শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে ৯৯ শতাংশ নারীকর্মী ভালো আছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০৬
ড. এ কে আবদুল মোমেন

সৌদি আরবে কাজ করতে যাওয়া ৯৯ শতাংশ নারী ভালো আছেন এবং দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখ নারীকর্মী বিদেশে কাজ করেন। এর মধ্যে দুই লাখ ৭০ হাজারের মতো সৌদি আরবে আছেন। অভিযোগগুলো বেশির ভাগই সৌদি আরব থেকেই আসে। তিনি বলেন, সৌদি আরবেই কাজ করা দুই লাখ ৭০ হাজার নারীর মধ্য থেকে ফিরে এসেছেন আট হাজারের মতো। শতকরা হার অনুযায়ী ৯৯ শতাংশ নারী মোটামুটি ভালো আছেন। দেশে টাকাও পাঠাচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি থেকে ৫৩ জন নারীর মৃতদেহ এসেছে। এর কতজন আত্মহত্যা করেছেন, তা আমরা জানি না। ব্র্যাকের একটা স্টাডিজে দেখা গেছে, সর্বমোট ৫৩ জনের লাশ ফিরেছে। ড. মোমেন বলেন, 'বিদেশে নারীকর্মী নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। ওসব জায়গাতে শেল্টার তৈরি করেছি। নির্যাতিত হলে ওই শেল্টারে তাদের নিয়ে আসা হয়। এটা তাদের জন্য উন্মুক্ত। ইদানীং ২৪ ঘণ্টা হটলাইন তৈরি করেছি। যাতে তারা যেকোনো সমস্যার কথা জানাতে পারে।' পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'অনেক নারী দেশে ফিরে বলেন, তার মনিব তাকে অত্যাচার করেছেন। তিনি যদি আমাদের শেল্টার হোমে ফিরে তথ্য দেন, তাহলে আমরা মামলা করতে পারি। কিন্তু তারা ওখানে না বলে দেশে ফিরে এ ধরনের অভিযোগ করেন। তথ্য দিলে সৌদি সরকার দ্রম্নত ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু ভয় কিংবা অন্য কোনো কারণে আমাদের শেল্টার হোমে থাকার পরও তারা সেখানে কিছু বলেন না।' 'এ বিষয়ে কী করব এখনো আমরা জানি না। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।' এখন থেকে নারীকর্মী পাঠানোর আগে তার নিবন্ধন করাতে হবে বলে জানান তিনি। ড. মোমেন বলেন, 'রিক্রুটিং এজেন্সিরা নারীদের পাঠায়, কিন্তু কোনো নিবন্ধন করে না। তারা জানায় না কারা বিদেশে যাচ্ছে এবং কোন বাড়িতে তাদের পাঠানো হচ্ছে। আমরা এ জন্য সব এজেন্সিকে বলেছি, যাকে পাঠাবে তার একটা নিবন্ধন হতে হবে। এর ফলে আমরা তাকে খুঁজে পাব।' তিনি বলেন, 'বাসাবাড়িতে কাজ করা নারীরাই বেশি নির্যাতিত হন। বাসাবাড়িতে কাজ করতে নির্যাতনের আশঙ্কা বেশি।' ড. মোমেন বলেন, 'আমাদের প্রবাসী নারীদের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি, সব নারী নির্যাতনের শিকার হন না। কিছু কিছু নারী নিজের কারণেও নির্যাতিত হন। তারা একটু অন্য রকমের।' তিনি বলেন, 'আমাদের নারীরা ওখানে তাদের ভাষা বোঝে না, তাদের খাদ্যাভাসের সঙ্গে পরিচিত না। প্রথম যাওয়ার পর তারা ভাষার সমস্যায় পড়েন। মালিক যা আদেশ করেন, তিনি তা বোঝেন না। রান্না করতে বললে তার রান্না সৌদিদের মতো হয় না। এ ধরনের বহু রকম গ্যাপ আছে। তবে পাঠানোর আগে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন হতে পারে।' নারীকর্মী বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বৈষম্য করতে চাই না। অনেকে আন্দোলন করছেন নারীকর্মী পাঠানো বন্ধের জন্য। এতে নারীদের সুযোগ কমে যাবে।' 'সুতরাং কি করা হবে- এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। যারা দাবি করছেন, নারী না পাঠানোর, তারা কি ওদের চাকরি জোগাড় করে দেবেন? দেশে কি ভালো চাকরি হবে তাদের? আমি জানি না। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা দরকার,'- বলেন ড. মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সম্প্রতি সুমি নামে যে নারীকর্মীর দেশে ফেরার আকুতি জানানো ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি দেখে আমরা সংশ্লিষ্ট কনসাল জেনারেলের সঙ্গে কথা বলি তাকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু সমস্যা দেখা যায়, ওই মেয়েটি জানাননি তিনি কোন শহরে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তার লোকেশন পাওয়া যায়। কোনো শহর নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক বাসাবাড়িতে তিনি কাজ করেন। তাকে ফেরত আনা হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে