শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেলখানার মতো জীবনযাপন করতেন পাইলটরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২১ মে ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশের ক্রিকেট আজকের অবস্থানে আসার পেছনে যে কয়জন কোচের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাদের মাঝে একজন গর্ডন গ্রিনিজ। ক্যারিবীয় এই কোচের অধীনেই ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। মূলত কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে শিষ্যদের ট্রেনিং দিতেন তিনি, যাকে জেলখানার মতো জীবনযাপন করা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন গর্ডন গ্রিনিজ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ দলের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে লাইভ সেশনে যোগ দেন গ্রিনিজের শিষ্য আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও খালেদ মাসুদ পাইলট। সেখানে কোচের ব্যাপারে নানা কথা বলেন পাইলট। পেছনে ফেলে আসা অতীত নিয়ে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের ব্যাপারে জানতে চান তামিম। এই ট্রফি জয়ের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন খেলোয়াড়রা। তবে এর পেছনে মূল কারিগর ছিলেন গ্রিনিজই।

কোচ হিসেবে গ্রিনিজের অবদান কত বেশি তা উলেস্নখ করতে গিয়ে পাইলট বলেন, 'ভালো খেলার জন্য যে ভালো ট্রেনিং দরকার, সেটা গ্রিনিজ আমাদের শিখিয়ে গেছেন। উনি তো আর্মিদের মতো ট্রেনিং করাতেন। ভোর ৫টা মানে সূর্য ওঠার আগেই আমাদের মাঠে নিয়ে যেতেন। এরপর ৭টা পর্যন্ত ফিটনেস ট্রেনিংয়ে দৌড়িয়ে নিয়েছেন। এমন ট্রেনিং করাতেন সবার শরীরে ব্যথা হয়ে যেত।'

পাইলট আরও যোগ করেন, 'এরপর ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ব্যাটিং-বোলিং করে আবার চারটার দিকে ফিল্ডিং করতে আরেকটা প্র্যাকটিস সেশন। বলা যায় পুরোদিনের আলোটাকে তিনি কাজে লাগাতেন। আমাদের ছুটি ছিল একদিন। বৃহস্পতিবার রাতে আমরা বিকেএসপি থেকে ঢাকা আসতাম, আবার শুক্রবার রাতেই বিকেএসপি ফিরে যাওয়া। একদম জেলখানার মতো জীবনযাপন ছিল। তবে এই কষ্টের ফলেই ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয় করে বাংলাদেশ, যা এদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বড় সাফল্য। কষ্ট করলে যে কেষ্ট মেলে তা তখনই বুঝেছিলেন ক্রিকেটাররা।

সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরটা পারলে ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ। পুরো সফরে ব্যর্থতার পাশাপাশি ক্রাইস্টচার্চ হামলায় আগেভাগে চলে আসা, এই সফরে দুঃস্মৃতির অভাব নেই। সেই সফরে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করলে এক লাখ টাকা পাওয়ার ঘোষণার পর সুযোগটা কাজে লাগাতে ভোলেননি তামিম ইকবাল। তবে অনেকদিন হয়ে গেলেও সেই টাকা আর পাননি তিনি।

বাংলাদেশের সেই সফরে দলের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। ওয়ানডে সিরিজে ভরাডুবির পর খেলোয়াড়দের প্রেরণা দিতে তিনি এক অভিনব প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তামিম বলেন, 'ওয়ানডে সিরিজে খুব খারাপ খেলার পর পাইলট ভাই ম্যানেজার হিসেবে আমাদের বলে দেন, যে টেস্টে সবার আগে সেঞ্চুরি করবে তাকে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।'

এই ঘোষণা পেয়ে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই শতক হাঁকান তামিম। আউট হওয়ার আগে ১২৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তিনি। অবশ্য ম্যাচটিতে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ।

সেঞ্চুরি করলেও পরে তামিমকে আর টাকা দেননি খালেদ মাসুদ পাইলট। এ নিয়ে রসিকতা করে দেশসেরা ওপেনার বলেন, 'আমি কিন্তু প্রথম দিনই একশ করছি। ঐ এক লাখ টাকা এখনো পাইনি। পাইলট ভাই, আমার টাকা কই?'

জবাবে পাইলট বলেন, 'আসলে কখনো কখনো ভালো খেলার জন্য উৎসাহ দিতে অনেক প্রস্তাব দিতে হয়। আমাদের জন্য নিউজিল্যান্ড সফর খুব কঠিন ছিল। আমি চাচ্ছিলাম আমরা যেন নিজেদের সেরা পারফরম্যান্সটা দিতে পারি। ব্যক্তিগত ভালো কিছু ইনিংস হলে দলও ভালো করবে। তাই ওকে বলেছিলাম। আমি জানতাম তামিমই একশ মারবে আর আমাকে জ্বালাবে।'

মূলত পুরো ব্যাপারটিই ছিল রসিকতায় ভরা। তাই পরে আর তামিমকে টাকা দেননি পাইলট। তবে মজার ব্যাপারটি নিয়ে রসিকতা করার সুযোগ ছাড়েননি কেউই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100216 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1