আন্তজাির্তক ক্রীড়া আসরগুলো থেকে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ আসে কালেভদ্রে। হরহামেশাই মেলে হতাশার সংবাদ। ইন্দোনেশিয়ার জাকাতার্ আর পালেমবাং-এ শুরু হওয়া ১৮তম এশিয়ান গেমস থেকেও তেমনটাই মিলছে। গেমসের প্রথম দিনে রোববার চরম ব্যথর্তার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা।
এবারের এশিয়ান গেমসে সবমিলে ১৪টি ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে বেশিরভাগ ইভেন্টেই পদক জয়ের আশা নেই। অভিজ্ঞতা অজর্নই মূল লক্ষ্য! তবে আচাির্র, শুটিং আর কাবাডিতে পদক প্রাপ্তির প্রত্যাশা আছে। রোববার সেই প্রত্যাশার পালে বড়সড় এক ধাক্কাই খেয়েছে বাংলাদেশ। কাবাডি ইভেন্টের শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে নারী এবং পুরুষদের দল। সঁাতার আর শুটিংয়ের বাছাইপবের্ও হতাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা। সুখবর নেই কুস্তিতেও।
এশিয়ান গেমসের গত দুটি আসরে বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল। এবারও ব্রোঞ্জের আশা নিয়েই তারা ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু শুরুতেই সেই আশা শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে নিজেদের জয় নিশ্চিতই ধরে নিয়েছিল মালেকা পারভীনের দল। রোববার সেই ম্যাচেই উল্টো ৪৩-২৮ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে গেছে তারা। জাকাতার্র থিয়েটার গারুদায় অনুষ্ঠিত ম্যাচের প্রথমাধের্ ১৫-১২ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ, দ্বিতীয়াধের্ ব্যবধানটা বেড়েছে আরও।
বাংলাদেশের মেয়েরা ভাবতেই পারেননি এভাবে হারতে হবে। তাদের ধারণা ছিল, চাইনিজ তাইপেকে সহজেই হারানো সম্ভব। সেই তাইপেই কিনা উল্টো তাদেরই হারিয়ে দিল হেসে খেলে। এমন হারে হতাশ দলীয় কোচ আবদুল জলিল, ‘আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল তাইপে এত ভালো খেলবে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম এই ম্যাচটি জিতব। কিন্তু পারলাম না। তাইপে বোনাস পয়েন্ট নিতে এত ভালো খেলেছে যে, আমরা ঠেকাতে পারিনি।’
পুরুষদের কাবাডিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ পেরে উঠবে না, এটা জানাই ছিল। তবে হারের ব্যবধানটা অপ্রত্যাশিই। ৫০-২১ পয়েন্টে হারটা বলে দিচ্ছে, ন্যূনতম লড়াইটাও গড়তে পারেননি আরদুজ্জামানরা। এশিয়ান গেমসে এর আগে আর একবারই বাংলাদেশের বিপক্ষে পয়েন্টের হাফ সেঞ্চুরি পূণর্ করতে পেরেছিল ভারত। ১৯৯০ সালে প্রথম যেবার কাবাডি যুক্ত হয়েছিল গেমসে, সেবারই তারা জিতেছিল ৫২-১৭ পয়েন্টে। গত আসরেও ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ, পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ১৫-৩০।
১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পযর্ন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি এশিয়ান গেমসেই পদক জিতেছে পুরুষ কাবাডি দল। এরপর থেকে কেবলই হতাশা সঙ্গী করে ফিরছে তারা। এবার স্বপ্ন ছিল অতীত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে পারফরম্যান্স বলে দিচ্ছে, স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাবে। আজ শক্তিশালী থাইল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামতে হবে, জিতলে সম্ভাবনা জাগবে পরের রাউন্ডে যাওয়ার। হারলে সব আশাই শেষ। একই সমীকরণ নারী কাবাডি দলের সামনেও। গত আসরে রূপা জেতা ইরানের বিপক্ষে আজ লড়তে হবে মালেকার দলকে।
এদিকে, জেএসজি শুটিং রেঞ্জে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের মিশ্র দলীয় ইভেন্টে হতাশ করেছে সৈয়দা আতকিয়া হাসান-অনর্ব সারার জুটি। বাছাইয়ে মোট ৮১৪ দশমিক ৯ স্কোর গড়েন তারা। তাতে ২২ দলের মধ্যে ত্রয়োদশ স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। পদকের লড়াইয়ে ওঠা পঁাচ দলের মধ্যে সবির্নম্ন ৮২৯ দশমিক ৮ স্কোর চাইনিজ তাইপের। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের মিশ্র দলীয় ইভেন্টেও বাছাই পেরুতে পারেনি বাংলাদেশ। আরদিনা ফেরদৌস-নুর হাসান আলিফ জুটি ৭৩৪ স্কোর গড়ায় বাংলাদেশ ২১ দলের মধ্যে ১৯তম হয়। পদকের লড়াইয়ে ওঠা পঁাচ দেশের মধ্যে সবির্নম্ন ৭৫৯ স্কোর করেছে কাজাখস্তান।
সাতার ইভেন্ট থেকেও এসেছে হতাশার খবর। জেবিকে অ্যাকুয়াটিক সেন্টারে মেয়েদের ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকের হিটে খাদিজা আক্তার সময় নেন ১ মিনিট ২৭ দশমিক ২০ সেকেন্ড। দুই নম্বর হিটে সাত প্রতিযোগীর মধ্যে সপ্তম এবং সব মিলিয়ে ২৬ প্রতিযোগীর মধ্যে ২৪তম হয়ে ছিটকে যান তিনি। ১৬ বছরের খাদিজা আরও দুটো ইভেন্টে অংশ নেবেন। ২৩ আগস্ট ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক আর ২২৪ আগস্ট ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সাতারপুলে নামবেন তিনি।
কুস্তিতে ধরাশায়ী হয়েছেন বাংলাদেশের দুই কুস্তিগীর মোহাম্মদ আলী আমজাদ এবং শ্রী শরৎ চন্দ্র রায়। আমজাদ ২.০২ মিনিটে এবং শরৎ ২.১৯ মিনিটের মধ্যেই প্রতিপক্ষের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছেন গেমস থেকে। পুরুষদের ৭৪ কেজি ফ্রিস্টাইলে আমজাদ ১০-০ পয়েন্টে হেরেছেন ইরারেন মোস্তাফা হোসেন খানির কাছে। ৮৬ কেজি ফ্রিস্টাইলে শরৎ ১১-০ পয়েন্টে হেরেছেন আফগানিস্তানের ফকিরি আবদুল্লাহর কাছে। কুস্তিতে অংশ নিতে ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়া একমাত্র নারী প্রতিযোগী শিরিন সুলতানা আগামীকাল ৬৮ কেজি ফ্রিস্টাইলে লড়বেন।