আজকের যায়যায়দিন

ব্যাটিং ব্যথর্তার জাল থেকে মুক্তি মিলছে না। তাতে একের পর এক টেস্টে হারছে বাংলাদেশ। সবের্শষ আট টেস্ট ইনিংসে একবারও দুশো করতে পারেনি টাইগাররা। তার মাশুল দিয়ে প্রতিটি ম্যাচেই হেরেছে তারা। ব্যাটসম্যানদের মাঝে নিবেদনের অভাব স্পষ্ট। বারবার একই ভুলর চক্রে ব্যাটিংয়ের রুগ্নতা কাটাতে পারেনি দল। এরকমভাবে টেস্ট খেলার কোনো মানেই খুঁজে পাচ্ছেন না ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের বাজে ব্যাটিংয়ের কোনো ব্যাখ্যাও জানা নেই তার। ঘরের বাইরে টেস্ট ক্রিকেটে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ ঘরের মাঠে বেশ শক্ত দলই হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে তেমনই আভাস দিয়েছিল। তবে বছরখানেক ধরে আবার উলটোরথে যাত্রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে নাজেহাল হওয়ার তবু একটা জবাব ছিল। ভিন্ন কন্ডিশন, পেস-বাউন্স সামলানোর অনভ্যাস না হয় মানা গিয়েছিল। তার আগে ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে অতি টানির্ং উইকেট বানিয়ে বিপযর্য়ও দেখা গিয়েছিল একটা ‘দুঘর্টনা’ হিসেবে। কিন্তু এবার জিম্বাবুয়ে যেন আকস্মিক ঝড় নাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। যারা গত ১৭ বছর বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট জিততে পারেনি, তারা এবার মাহমুদউল্লাহর দলকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সাড়ে তিনদিনে, হারিয়েছে ১৫১ রানের ব্যবধানে। এমন হারের পর সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব পাওয়া মাহমুদউল্লাহ টেস্ট ক্রিকেটের নিজেদের অবস্থানই নড়বড়ে দেখছেন, ‘অবশ্যই এটা চিন্তার বিষয়। আমাদের এটা খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। কারণ এভাবে ব্যাট করতে থাকলে মনে হয় না আমরা টেস্ট ক্রিকেটে কোনো অবস্থানে থাকব। এটা আমাদের ভাবমূতির্র একটা ব্যাপার। আমাদের অবশ্যই শক্তভাবে ফিরে আসতে হবে। আর তা না হলে এভাবে টেস্ট খেলার কোন মানে নেই।’ সামনে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের সব ভাবনাও ঘুরপাক খেতে পারে বিশ্বকাপ মাথায় রেখে। তবে কি টেস্টে ক্রিকেট এই সময়ে গুরুত্বহীন হওয়াতেই এমন অবস্থা? এই কথায় আবার দ্বিমত মাহমুদউল্লাহর, ‘আমরা টেস্ট ক্রিকেট গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা হয়তো পঁাচ ছয়টা (আসলে আট ইনিংস) ইনিংসে হয়তো রান করতে পারিনি। বোলাররা যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। প্রতিপক্ষকে অল্প রানে আটকে ফেলছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারছে না। ওয়ানডে সংস্করণে ভালো ছন্দে আছে। কিন্তু ওই ডিসিপ্লিনটা হয়তো আমরা টেস্ট ক্রিকেটে নিতে পারছি না।’ ১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮, ১৪৩, ১৬৮। এই হলো গত আট টেস্ট ইনিংসে বাংলাদেশের রান। কোচ জানেন না এর কারণ। অধিনায়কের কাছেও নেই কোনো ব্যাখ্যা, ‘এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেয়া আসলে খুবই কঠিন। একটা জিনিস বলতে পারি, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যে ধরনের শৃঙ্খলা থাকা উচিত, আমার মনে হয় না আমরা সেটা দেখাতে পেরেছি। উইকেট বেশ ভালো ছিল, এমনকি আজও উইকেট অনেক ভালো ছিল। হয়তো দুই একটি বল টানর্ করেছে। এছাড়া আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। ডিসিপ্লিনের ইস্যুটা আমাদের আরেকটু ভালো করে দেখতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা আরেকটু বাড়াতে হবে। এই ইস্যুগুলো নিয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। কারণ বেশ কয়েকটি টেস্ট আমাদের ব্যাটিং খুব বাজে হচ্ছে। আমাদের এইসব নিয়ে ভাবতে হবে, একটা উপায় তো বের করতে হবে।’ যখন প্রয়োজন টিকে থাকার, যখন হাতে সময় আছে আবারিত। এমন পরিস্থিতিতেও স্ট্রোক খেলার নেশায় পেয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। প্রতি ইনিংসের পরই নিজেদের ভুলটা ধরতে পারেন তারা। কিন্তু পরের ইনিংসই দেখা যায় আবার সেই একই ভুল। এই চক্রে পড়ার কারণ হিসেবে নিজেদের আবেগকে দায়ী করলেন মাহমুদউল্লাহ। তাকে হতাশ করেছে ব্যাটসম্যানদের অতিরিক্ত শট খেলার প্রবনতা, ‘আমার মনে হয় আমাদের স্ট্রোক মেকিংটা মাত্রাতিরিক্ত। এই জিনিসটা আমরা হয়তো আবেগী হয়ে করছি। এখানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আরেকটু চুজি হতে হবে। আমরা কোন বোলারকে কখন কিভাবে খেলতে পারি এটা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।’ টেস্টে ইনিংস বড় করতে দরকার লম্বা জুটি। সেটি হচ্ছে না বাংলাদেশের। সিলেট টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র একটা পঞ্চাশ রানের জুটি গড়তে পেরেছে টাইগাররা। এসব কাটিয়ে ঢাকা টেস্টে নিজেদের ভিন্নভাবে দেখানোর পণ মাহমুদউল্লাহর, ‘সবথেকে বেশি গুরুত্বপূণর্ মনে হয়, আমরা ছোট ছোট জুটিও তৈরি করতে পারছি না। আগাগোড়া সবাই ফেইল করছি। এই জিনিসটা ঠিক করতে পারলে ঢাকা টেস্টে ভিন্ন বাংলাদেশ দেখতে পাবেন।’ সিলেটের উইকেট কিংবা নিজেদের বোলিং। কোথাও কোন ঘাটতি দেখছেন না অধিনায়ক। তার চোখে ব্যথর্তার দায়ভার পুরোপুরি দলের ব্যাটসম্যানদের, ‘আমি শুধু ব্যাটিংটা নিয়ে কথা বলতে পারি। আপনি উইকেটের দোষ দিতে পারবেন না। বোলারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করতে পারবেন না। কারণ তারা ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফমর্ করছে।’