যাযাদি রিপোর্ট
ভুল চিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্রী নওশিন আহম্মেদ দিয়ার (২৯) মৃতু্যর অভিযোগে জড়িত চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান তন্বী বলেন, 'আমরা এ ধরনের চিকিৎসকদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। এসব চিকিৎসকের শাস্তি হলে তবেই ভুল চিকিৎসা কমবে। এই তিন চিকিৎসকের শাস্তির মাধ্যমে অন্যরাও সাবধান হবে।'
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ময়ুর তালুকদার, সুপ্তীয় সাহা, জসীমউদ্দিন প্রমুখ।
জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষিকা নওশিন আহম্মেদ দিয়ার (২৯) মৃতু্যর অভিযোগ ওঠে। পরে, দিয়ার বাবা গেদু মিয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়ার খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. ডিউক চৌধুরী ও তার ক্লিনিকের দুই চিকিৎসক অরুনেশ্বর পাল এবং মো. শাহাদাৎ হোসেন রাসেল।
মামলার এজাহার বলা হয়, শহরের মুন্সেফপাড়ার ক্রিসেন্ট কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নওশিন আহম্মেদ দিয়া প্রসব বেদনা নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকায় তার স্বামীর বাড়িতে নেওয়া হয় দিয়াকে।
৪ নভেম্বর ভোরে দিয়ার প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হলে তাকে আবারও ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডিউক চৌধুরী ও চিকিৎসক অরুনেশ্বর পাল অভি এবং মো. শাহাদাত হোসেন রাসেল 'ভুল ইনজকশন এবং ওষুধ' প্রয়োগ করার পর দিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
দয়া অজ্ঞান হওয়ার বিষয়টি গোপন করে চিকিৎসার নামে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন তারা। এসময় দিয়ার স্বজনরা মেডিসিনের অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকতে বললে ডিউক ও বাকি দুই চিকিৎসক চুপ থাকেন। একপর্যায়ে দিয়ার মৃতু্য হলেও তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে ওইদিন দুপুর ১টার দিকে দ্রম্নত তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে দিয়াকে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানকার চিকিৎসকরা কয়েক ঘণ্টা আগেই দিয়ার মৃতু্য হয়েছে বলে জানান।
মামলা দায়েরের পর ময়নাতদন্তের জন্য গত ১৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শহরের শেরপুর কবরস্থান থেকে দিয়ার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।