ব্যাটে-বলে দুদার্ন্ত পারফমর্ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩ রানের নাটকীয় জয়ের অন্যতম নায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের চরম বিপযের্য়র মুহূতের্ বুক চিতিয়ে লড়ে করেছেন ৭৪ রান। আর বল হাতে ৫ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে শিকার করেছেন মোহাম্মদ শাহজাদের মূল্যবান উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। তবে ওই পুরস্কার নয়, মাহমুদউল্লাহ খুশি দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে। কঠিন পরিস্থিতির চাপ জয় করতে পারায় তৃপ্ত তিনি।
ক্যারিয়ারের নানা সময়ে তিন ফরম্যাটে নানা পজিশনে ব্যাট করতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। আপাদমস্তক দল অন্তঃপ্রাণ এই ক্রিকেটার সব মেনে নিয়েছেন হাসিমুখে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে চার নম্বরে ব্যাট করে বিশ্ব আসর মাতানোর সামথর্্য তিনি দেখিয়েছেন। তবে রঙিন পোশাকে এখন তার ভূমিকা ফিনিশারের। সেই ভ‚মিকাতেও সফল তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। ম্যাচশেষে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘আজ (রোববার) অনেক গরম ছিল। আমি কিছুটা পানিশূন্যতায় ভুগেছি। তবে শেষটা ভালো হয়েছে। মুস্তাফিজকে কৃতিত্ব দিতে হবে। শেষ ওভারে সে যখন বল করতে আসে, তখন আফগানিস্তানের মারকুটে দুই ব্যাটসম্যান ক্রিজে ছিলেন। পরের দিকের ব্যাটসম্যানরাও বিধ্বংসী ছিল। তারা চাপকে জয় করতে পারে। শেষ পযর্ন্ত আমরাই চাপকে জয় করেছি। তার প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হয়েছে।’
খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলার তার চলমান অভিযানে এটি নতুন আরেকটি জয় মাত্র। বিপযের্য় দলের ত্রাতা হয়েছেন তিনি আগেও অনেকবার। মাহমুদউল্লাহ যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ইমরুল কায়েসকে নিয়ে গড়েন মহাগুরুত্বপূণর্ ১২৮ রানের জুটি। আফতাব আলমের বলে ৭৪ রানে আউট হলেও ততক্ষণে লড়াকু স্কোরের ভিত পেয়ে গেছে টাইগাররা। শেষ পযর্ন্ত ৭ উইকেটে ২৪৯ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে সমসংখ্যক উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান তুলতে সক্ষম হয় আফগানিস্তান। সেক্ষেত্রে প্রশংসা পেতেই পারেন বোলাররা।
ইমরুল-মাহমুদউল্লাহর জুটিই লড়াইয়ের পঁুজি এনে দেয় বাংলাদেশকে। কঠিন চাপের মুখে এসেছে ওই জুটি। চাপ জয় করার কাজটা দারুণভাবেই করেছেন মাহমুদউল্লাহ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মনে হয়, আমি চাপ উপভোগ করি। চাপ হয়তো আমাকে ছন্দ পাওয়ার, নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ করে দেয়। দলকে ফিরিয়ে দেয়ার তাড়নাও থাকে। চাপ সবসময়ই থাকে, সেটাকে সামলে নেয়ার পথ বের করে নিতে হয়।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘দলে অবদান রাখতে পারলে সবসময়ই ভালো লাগে। ইমরুলের সঙ্গে আমার ভালো একটা জুটি হয়েছে। আমরা শেষ করে আসতে চেয়েছি। আমাদের বোলাররা শেষ পযর্ন্ত আফগানদের আটকে ফেলতে পেরেছে। ফাইনালে যেতে আমাদের এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে।’
ইমরুল কায়েসের দলে ফেরা, তার অসাধারণ ব্যাটিং করা, সাথে ব্যাটিং অডাের্রর নানা পরীক্ষানিরীক্ষা, রদবদল চোখে পড়েছে। তবে টাইগারদের এইসব পরীক্ষা কাজে লেগেছে। মাহমুদউল্লাহর ব্যাখ্যা, ‘মিডর্ল অডার্র শক্তিশালী করতে সিনিয়ররা পরে নেমেছে। রশিদ-নবী-মুজিবদের এজন্যই ভালোভাবে সামাল দেয়া গেছে।’ ব্যাটিং অডার্র সাজানো নিয়ে মাহমুদউল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আমরা এই সুনিদির্ষ্ট ম্যাচটির জন্যই ব্যাটিং অডার্র সাজিয়েছিলাম। আমাদের টপ অডাের্র বেশ কজন বাঁহাতি আছে। আমরা শুরুতে ধুঁকছিলাম। এ ম্যাচে লিটন কিছুটা ভালো খেলেছে। তারপর মাঝে লড়াই করতে হয়েছে। পরে আমার আর ইমরুলের জুটিতে আমরা টেনে নেয়ার চেষ্টা করেছি।’
ইমরুল বন্দনা করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘ইমরুল যেভাবে শনিবার রাতে উড়ে এসেছে, রোববার গরমের মধ্যে এমন অসাধারণ ইনিংস খেলেছে তাতে খুব ভালো লাগছে। আমার কাছে ওর ইনিংসটা দারুণ লেগেছে। কারণ ও টপ অডার্র ব্যাটসম্যান, কখনো ছয়ে ব্যাট করেনি। প্রথমবার মিডল অডাের্র ব্যাট করতে নেমে দারুণ খেলাটা সত্যিই আসাধারণ। আশা করছি ও (ইমরুল) ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে।’ জানালেন, ইমরুলকে মিডল অডাের্র ব্যাটিংয়ে পাঠানোটা ছিল দলীয় পরিকল্পনার অংশ, ‘এটা আমাদের পরিকল্পনার অংশ ছিল। ওর অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানো দরকার ছিল। শেষ পযর্ন্ত তার অভিজ্ঞতা কাজে এসেছে।’