শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লজ্জার হার টাইগারদের

সংক্ষিপ্ত স্কোর জিম্বাবুয়ে: ২৮২ এবং ১৮১ বাংলাদেশ: ১৪৩ এবং ৬৩.১ ওভারে ১৬৯ (লিটন ২৩, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ৯, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শান্ত ১৩, মুশফিক ১৩, আরিফুল ৩৮, মিরাজ ৭, তাইজুল ০, অপু ০, আবু জায়েদ ০*; জাভির্স ১/২৯, রাজা ৩/৪১, মাভুতা ৪/২১, ওয়েলিংটন ২/৩৩)। ফল: জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী ম্যাচসেরা: শন উইলিয়ামস
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়দের জয়োৎসব, অন্যদিকে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন আবু জায়েদ। মঙ্গলবার সিলেট টেস্টে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৫১ রানের বড় হার দেখেছে বাংলাদেশ

সিলেটের টেস্ট অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখা হলো না টাইগারদের। আগাগোড়া ব্যাটিং ব্যথর্তার লজ্জার এক হার দেখল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও মুড়ি মুড়কির মতো উইকেট বিলিয়ে মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুলরা অন্ধকার আরও ঘোর করে তুললেন সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে। তাতে ১৫১ রানে হেরে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের যেখানে বিষাদ, জিম্বাবুয়ের সেখানেই উচ্ছ¡াস। ৫ বছর পর টেস্ট জিতল তারা। বিদেশ সফরে তাদের টেস্ট জিততে ফুরাল ১৭ বছরের অপেক্ষা। সবশেষ ২০০১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল অতিথিরা। টেস্টে তাদের সবশেষ জয়টি ছিল ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বরে, পাকিস্তানের বিপক্ষে। দীঘির্দন পর টেস্ট জয়ের স্বাদ পাওয়া জিম্বাবুয়ে আগামী ১১ নভেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নামবে সিরিজ জয়ের মিশনে, বাংলাদেশ সিরিজ হার ঠেকাতে। দেশের আটটি টেস্ট ভেন্যুর সাতটিরই অভিষেক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। একটিতেও জয়ের মুখ দেখা হলো না। সিলেট স্টেডিয়ামের অভিষেকে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হওয়ায় আশাটা বেড়েছিল। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যথর্তায় সেই আশা মাটি। যে দলটিকে আগের চারটি টেস্টেই হারিয়েছিল টাইগাররা, এবার তাদের কাছেই হেরেছে বড় ব্যবধানে। ব্যাটিং ব্যথর্তার জাল থেকে মুক্তি মিলছে না। টানা আট ইনিংসে ২০০ রানের গÐি পেরোতে ব্যথর্ দল। তাতে একের পর এক টেস্ট হারতে হচ্ছে। জিম্বাবুয়ে ছুড়ে দিয়েছিল ৩২১ রানের লক্ষ্য। সেখানে ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের নজির নেই বাংলাদেশের। তাই জিততে হলে টাইগাদের গড়তে হতো রেকডর্। রান তাড়ায় ইমরুল কায়েস আর লিটন দাস ভালো শুরুই এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিকান্দার রাজা ও ব্রেন্ডন মাভুতার ঘূণিের্ত দ্রæতই মুখ থুবড়ে পড়ে স্বাগতিকরা। শেষ দিকে প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চড়াও হয়েছিলেন আরিফুল হক। তবে সেটা ছিল সাময়িক। মঙ্গলবার চতুথর্ দিনের চা বিরতির আগেই ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের ২৮২ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচটা তাতেই কঠিন হয়ে উঠেছিল। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস ১৮১ রানে থামিয়ে দিয়েও তাই হালে পানি পায়নি মাহমুদউল্লাহর দল। হাতে পুরো ১০ উইকেট রেখে চতুথর্ দিন শুরু করেছিল তারা। আগের দিন দুই ওপেনার অবিচ্ছিন্ন থেকে ২৬ রান তুলে ফেলায় জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৯৫ রান। প্রয়োজন মেটাতে লিটন-ইমরুলের যাত্রাটা ছিল সাবলীল। কিন্তু দলীয় ৫৬ রানে রাজার অফস্পিনে লেগবিফোরের ফঁাদে পড়েন ২৩ রান করা লিটন, এরপরই দুভোের্গর শুরু। লিটন ফেরার পর সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল হক (৯)। জাভিের্সর বলে বোল্ড হন এ বাঁহাতি। ৯, ১১, ১৫, ০, ০, ১, ৩৩, ০। সবশেষ চার টেস্টে মুমিনুলের ব্যাটে আসা রানের ধারাক্রম। অন্যদিকে প্রান্ত আগলে বেশ খেলছিলেন ইমরুল। এগিয়ে যাচ্ছিলেন হাফসেঞ্চুরির দিকেও। কিন্তু রাজার বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া অবস্থায় প্যাডেল সুইপ করতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। ব্যাটের নিচের অংশ লেগে এ বাঁহাতি হয়ে গেলেন বোল্ড। তার আগে তিনি করেন ৪৩ রান। অন্যপ্রান্তে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মুমিনুলের মতোই খারাপ সময় যাচ্ছে তারও। ১৬, ০, ৪, ০, ১৫,০, ৬, ১৭; শেষ আট ইনিংসে তার রান মাত্র ৫৮। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ করে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। মধ্যাহ্নভোজের ঠিক আগের বলে রাজার হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে নাজমুল হোসেন শান্ত করেন ১৩ রান। পঞ্চম উইকেটের পতন দলীয় ১১১ রানে। এরপর প্রতিরোধ গড়তে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। ১৩ রান করে আউট হয়েছেন। রানের খাতা খুলতেই পারেননি তাইজুল আর নাজমুল অপু। বড় আশা নিয়ে প্রথম দিনের মতো এদিনও মাঠে আসা দশর্করা দেখলেন ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমপর্ণ। স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মাঝে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও একাই লড়লেন আরিফুল। ৩৮ রান করে তিনি শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যাচ তুলে দেয়ার পরই স্টাম্প তুলে উদযাপনে মাতে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের রান তখন ১৬৯। এই নিয়ে টানা আট ইনিংসে ২০০ রান ছুতে ব্যথর্ বাংলাদেশ। অভিষিক্ত লেগস্পিনার মাভুতা ২১ রানে নেন চার উইকেট, অফস্পিনার সিকান্দার রাজা তিনটি, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা দুই উইকেট। দারুণ বোলিংয়েই তাদের জয়োল্লাস। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ উইকেট নেয়া তাইজুল ইসলাম চেয়ে চেয়ে দেখলেন তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে