বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধকার জগৎকে আলোকিত করতে হবে: অনুপম সেন

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৪০
ড. অনুপম সেন

বরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেছেন, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যখন আমরা ঔপনিবেশিক শাসনে পর্যুদস্ত সেই সময় সংস্কৃতিকর্মীরা এগিয়ে এসেছিল। রমনার মাঠসহ ঢাকায় অনেক উৎসব দেখেছিলাম মানুষকে জাগানোর জন্য। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখনো সংস্কৃতিকর্মীরা উৎসব, আন্দোলন, ভাষার মধ্যদিয়ে বাঙালিকে জাগানোর চেষ্টা করেছিলা। আজ বাঙালি জেগেছে। তার মধ্যেও কিছু কালো রেখা, অন্ধকার দিক আছে। সংস্কৃতির আলোয় অন্ধকার জগত আলোকিত করতে হবে। শুক্রবার নগরের জামালখান ডা. এমএ হাশেম চত্বরে প্রথম সম্মিলিত বসন্ত উৎসবের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি। ড. সেন বলেন, বাংলাদেশ মুখ্যত গ্রামীণ সমাজ। এখানে বহুকাল ধরে বিভিন্ন ঋতুকে বরণ করে নিই। বিশ্বে বাংলাদেশের মতো এত সুজলা- সুফলা শস্য-শ্যামলা সুন্দর দেশ আমি আর দেখিনি। বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছি। যেখানেই থেকেছি এ দেশের জন্য বেদনা অনুভব করেছি। এদেশে মানুষ পাটি বিছিয়ে ঘুমোতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে এটি সম্ভব হয় না আবহাওয়ার কারণে। এদেশে ঋতুগুলো ভারি চমৎকার। বলা হয়ে থাকে, বারো মাসে তেরো পার্বণ। দিন যাপনের গস্নানি থেকে কয়েকটি দিন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি নিজেকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে এখনো কোকিলের ডাক শুনতে পাই। এ বাংলাদেশের মানুষকে দাবায়ে রাখা যায়নি। আমরা ২০০ বছরের বেশি সময় নিপীড়িত হয়েছি। একসময় আমরা সবচেয়ে ধনী দেশ ছিলাম। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক নিষ্ঠুর শাসনে দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজ পহেলা ফাল্গুন। কবি লিখেছেন-ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত। এটা প্রাণের কথা, আবেগের কথা। এ আবেগটাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এ আবেগের কারণেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এ আবেগই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে সহায়তা করেছে। এ আবেগই ভবিষ্যতে বাঁচার প্রেরণা। এটা এমনই আবেগ, যখন সাতই মার্চ জাতির পিতা বলেছিলেন আর দাবায়া রাখবার পারবা না। তার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে চেতনায় উজ্জীবিত আবেগী বাঙালি প্রমাণ করেছিল আমাদের দাবায়া রাখা যায় না। তারই কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাওয়া শুধু রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে নয়। আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎকে যত ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ করতে পারব আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে সাংস্কৃতিক বিপস্নব ছাড়া, সাংস্কৃতিক মননের মধ্যে বিশাল পরিবর্তন ছাড়া একটি জাতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায় না। সমাজে পঙ্কিলতা, নৈতিক অবক্ষয় বিরাজমান। চট্টগ্রামের মানুষ সবসময় সংস্কৃতিকে লালন করেছে। মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতার চট্টগ্রামের মানুষ আমরা। যে চট্টগ্রামের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই চট্টগ্রামের মানুষ। সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশের যে আন্দোলন তাতে নেতৃত্ব দিতে হবে চট্টগ্রামের মানুষকে। হাজারো বসন্ত উৎসব, অলিতে গলিতে পাড়ায় মহলস্নায় বসন্ত উৎসবের দ্যোতনা যত বেশি ছড়িয়ে পড়বে, ব্যাপকতা যত বেশি প্রসারিত হবে ততই সাংস্কৃতিক আন্দোলন তত বেগবান হবে। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। এরপর রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন রক্তকরবীর শিল্পীরা। শিল্পী দোলন কানুনগোর মোহন বীণার সুরে শুরু হয় উৎসব। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে মোহন বীণার সুর ছড়িয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন তিনি। ঢৌড়ি রাগে ১৫ মিনিটের অপূর্ব সুর মূর্ছনায় তবলায় ছিলেন রতন কুমার দত্ত। এ উৎসবে খ্যাতিমান শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন একক সংগীত ও অভিনয় শিল্পী তারিন একক নৃত্য পরিবেশন করার কথা রয়েছে। উপস্থাপনায় ছিলেন দিলরুবা খান, দেবাশীষ রুদ্র প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে