শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গোলাপি বলে টাইগারদের অগ্নিপরীক্ষা

উপমহাদেশে এটাই হতে যাচ্ছে দিবা-রাত্রির প্রথম টেস্ট। ইন্দোরেই দাঁড়াতে পারেনি মুমিনুলের দল, নতুন চ্যালেঞ্জে কতটা পারবে? সঙ্গে দুই দলের স্কিলের আকাশ-পাতাল পার্থক্য তো আছেই। কলকাতায় নিশ্চিতভাবেই কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলেনি ভারত, বাংলাদেশও না, তাই সমবস্থানে উভয়পক্ষ কলকাতা টেস্ট নিয়ে সফরকারী দলের প্রায় সবার একই কথা। হঁ্যা, স্বাগতিক দল গোলাপি বলে খেলেনি ঠিকই, কিন্তু তাদের খেলোয়াড়রা? স্কোয়াডের ১০ জনের রয়েছে এই অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে যা শূন্য। ভুল ভাবনায় প্রতিপক্ষকে সমতায় দেখছে না তো রাসেল ডমিঙ্গোর দল? কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিবা-রাত্রির টেস্টে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে টাইগারদের।

ভারতের ঘরোয়া একটি টুর্নামেন্টই হয় গোলাপি বলে। টেস্ট স্কোয়াডের ১০ জনের রয়েছে সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা। নেই কেবল অধিনায়ক বিরাট কোহলি, সহ-অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে, ব্যাটসম্যান শুভমান গিল, অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও পেসার উমেশ যাদবের। আর সেখানে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে স্রেফ একটি ম্যাচ হয়েছে দিবা-রাত্রির। ২০১৩ সালে বিসিএলের ফাইনালের সেই ম্যাচের কোনো খেলোয়াড় নেই ভারত সফরের দলে। এমনকি এই দলের কেউ কেউ আছেন, যারা এবারই প্রথম দেখলেন গোলাপি বল!

আর তাই বাংলাদেশ যেমনটা ভাবছে, তা মোটেও ঠিক নয়। ভারতের মাটিতে বড় দৈর্ঘ্যের প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মোহাম্মদ শামি। সন্দেহ নেই, তিনি হবেন অন্যতম বড় হুমকি। গোলাপি বলে সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি, ৫ উইকেট-১০ উইকেটের কীর্তিও রয়েছে কোহলির সতীর্থদের। দিবা-রাত্রির টেস্টের আগে দিবা-রাত্রির দুই-তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলারও নজির আছে। বাংলাদেশ এই ম্যাচের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা তো দূরের কথা, পুরো সফরেই পায়নি কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ।

একে নেই গোলাপি বলে খেলার অভিজ্ঞতা, সেখানে সবুজ উইকেট বানিয়েছে স্বাগতিকরা। ব্যাটসম্যানদের মনে কাঁপন ধরানোর জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন মনে করছেন, লড়াইটা মূলত দুই দলের পেসারদের। যারা ভালো করবেন, তারাই এগিয়ে থাকবেন কলকাতা টেস্টে। আল আমিনের এই ভাবনাতেই চলে আসছে আরও কিছু বিষয়, যা কলকাতার লড়াইয়ে রাখবে বড় ভূমিকা।

ইন্দোরের স্পোর্টিং উইকেটে মোহাম্মদ শামি, উমেশ যাদব ও ইশান্ত শর্মার লাল বলের তোপের সামনেই দাঁড়াতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। গোলাপি বলে এমনিতেই পাবেন বাড়তি সুইং, সবুজ ঘাসের উইকেটে তাদের খেলা হবে আরও কঠিন। এখন পর্যন্ত হওয়া দিবা-রাত্রির ১১ টেস্টের মধ্যে পাঁচটি গেছে পঞ্চম দিনে। দুটিতে ফল হয়েছে চার দিনে। তিন টেস্ট শেষ হয়েছে তিন দিনে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের ম্যাচটি ছিল চার দিনের; শেষ হয়েছিল দুই দিনেই।

উপমহাদেশে এটাই হতে যাচ্ছে দিবা-রাত্রির প্রথম টেস্ট। ইন্দোরেই দাঁড়াতে পারেনি মুমিনুলের দল, নতুন চ্যালেঞ্জে কতটা পারবে? সঙ্গে দুই দলের স্কিলের আকাশ-পাতাল পার্থক্য তো আছেই। কলকাতায় নিশ্চিতভাবেই কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। টেকনিকের ভুল বের হয়ে গেছে আগের টেস্টে। সাদমান ইসলাম, ইমরুল কায়েসের উদ্বোধনী জুটি চরমভাবে ব্যর্থ দুই ইনিংসেই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মৌলিক ব্যাপারগুলো শেখাচ্ছেন ডমিঙ্গো, শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট ও ড্যানিয়েল ভেটোরি। সেখানে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ম্যাচের মাঝখানে নতুন একটি ডেলিভারি নিয়ে কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন ইশান্ত শর্মা। বাঁহাতি ওপেনার সাদমানকে ভেতরে ঢোকানো এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন অভিজ্ঞ এই স্বাগতিক পেসার। বরাবরের মতো ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়াতে ইন্দোরে খেলাতে হয়েছিল দুই পেসার। তৃতীয় পেসার থাকলে কতই-না ভালো হতো, ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই আক্ষেপটা জোরাল হতে থাকে।

কলকাতায় নিশ্চিতভাবেই পেসার বাড়াতে হবে। প্রথম টেস্টে একাদশে ছিলেন আবু জায়েদ রাহি ও ইবাদত হোসেন। বাইরে থাকা মুস্তাফিজুর রহমান ও আল আমিন হোসেন প্রতিদিন গোলাপি বলে অনেকটা সময় ধরে বোলিং করেছেন। আবু জায়েদ ও ইবাদতের চেয়ে গোলাপি বলে তাদের প্রস্তুতি তুলনামূলক ভালো। ইন্দোরে পেস বোলিং নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতোই ছিল আবু জায়েদের পারফরম্যান্স। ইবাদত উইকেট না পেলেও খারাপ করেননি। ২০১৬ সালের পর পরিবর্তন এসেছে ইডেন গার্ডেন্সের উইকেটে। ভারতের প্রথাগত উইকেটের বদলে পিচে রাখা হয়েছে ঘাসের ছোঁয়া। নতুন উইকেট বাংলাদেশের সামনে হাজির হয়েছে বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

ঐতিহাসিক টেস্টকে সামনে রেখে নতুন করে সেজেছে ইডেন। কোনো কিছু বাদ রাখছে না কলকাতা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। ফ্লাইট বিলম্বের বিড়ম্বনা পেরিয়ে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কলকাতায় পা রেখেছে বাংলাদেশ দল। এদিন ছিল সফরকারী দলের কোনো অনুশীলন পর্ব, তবে বুধবার থেকে কলকাতার দিবা-রাত্রির টেস্টের প্রস্তুতি শুরু করেছে টাইগাররা।

ইনিংস ও ১৩০ রানে আগের টেস্ট হেরে যাওয়া বাংলাদেশ দল একটু করে হলেও যেন ফিরে পাচ্ছে মনোবল। প্রথম টেস্টের আগে জেতার চেষ্টার কথা জোর দিয়ে বলতে পারেননি মুমিনুল হক। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ, আল আমিনদের কণ্ঠে এবার দৃঢ় প্রত্যয়। সব কিছুর যোগে ইঙ্গিত মিলছে, ফল হবে কলকাতা টেস্টে। তা নিজেদের পক্ষে আনতে ইন্দোরে করা অজস্র ভুল ঠিক করে নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষের বোলিং সামলানোর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখাতে হবে ব্যাটসম্যানদের। অনেকটাই নিশ্চিত কলকাতায় এর চেয়ে বেশি সুইংয়ের সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে মুশফিক-মাহমুদউলস্নাহদের। উপলক্ষ্য রাঙাতে বুক পেতে লড়াই করতে হবে তাদের। সুতরাং, শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি শুধু সিরিজ বাঁচানোর লড়াই নয়, হতে যাচ্ছে অনেকের ক্যারিয়ার বাঁচানোর অগ্নিপরীক্ষাও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76420 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1