শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ দেশে উপেক্ষিত সুমনা অস্ট্রেলিয়ায় কাঁপাচ্ছেন লিগ

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৫ জুন ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশ দলে টিকে থাকতে না পারার হতাশা থেকে সম্ভাবনার নতুন পথ তৈরি করেছেন ক্রিকেটার জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা। ২০ বছরের এ তরুণী অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়ে সিডনি ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলেছেন মেয়েদের নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার লিগে। ওয়ানডে লিগে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিকে চ্যাম্পিয়ন করাতে টাইগ্রেস অলরাউন্ডার ব্যাটে-বলে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

সুমনার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিইও বরাবর মেইল পাঠিয়েছেন সিডনি ওমেন্স ক্রিকেট ক্লাবের চেয়ারম্যান গ্রেইগ হিলি। বিসিবির সম্মতি পেলে পরের মৌসুমের জন্যও তাকে রাখতে চায় দলটি।

নিজ দেশে উপেক্ষিত সুমনা সিডনি ক্রিকেট ক্লাবে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার টি২০ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য এলিসা হিলি ওর্ যাচেল হেইনেসকে। ছিলেন ইংলিশ ক্রিকেটার জেনি গান। এই ত্রয়ী সিডনি থান্ডার্সের হয়ে বিগ ব্যাশে প্রতিনিধিত্ব করেন।

তাদের কাছে শেখার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ ক্রিকেট প্রশিক্ষক রস টার্নার ও সাবেক লেগস্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের অধীনে কয়েকটি অনুশীলন সেশন করেছেন সুমনা। নিজেকে তৈরি করেছেন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হিসেবে। লিগের ১২ ম্যাচে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। করেছেন ২৪০ রান। ওপেনার হিসেবে নেমেছেন একাধিক ম্যাচে।

বিসিবির সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে পাঠানো বার্তায় গ্রেইগ উলেস্নখ করেছেন, 'অলরাউন্ডার হিসেবে সুমনার উন্নতি সত্যিই দুর্দান্ত। একজন অফস্পিনার হিসেবে তার বোলিংয়ে বিরাট টার্ন ও অসাধারণ বৈচিত্র্য রয়েছে। মাঠে তার পরিশ্রম, ক্ষিপ্রতা, শক্তিশালী ব্যাটিং টেকনিক ও ম্যাচ রিড করার ক্ষমতা অসাধারণ। কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাটে রান করা ও জুটি গড়ে তুলে বড় দলের বিপক্ষে একাধিক জয়ও এনে দিয়েছে সে।'

প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে ক্রিকেট মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও সুমনা সারাবছর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন, এমন জানিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন উঠতি ক্রিকেটারকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পেরে দারুণ খুশি ক্লাবের কোচ-কর্মকর্তারাও।

বাংলাদেশি বোলার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও এত টার্ন পাবেন, এমনটা ভাবেননি অজি দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার এলিসা হিলি। টার্নের জন্য অন্য সতীর্থদের মুখ থেকেও সুমনা পেয়েছেন প্রশংসাবাক্য। বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে টাইগ্রেস অলরাউন্ডার শুনিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট জার্নির সেসব কথাই। ২০১৫ সালে বিকেএসপির গন্ডি পেরোনোর আগেই জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান সুমনা। কয়েকটি সিরিজে থাকেন স্ট্যান্ডবাই হিসেবে। অফস্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে মূল দলে দ্রম্নত জায়গা হলেও আন্তর্জাতিক অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের মে মাসে সাউথ আফ্রিকা সফরে অভিষেক। খেলেন দুটি ওয়ানডে ও একটি টি২০। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়ালেও মূল যে কাজ সেই বোলিংটাই পাননি!

তিন ম্যাচের কোনোটিতেই সুমনার হাতে বল তুলে দেননি অধিনায়ক। অভিষেক ওয়ানডেতে সাতে নেমে আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই। দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ১ রান। একমাত্র টি২০তে ব্যাটিং-বোলিং কিছুই পাননি। পরের মাসে মালয়েশিয়ায় হওয়া এশিয়া কাপের দলেও ছিলেন। খেলা হয়নি কোনো ম্যাচ। পরে আয়ারল্যান্ড সফরের দল থেকে ছিটকে পড়েন। আর ডাক মেলেনি জাতীয় দলে। অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপের জন্য ৩০ জনের ফিটনেস ও ফিল্ডিং ক্যাম্পে অংশ নেন সুমনা। স্ট্যান্ডবাইসহ ১৮ জনের তালিকাতে ঠাঁই পাননি তিনি। তার দাবি, ফিল্ডিং ও ফিটনেস ক্যাম্পে ভালো করলেও কেন ১৮ জনেও ছিলেন না তার ব্যাখ্যা দেননি কেউ।

'প্রাউড করার জন্য বলছি না, ফিটনেস ও ফিল্ডিংয়ে সেরা কয়েকজনের মধ্যেই ছিলাম। অন্যান্য সময় দল ঘোষণার আগে খুব চিন্তা হয়, কিন্তু বিশ্বকাপ দলে থাকা নিয়ে খুব বেশি ভাবিনি। থাকব, এটি একরকম ধরেই নিয়েছিলাম। কিন্তু ১৮ জনেও নিজের নাম না দেখে হোঁচট খাই। কেন আমি নেই, সেই ব্যাখ্যা পাইনি। কোথায় ঘাটতি সেটিও জানতে পারিনি। সবাই বলেছে তোমার বয়স কম, সামনে অনেক সময় পড়ে আছে। সান্ত্বনার চেয়ে বেশি জরুরি ছিল ঘাটতির জায়গা ধরিয়ে দেওয়া।'

সাত মাসে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংস্কৃতির সঙ্গেও দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন সুমনা। বিসিবিকে পাঠানো বার্তায় সেটি উলেস্নখও করেছেন গ্রেইগ। সিডনিতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পড়ে থাকলেও সুমনা চাইছেন নিজ দেশের হয়েই প্রতিনিধিত্ব করতে। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ফের ডাক পাওয়ার আশা নিয়ে তৈরি করছেন নিজেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101278 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1