বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট মর্যাদার দুই দশক

২০০০ সালের নভেম্বরে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরুর পর এখন পর্যন্ত খেলেছে ১১৯ ম্যাচ। ১৪ জয়ের সঙ্গে ১৬ ড্র বাংলাদেশের। বাকি ৮৯ ম্যাচে হার। সাফল্যের বিচারে খুব বেশি প্রাপ্তি নেই টাইগারদের। বিশেষ করে, দেশের বাইরে বাংলাদেশের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিদেশের মাটিতে সেরা সাফল্য শ্রীলংকায়- নিজেদের শততম টেস্ট জয়।
ক্রীড়া ডেস্ক
  ২৭ জুন ২০২০, ০০:০০
অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল -ফাইল ফটো

২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট স্ট্যাটাস বা মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। হাঁটি হাঁটি করে টেস্টে দুই দশক পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের। ২০ বছর আগে ২৬ জুন ৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের ভোটে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত ক্লাবে দশম সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বোর্ড সভায় তৎকালীন সভাপতি ম্যালকম গ্রে বাংলাদেশকে পূর্ণ মর্যাদার টেস্ট খেলুড়ে দেশের খেতাব দেন।

তবে টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির মিশনে কেবল মাঠের পারফরম্যান্সই ভূমিকা রাখেনি, এর পেছনে ছিল অনেক কূটনৈতিক যুদ্ধও। তখনকার বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী দায়িত্বে বসেছিলেন ১৯৯৬ সালে। তার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছিল বোর্ড। সেই লক্ষ্য যথাসময়েই বাস্তবায়ন করেন সাবের হোসেন চৌধুরী।

ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে সাবেক বিসিবি প্রধান বলেছেন, 'আমাদের অবিশ্বাস্য কিছু করতে হতো। আমরা পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সহযোগী দেশ হলেও শীর্ষে পৌঁছানোর স্বপ্ন ছিল আমার। জিম্বাবুয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস চাওয়ার আগে তিনবার আইসিসি ট্রফি জিতেছিল। টেস্ট স্ট্যাটাস না পেলে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট মারা যেত। যে মুহূর্তে আমরা আইসিসি ট্রফি জয় করেছিলাম, ঠিক তখনই ডেভিড রিচার্ডকে আমি বলেছিলাম, আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে কথা বলতে চাই। তিনিও আমাদের কথা শুনেছেন এবং আমাদের সাহায্য করেছেন।'

বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় লড়াই করেছেন ক্রিকেটাররা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় টেস্ট প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সাবের হোসেন আইসিসি সভার ভোটাভুটিতে জয় নিশ্চিত করতে তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি জাগমোহন ডালমিয়ার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। এশিয়ার মধ্যে ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের ভোটের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন তিনি।

২০০০ সালের নভেম্বরে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরুর পর এখন পর্যন্ত খেলেছে ১১৯ ম্যাচ। ১৪ জয়ের সঙ্গে ১৬ ড্র বাংলাদেশের। বাকি ৮৯ ম্যাচে হার। সাফল্যের বিচারে খুব বেশি প্রাপ্তি নেই বাংলাদেশের। বিশেষ করে, দেশের বাইরে বাংলাদেশের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিদেশের মাটিতে সেরা সাফল্য শ্রীলংকায় নিজেদের শততম টেস্ট জয়।

গত ২০ বছরে আয়ারল্যান্ড বাদে সব দেশের বিপক্ষেই টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি ২০ টেস্ট খেলেছে শ্রীলংকার বিপক্ষে। এরপর জিম্বাবুয়ে ১৭, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ ও নিউজিল্যান্ড ১৫ টেস্টের প্রতিপক্ষ। ১২টি দক্ষিণ আফ্রিকা, ১১টি করে ভারত ও পাকিস্তান, ১০টি ইংল্যান্ড, ৬টি অস্ট্রেলিয়া ও একটি ম্যাচের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। সবচেয়ে বেশি ৭ জয় জিম্বাবুয়ে, ৪টি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং একটি করে শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২০ বছর পূর্তির দিনে মুমিনুল-মুশফিকদের কাছে হয়তো সবচেয়ে বড় কষ্ট করোনাভাইরাসে একের পর এক টেস্ট সিরিজ স্থগিত হয়ে যাওয়া!

ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে আলোড়ন তৈরি করা বুলবুল বলেছেন, '২০ বছরেও আমরা প্রতিষ্ঠিত টেস্ট দল হতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। কিছু কিছু ম্যাচ, যেমন মুলতান টেস্ট, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুলস্না টেস্ট, ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ভালো করেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারিনি। আবার বেশ কিছু ভালো ম্যাচও আমরা ভালো খেলে জিতেছি। তবে বেশিরভাগ ম্যাচেই আমরা দাঁড়াতে পারিনি। টেস্ট ম্যাচের মেজাজটাই এখনো রপ্ত করতে পারিনি। একুশ বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য এটা সত্যিই শঙ্কার।'

বুলবুল মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে বোর্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ নেই। এই কারণেই এই সংস্করণে বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে কম, 'টেস্ট ক্রিকেটে আমরা ২০ বছর পরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে চাই, সেই লক্ষ্য আমাদের ছিল না। ফলে আমরা এখনো কোথাও দাঁড়াতে পারিনি। এখনো আমরা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও হারলাম। ভারত ও পাকিস্তানে গিয়ে হারলাম। একটা হারের বৃত্তের মধ্যেই আমরা আছি। আশা করি করোনাকাল শেষেই বোর্ড এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে।'

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার পেছনে আরেক সাবেক অধিনায়ক পাইলট কেবল খেলোয়াড়দের দোষ দিতে নারাজ। তার মতে, ক্রিকেটের অবকাঠামোর উন্নয়ন না হলে এই ফরম্যাটে উন্নতি করা কঠিন, 'টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পেতে হলেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা চেষ্টা করছে দেশকে কিছু দিতে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের অবকাঠামো যেমন, তাতে করে সত্যিই সাফল্য পাওয়া কঠিন। একজন পেসার জাতীয় লিগ কিংবা বিসিএলে কত ওভার বোলিং করে? ওখানে বোলিং করতে না পারার কারণে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে পেসাররা। ফলে জাতীয় দলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<103848 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1