বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
মাহমুদউলস্নাহর তৃপ্তি-অতৃপ্তি

আশা জাগিয়েও সিরিজ জয় অধরা

সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক বলেন, 'তৃপ্তির জায়গা বলতে- আমার মনে হয় নাঈম ও বিপস্নবের পারফরম্যান্স। আর অতৃপ্তি বলি- যখন সিরিজটা হারি, সেদিক থেকে কিছুটা হলেও হতাশাজনক।'
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সিরিজ হারের পর এভাবে হতাশ হয়ে পড়েন টি২০ অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ -ওয়েবসাইট

প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার সুবিধাটা আদায় করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে তো হেরেছে জয়ের খুব ভালো সুযোগ তৈরি করেও। তাতে ভারতের সঙ্গে লড়াই করা গেলেও সিরিজ জেতার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি। এই চূড়ান্ত অতৃপ্তির মাঝেও বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহকে তৃপ্তি দিচ্ছে দলে নতুন আসা তরুণদের দুরন্ত পারফরম্যান্স।

রোববার নাগপুরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০তে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। ভারতের ছুড়ে দেওয়া ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৩৪ রানের মধ্যে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে মাহমুদউলস্নাহরা গুটিয়ে যান ১৪৪ রানে। ৩০ রানের জয়ে পিছিয়ে থেকেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের ঘরে রাখা নিশ্চিত করেছে ভারত।

অথচ ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টি২০তে খেলতে নামা ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম জয়ের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন একা হাতে। ১০ চার ও ২ ছয়ে গড়া তার ৪৮ বলে ৮১ রানের ইনিংসটি এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসও। কিন্তু এক মোহাম্মদ মিঠুন ছাড়া কেউই তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি, তার বিদায়ের পর হাল ধরতে পারেননি আর কেউ। তাতে ইতিহাস গড়া হয়নি বাংলাদেশের।

নাগপুরে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখানোর আগের দুই ম্যাচেও যথাক্রমে ২৬ ও ৩৬ রানের দুটি ইনিংস এসেছিল ২০ বছর বয়সি নাঈমের ব্যাট থেকে। তারই সমবয়সি আরেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বিপস্নবও লেগ স্পিনে নজর কেড়েছেন এই সিরিজে। শেষ ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকলেও দিলিস্নতে বাংলাদেশের জয়ে ২২ রানে ২ উইকেট নিয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। আর রাজকোটে দলের অন্য বোলাররা যখন খাবি খাচ্ছিলেন, তখন বিপস্নব স্রোতের বিপরীতে হাত ঘুরিয়ে ৪ ওভারে ২৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন।

এই দুই তরুণের পাশাপাশি প্রথম টি২০তে মুশফিকুর রহিমের ম্যাচজয়ী ইনিংসও বাংলাদেশ দলনেতা মাহমুদউলস্নাহর প্রশংসা কেড়ে নিয়েছে। পাশাপাশি ভারতের মাটিতে সিরিজ জয়ের সুবাস ছড়িয়েও ব্যর্থ হওয়াটা ভীষণ পোড়াচ্ছে তাকে।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, 'তৃপ্তির জায়গা বলতে- আমার মনে হয় নাঈম ও বিপস্নবের পারফরম্যান্স। আমাদের বোলিং ইউনিটের পারফরম্যান্স খুব ভালো ছিল। মুশফিকের ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স ছিল। এগুলো ছিল ইতিবাচক। আর অতৃপ্তি বলি- আমরা প্রথম ম্যাচ জিতেছি। অবশ্যই ভালো একটা মোমেন্টাম পেয়েছিলাম। যেটা আমরা সব সময় অনুভব করি- এটা বাংলাদেশ দলের শক্তি। তারপর ওখান থেকে যখন সিরিজটা হারি, সেদিক থেকে কিছুটা হলেও হতাশাজনক।'

এবারের ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তিন ম্যাচেই রান। প্রথম আন্তর্জাতিক সিরিজে তিন ম্যাচে করেছেন ১৪৩ রান। প্রথম ম্যাচে ২৬, পরেরটিতে ৩৬। এবার খেললেন ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এরপরও জিতল না দল, হতাশা ছুঁয়ে যাচ্ছে অধিনায়ককে, 'এক কথায় বললে, খুবই দৃষ্টিনন্দন ছিল ওর ইনিংসটা। আমার খারাপ লাগছে ও এত সুন্দর একটা ইনিংস খেলেছে, আমরা ফিনিশ করতে পারিনি। মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতা ছিল। এই কারণে আমার হতাশাটা আরও বেশি। সুন্দর একটা ইনিংস খেলেছে, খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। ওর জন্য হলেও আমরা যদি ভালো করে শেষ করতে পারতাম তাহলে ও অনেক ক্রেডিট পেত।'

ম্যাচ জিততে ৪৩ বলে দরকার ছিল ৬৫ রান, হাতে আছে ৮ উইকেট। অর্থাৎ মুখে তুলে দেওয়া খাবার, কেবল গেলাটাই বাকি। সেটাই করতে পারেনি বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য ধসে আর ৩৪ রান তুলতেই অলআউট হয়ে ৩০ রানে হার। এমন ম্যাচও কেন জিততে পারল না দল। দারুণ এক সুযোগ এভাবে হাতছাড়া কেন হলো? অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহ দিতে পারলেন না কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা, 'আমরা জেতার কাছাকাছি ছিলাম। কিন্তু ৬-৭ বলের মধ্যে ৩-৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। আমার মনে হয় এটাই ক্রুসিয়াল পার্ট। এ রকম ভুল না হওয়ার দিকে সতর্ক থাকতে হবে আগামীতে।'

এমন ধসে অনেকবারই পড়ে আক্ষেপ বাড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু এর পেছনের কারণ নিয়ে নিজের স্পষ্ট ধারণা দিতে পারলেন না অধিনায়ক। বরং ভুলের স্বীকারোক্তি করে গেলেন অকপট, 'দৃঢ়তার ঘাটতি কি না জানি না। সম্প্রতি আমরা এমন ভুল আরও করেছি। এসব পরিস্থিতিতে আসলে বড় দল খেলা শেষ করে। উইকেটও ভালো ছিল, আমার মনে হয় বোলাররা দারুণ করেছে, ওদের ১৮০ এর নিচে আটকে রেখেছে। এটা আমাদেরই (ব্যাটসম্যানদের) ভুল যে শেষ করতে পারিনি।'

উইকেট ছিল তার বোলিংয়ের ধরনের জন্য মাননসই। নিতে পারতেন বাড়তি সুবিধা। কিন্তু জুতসই উইকেটেও দৃষ্টিকটু বল করে দেদারসে রান দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। একই উইকেটে অন্য দুই পেসার আল-আমিন হোসেন আর শফিউল ইসলাম তো বটেই, এমনকি অনিয়মিত সৌম্য সরকারও ছিলেন দারুণ। পুরো সিরিজেই উইকেটশূন্য আর খরুচে থাকা মুস্তাফিজ তবু পাশে পাচ্ছেন অধিনায়ককে।

মাহমুদউলস্নাহ বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি ক্রিকেটারের জীবনে এ ধরনের সময় আসে যখন পাঁচ-ছয়টা খেলায় দল যেভাবে চাচ্ছে হয়তো বা পারফর্ম করতে পারছে না। আমরা সবাই জানি যে সে চ্যাম্পিয়ন বোলার। ওর কাছ থেকে দল অনেক বেশি প্রত্যাশা করে। অনেক সময় ও হয়তো চাহিদা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছে না। আমার কাছে মনে হয় না এজন্য তাকে নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। আমার মনে হয় ওকে সমর্থন করা উচিত। যেভাবে ও কষ্ট করছে, কোচের সাথে কথা বলছে, আমার মনে হয় তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে একটা ম্যাচই যথেষ্ট। আমার কাছে মুস্তাফিজ ম্যাচ উইনিং বোলার। যখন সে পারফর্ম করবে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75110 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1