস্থিতি ছাড়াও দেশের মানুষের 'আইন না মানার প্রবণতার কারণে' ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। বিদেশে যেখানে ৯৮ শতাংশ মানুষ আইন মানে বাংলাদেশে সেখানে ৯০ ভাগ মানুষ আইন মানে না। এই ৯০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য সবচেয়ে কঠিন। তবে পুলিশ বলছে, নতুন আইন প্রয়োগে তারা কঠোর হবে। ব্যক্তি বা পেশা দেখার কোনো সুযোগ নেই। এখন যেই হোক, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্ঘটনার জন্য শুধু বাস চালককে দায়ী না করে পথচারীদের আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার না হওয়া, চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে বা মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার না হয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। 'সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮' গত ২২ অক্টোবর কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট জারি করে সরকার। নতুন আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সড়কে আইন লঙ্ঘন করলে এ আইনে সাজা দেওয়া হবে। আইনে ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গের জরিমানা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার, হেলমেট না পরলে জরিমানা ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সিটবেল্ট না বাঁধলে, মোবাইল ফোনে কথা বললে চালকের সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও তিন বছরের জেল হতে পারে। নতুন আইনে চালকদের লাইসেন্স পেতে অষ্টম শ্রেণি, সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট রাখা হয়েছে। আইন ভঙ্গে জেল-জরিমানা ছাড়াও লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটা যাবে। পুরো ১২ পয়েন্ট কাটা গেলে লাইসেন্স বাতিল। চালক ও তার সহকারীকে নিয়োগপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গণপরিবহণে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন না করলে বা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি কিংবা আদায় করলে এক মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা এমনকি চালকের ১ পয়েন্ট কাটা যাবে। গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সড়ক নিরাপত্তাসংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ হাজার ৯৫৪ জন মারা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থার তথ্যমতে, সারাদেশে বছরজুড়ে যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তাতে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭০ শতাংশ হতাহত হয় সাধারণ পথচারী। টিআই প্রশাসন (বন্দর) এস এম শওকত হোসেন বলেন, ফুটপাত ক্রমাগত দখল হওয়ার ফলে পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলার পথ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে হাঁটার কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে মূল সড়কের অংশ। আর এতেই ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। ভারী যানবাহন চালকদের দোষারোপ করার পাশাপাশি সাধারণ পথচারীরা কতটুকু আইন মানছে সেদিকেও দৃষ্টিপাত করতে হবে বলে অভিমত তার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে