বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
ক্রিকেটারদের স্মারক নিলাম

মাশরাফি-মুশফিকদের মানসিক তৃপ্তি

মাশরাফি-মুশফিকসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার তাদের প্রিয় স্মারক নিলামে তুলেছিলেন। সেই অর্থ তারা সমাজের অসহায় মানুষদের সাহায্যার্থে ব্যয় করে মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছেন।
ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০
মাশরাফি বিন মর্তুজা

করোনাভাইরাসের কারণে অসহায় হয়ে পড়া দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি নিজের পছন্দের ব্যাট-গস্নাভস-জার্সিসহ নানা স্মারক নিলামে তুলে পাওয়া অর্থে অভাবী মানুষদের সাহায্য করেছেন কয়েকজন ক্রিকেটার। মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার তাদের প্রিয় স্মারক নিলামে তুলেছিলেন। সেই অর্থ তারা সমাজের অসহায় মানুষদের সাহায্যার্থে ব্যয় করে মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছেন। এক দশক হাতে থাকা ব্রেসলেটটি মাশরাফি বিক্রি করেন ৪২ লাখ টাকায়। সাবেক এই অধিনায়কের প্রিয় জিনিসটি কিনেছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিএলএফসিএ। প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক মাশরাফির 'নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনে' দান করেছেন। বাকি টাকা নড়াইলের বাইরে বিভিন্ন জেলায় খরচ করেছেন। এ নিয়ে নিজের কাছে আলাদা একটা তৃপ্তি আছে তার, '২৫ লাখ নড়াইলে দিয়ে বাকিটা বাইরে যত জায়গায় দেওয়া যায় দিয়েছি। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটনের ভেতরে ৮০ জন ক্রিকেট কোচ আছেন, যারা এখন বেকার তাদের কিছু দিয়েছি। এছাড়া 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব শিক্ষার্থী, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, ডাকসুর মাধ্যমে তাদের সহায়তা দিয়েছি। পাশাপাশি বস্নাড ডোনারদের সংগঠনে দিয়েছি।' মুশফিকুর রহিম তার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ব্যাটটি নিলামে তোলেন। ব্যাটটি পাকিস্তানের ক্রিকেটার শহিদ আফ্রিদি ১৭ লাখ টাকায় কিনে নেন। মুশফিক তার অর্থ ৬-৭টি জায়গায় বণ্টন করেছেন। সাহায্য প্রকৃত সাহায্যপ্রার্থীদের হাতে তুলে দিতে পেরে তৃপ্ত মুশফিক বলেন, 'আমি ৬-৭টা জায়গায় দিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের ক্রিকেটার নাজমুল ইসলাম অপুর উদ্যোগে কিছু জায়গায় দিয়েছি। হুইলচেয়ার ক্রিকেটারদের দিয়েছি কিছু। বি. বাড়িয়ায় হুইলচেয়ার দল আছে একটা, ওদের দিয়েছি। আমার বগুড়ায় কিছু কাজ করার পাশাপাশি অসহায় লোকদেরও কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাহাঙ্গীরনগর) অসহায় দোকানিদের সহযোগিতা করেছি।' সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান সবার আগে তার ব্যাটটি নিলামে তোলেন। এই ব্যাটটি দিয়ে সাকিব গত বিশ্বকাপে আট ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফসেঞ্চুরিতে ৬০৬ রান করেন। ২০ লাখ টাকায় এক প্রবাসী সাকিবের এই ব্যাটটি কিনে নেন। সেই অর্থ সাকিব তার নিজের ফাউন্ডেশনে দিয়েছেন। নিলামের অর্থ দিয়ে সাকিব নিজস্ব উদ্যোগে মাগুরায়, বগুড়ায়, নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন মাধ্যমে দুস্থদের সাহায্য করেছেন। সৌম্য গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে যে ব্যাট দিয়ে নিজের একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেন সেটি নিলামে তুলেছিলেন। ওই টেস্টে মাত্র ৯৪ বলে তার করা সেঞ্চুরিটি বাংলাদেশের পক্ষে দ্রম্নততম সেঞ্চুরি। নিলামে সৌম্যর ব্যাটটি একটি ব্যাংক সাড়ে ৮ লাখ টাকায় কিনে নেয়। এই অর্থ তিনভাগে ব্যয় করেছেন সৌম্য, '২৫ ভাগ দিয়েছিলাম সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনে। ২৫ ভাগ নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনে। আর বাকি ৫০ ভাগ সাতক্ষীরার আমার এলাকায় দিয়েছি। ওখানে পুলিশ এই অর্থ দিয়ে সাতক্ষীরার অসহায় জনসাধারণকে সাহায্য করেছেন।' তাসকিন ২০১১ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে যে বলটি দিয়ে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করেছিলেন, সেই বলটিই তুলেছিলেন নিলামে। এরপর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে আর কেউ হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। তাসকিনের হ্যাটট্রিক বলটি ৮ লাখ টাকায় কিনে নেয় একটি ব্যাংক। তাসকিন এই অর্থের কিছু অংশ নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনে এবং কিছু অংশ ব্যক্তিগতভাবে অসহায় মানুষদের সহায়তার কাজে ব্যয় করেছেন। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলী সিনিয়রদের দেখাদেখি বিশ্বকাপ ফাইনালের জার্সি ও ব্যাটিং গস্নাভস নিলামে তোলার ঘোষণা দেন। পিকাবোর মাধ্যমে ৫ দিন ধরে চলা এই নিলামে ২ হাজার মার্কিন ডলারে আকবরের জার্সি ও গস্নাভস বিক্রি হয়। যার বাংলাদেশি মূল্য প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আকবর এই অর্থ রংপুরের একটি সংগঠনকে দিয়ে দেন। তারাই সমাজের অসচ্ছল ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে আকবরের সহায়তা ে পৌঁছে দেন। আকবর গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'আমাদের রংপুরে উই ফর দেম নামে একটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে। তাদের আমি অর্থটা দিয়েছি। ওরা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মাঝে এই অর্থ ভাগ করে দিয়েছে। আমি নিজে থেকে কিছু করিনি। কারণ ওরা অনেকদিন ধরেই এই সেক্টরে কাজ করছে। ওরা আমার চেয়ে এই দিকটা ভালো বোঝে।'

২৫ লাখ নড়াইলে দিয়ে বাকিটা বাইরে যত জায়গায় দেওয়া যায় দিয়েছি। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটনের ভেতরে ৮০ জন ক্রিকেট কোচ আছেন, যারা এখন বেকার তাদের কিছু দিয়েছি। এছাড়া ঢাবির গরিব শিক্ষার্থী, যারা করোনায় আক্রান্ত, ডাকসুর মাধ্যমে তাদের সহায়তা দিয়েছি। -মাশরাফি বিন মর্তুজা

ক্রিকেটার নাজমুল ইসলাম অপুর উদ্যোগে কিছু জায়গায় দিয়েছি। হুইলচেয়ার ক্রিকেটারদের দিয়েছি কিছু। বি. বাড়িয়ায় হুইলচেয়ার দল আছে একটা, ওদের দিয়েছি। আমার বগুড়ায় কিছু কাজ করার পাশাপাশি অসহায় লোকদেরও কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেছি। -মুশফিকুর রহিম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে