ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা শেষ হওয়ার পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন লন্ডনে বসেই বলেছিলেন আমরা মাশরাফিকে দেশের মাটিতে নিজের আপন মানুষদের সামনে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাতে চাই এবং তার বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে সম্ভাব্য যা কিছু প্রয়োজন তা করা হবে। তবে দেশের মাটিতে ঠিক কবে, কখন, কার সাথে মাশরাফি শেষ ম্যাচ খেলবেন বা খেলতে পারেন তা জানাননি বোর্ড সভাপতি। সেটা বরাবরই মাশরাফির ইচ্ছের ওপর ছেড়ে দেয়া আছে। মাশরাফি যখন ইচ্ছে প্রকাশ করবেন তখনই সে কাজটা সম্পন্ন করতে চায় বোর্ড। যদিও মাশরাফি এখন পর্যন্ত সেই ইচ্ছের কথা প্রকাশ্যে বা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাননি। এমনকি সবশেষ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এক প্রেস কনফারেন্সেও বলেননি কবে অবসর নেবেন। বরং অমন প্রশ্নে খানিক উষ্মাই প্রকাশ করেছিলেন। তবে এটুকু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, হোম সিরিজেই শেষ ম্যাচটি খেলবেন।
এখন বিদায়ের মঞ্চ প্রায় প্রস্তুত। এখন মাশরাফি যখন খুশি উঠবেন। কিন্তু সেই সময়টা নিয়েই নানা প্রশ্ন আর কিছু বিভ্রান্তি। বিসিবি তাকে বীরোচিত বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে চাইলেও, মাশরাফি এখনো মুখ ফুটে বলেননি আমি অমুক দিন আনুষ্ঠানিক অবসর নেব। অতি আপনজনের কাছেও অবসরের বিষয় নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। মাশরাফির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও মিত্রদের কেউই জানাতে পারেননি মাশরাফি কবে কখন কার সাথে শেষ ম্যাচটি খেলবেন। তাই মাশরাফির অবসর প্রসঙ্গ আর শেষ ম্যাচ এখন রীতিমতো এক ধাঁধা হয়ে আছে।
তবে শোনা যাচ্ছে, জিম্বাবুয়ের সাথে ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ খেলবেন মাশরাফি। আইসিসি নিষেধাজ্ঞায় পরে মাঝপথে সিরিজটি অনিশ্চিত হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে রাজি হয়েছে জিম্বাবুয়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে এসে পৌঁছাবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলতে রাজি হয়েছে জিম্বাবুয়ে। আর সেটাই হবে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ সিরিজ।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান আকরাম খান বলেন, আমরা চাই কি চাই না, সেটা বড় নয়। মাশরাফি চাচ্ছে কি-না সেটাই আসল। আমরা তো সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছি মাশরাফিকে ঘটা করে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফি এক বড় নাম। সফলতম অধিনায়ক। জাতীয় দলের জন্যও তার অবদান অপরিসীম। জাতীয় দলের ঐক্য, সম্প্রীতি, সংহতি আর উত্তরণেও মাশরাফি রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। এমন এক সফল ক্রিকেটার ও সার্থক অধিনায়ককে যথাযথ সম্মান দিতে বোর্ডও প্রস্তুত। কিন্তু ঘোষণাটা তার পক্ষ থেকে আসতে হবে। মাশরাফি আমাদের জানাবে, হঁ্যা আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত। অমুক দলের সাথে খেলে অবসর নেব। তখনই বলতে পারব যে সেটাই মাশরাফির শেষ সিরিজ আর আমরাও তাকে স্মরণীয় করে রাখতে সম্ভাব্য যা কিছু করার করব। বিসিবি মাশরাফির কাছ থেকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই আকরাম খান তথা ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চিত করে বলতে পারছে না জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজই মাশরাফির বিদায়ী সিরিজ।
তবে মাশরাফির ওই ঘনিষ্ঠ সূত্র আরও একটি তথ্যও দিয়েছে। তা হলো এখন যখন জিম্বাবুয়ে আসছেই তখন হয়তো মাশরাফিও চিন্তা ভাবনা করবেন। কারণ এরপর দীর্ঘদিন দেশের মাটিতে কোনো ওয়ানডে নেই। এ বছর আর ঘরের মাঠে কোনো ওয়ানডে খেলার সূচি নেই বাংলাদেশের।
আফগানিস্তানের সঙ্গে একমাত্র টেস্ট আর জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানের অংশগ্রহণে তিন জাতি টি২০ টুর্নামেন্ট খেলবে টাইগাররা। এরপর মাশরাফি ইচ্ছা পোষণ করলে জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই আগামী মাসের শেষ দিকে বিদায়ী ওয়ানডে সিরিজ হবে। না হয় প্রায় এক বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজের জন্য। তাই বারবার বলা হচ্ছে, মাশরাফি চাইলে হয়তো জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই নিজের শেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলে ফেলতে পারেন।