তাকে ঘিরে যতটুকু প্রত্যাশা, প্রথম ইনিংসে সেটা পুরোপুরিই মিটিয়েছেন। প্রথম দিনে ঠিক সেভাবে আলো ছড়াতে না পারলেও তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় দিনের সকালে রীতিমতো নাকাল করে ছেড়েছেন প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের। ১০৮ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট, এর চারটি দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে। তাতে মধ্যাহ্নভোজের আগেই প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে জিম্বাবুয়ে। তাইজুলের কাজ এতেই শেষ হয়নি। টাইগার ব্যাটসম্যানদের ব্যথর্তায় উল্টো দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেছে তার। দ্বিতীয় দিনে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশকে ট্র্যাকে ফেরাতে এখন আসল কাজটা করতে হবে তাকেই।
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউনে নিজের অভিষেক টেস্ট ইনিংসে পঁাচ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। এরপর আরও তিনবার ইনিংসে পঁাচ কিংবা ততোধিক উইকেট নেয়ার কীতির্ দেখিয়েছেন। এবার দেখালেন সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে। এই বাহাতির ঘূণিের্তই তিনশ ছাড়ানো পুঁজি গড়ার স্বপ্ন দেখা জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ২৮২ রানে। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে এসে আবু জায়েদ জানিয়েছিলেন, ৩২০ রানের মধ্যেই জিম্বাবুয়েকে বেঁধে রাখার লক্ষ্যের কথা। তাইজুলে পূরণ হয়েছে সেই লক্ষ্য।
প্রতিপক্ষকে দ্রæত গুটিয়ে দেয়ার পর যে লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেছিল বাংলাদেশ, সেটা পূরণ হয়নি। ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে নিজেদের ঘোর বিপাকের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ধীরে ধীরে ব্যাটিংবৈরী হয়ে উঠা সিলেটের উইকেটে জিম্বাবুয়ের বোলারদের সামনে মাথা তুলেই দঁাড়াতে পারেননি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। তাতেই দ্বিতীয় দিন শেষে ১৪০ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। এই উইকেটে ২৫০ রানের বেশি তাড়া করা যে কোনো দলের জন্যই মহাকঠিন কাজ হবে। তাই টাইগার বোলারদের সামনে চ্যালেঞ্জ, যত দ্রæত সম্ভব জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে দেয়া। সেই চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে মূল ভ‚মিকাটা রাখতে হবে তাইজুলকেই।
তাইজুল যে সেটা পারবেন, প্রথম ইনিংসেই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বঁা-হাতি। পরে দিন শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে সে বলে গেলেন, ‘আসলে ক্রিকেটে কখনো ভালো হবে আবার কখনো খারাপ হবে, এমন সময় কিন্তু আসে। সকালে হয়তো আমাদের সময়টা ভালো কেটেছে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর থেকে দুই সেশন আমাদের পক্ষে আসেনি। আমাদের হাতে আরও তিন দিন সময় আছে, আমরা চেষ্টা করব ওদের দ্রæত অলআউট করার।’
তিন বছর পর ইনিংসে পঁাচ উইকেটের দেখা পাওয়া এই স্পিনারও পেয়ে গেছেন আত্মবিশ্বাস। ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় সবশেষ ৫ উইকেট পেয়েছিলেন টেস্ট দলে নিয়মিত মুখ তাইজুল। তবে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের সবশেষ দুই টেস্টে তিনিই ছিলেন সবথেকে সফল বোলার। বছরের শুরুতে শ্রীলংকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের একমাত্র ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। পরের টেস্টে মিরপুরে দুই ইনিংসেই উইকেট চারটি করে।
টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের কীতির্ তাইজুলের নামে। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে অনায়াসে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার অবশ্য অনায়াস জয়ের ভাবনা ভুলে পরাজয় এড়ানোর কথা ভাবতে হচ্ছে স্বাগতিকদের। এমতাবস্থায় তাইজুল আশার আলো হতে পারবেন তো? দ্বিতীয় দিনেই সিলেটের উইকেট যেমন আচরণ করছে তাতে না পারার কোনো কারণ নেই। এদিন সকালেই তো জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছেড়েছেন তাইজুল। উইকেটে স্পিন ধরছে, তাতেই বাজিমাত করেছেন এই বঁা-হাতি।
রোববার দিনের খেলা শুরুর পর ৪৪ মিনিটের মাথায় ব্রেক থ্রæ এনে দিয়েছেন তাইজুল। চাকাভাকে শটর্ লেগে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। তাইজুলের ভেল্কি দেখানো শুরু ওখানেই। এরপর টপাটপ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। তাতে মাত্র ২১ রান যোগ করেই শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এরই মাঝে কাইল জাভির্সকে প্রথম ¯িøপে মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুথবার ইনিংসে ৫ উইকেট পূণর্ করেছেন তাইজুল। পরের বলে ফিরিয়েছেন চাতারাকে, ইতি টেনে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ইনিংসের। হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল, দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম বলে উইকেট পেলেই হয়ে যেত। সেই সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে।
তাইজুল হ্যাটট্রিকের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, সেটা নিয়ে এখন সামান্যতম আফসোসও কারও নেই! পরাজয়ের শঙ্কায় থাকা দল ওসব নিয়ে ভাববেই বা কেন। তবে তাইজুল দলকে একের পর এক উইকেট প্রাপ্তির আনন্দে মাতাবেন, টেস্টের তৃতীয় আজ এই আশা নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেই আশা পূণর্ হলেই কেবল তাইজুলের আসল কাজটা সারা হবে।