কখনই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলা হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান ফাফ ডু পেস্নসিসের। তবে আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসে নিয়মিত খেলেন। খেলে বেড়ান সিপিএল, বিগ ব্যাশের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরেও। এবার সেই অপূর্ণতা ঘোচাতে চান তামিম ইকবাল।
অনলাইনে লাইভ আড্ডায় তামিমের সঙ্গে অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ডু পেস্নসিস। আড্ডার এক পর্যায়ে আসে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে চেন্নাই সুপার কিংসের ভক্ত তামিম সেখানকার হালচাল জানতে চান। এরপর আসে বিপিএল প্রসঙ্গ। প্রোটিয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যানের সঙ্গে হালকা মেজাজে দুজনের আলাপে উঠে আসে বিবিধ বিষয়। করোনাভাইরাসে দুই দেশের পরিস্থিতি জানার পাশাপাশি তারা খোঁজখবর নেন একে অপরের।
ডু পেস্নসিস জানান, বিপিএলে খেলা তো তার হয়ইনি, টুর্নামেন্টটার খেলা সরাসরি কখনো দেখাও হয়নি, 'দক্ষিণ আফ্রিকায় তো বিপিএলের খেলা সরাসরি দেখার উপায় নাই। ক্রিকইনফোতে স্কোর দেখি। পরিচিতরা কেমন করছে, খেয়াল রাখি।'
তামিম তাকে আশ্বস্ত করেন বিপিএলের মান নিয়ে। এবং আমন্ত্রণ জানান নিজ দলে খেলার, 'বিপিএল দুর্দান্ত আসর, পরিবেশ খুবই চমৎকার থাকে। তোমাকে কিন্তু কথা দিতে হবে, এবার বিপিএলে আসবে এবং অবশ্যই আমার দলে খেলবে। খুব ভালো টুর্নামেন্ট, তুমি উপভোগ করবে।'
তামিমের প্রস্তাব অবশ্য বেশ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান, 'তোমাকে আগেও বলেছি, আমি অবশ্যই বিপিএল খেলতে আসব। তবে এখানে আলাপ করার উপযুক্ত জায়গা কি না বুঝতে পারছি না, বিপিএল খেলতে আমার ভালো লাগবে।'
করোনাভাইরাসের কারণে দর্শকশূন্য মাঠে খেলা চালু নিয়ে আলাপ চলছে। তাতে অনেক ক্রিকেটারই জানাচ্ছেন আপত্তি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ফাফ ডু পেস্নসিস বাংলাদেশ ও ভারতে খেলতে চান দর্শকশূন্য মাঠে। তার পেছনে অবশ্য আছে কারণ। এক পর্যায়ে ডু পেস্নসিস তামিমকে জিজ্ঞেস করেন, 'দর্শকশূন্য মাঠে খেলতে কেমন লাগবে তোমার?'
তামিম জবাবে বলেন, 'এটা আমি একদমই পছন্দ করব না। মনে হবে, জাস্ট সেন্টার উইকেটে ব্যাটিং অনুশীলনের মতো।'
বিদেশি দলগুলো বাংলাদেশে খেলতে এলে বিপুল পরিমাণ দর্শকের চাপও সহ্য করতে হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেক সময় বলেন, ম্যাচ জিততে না কি গ্যালারির দর্শকরা দ্বাদশ ব্যক্তির ভূমিকা নেন। এটা খুব ভালো জানা আছে ডু পেস্নসিসের। মজা করেই তাই তার চাওয়া, 'আমার মনে হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ ও ভারতে দর্শকশূন্য মাঠে খেলা উচিত।'
তামিমের জবাব, 'এটা হয়তো তোমাদের পক্ষে চলে যাবে।'
তবে দুজনেই বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের প্রশংসা করেন। ডু পেস্নসিসের মতে, দর্শকদের কারণেই বাংলাদেশে খেলাটা কঠিন, 'খেলাটা কঠিন তোমাদের ওখানে। দর্শকরা তুমুল উন্মাদনা তৈরি করে।'
বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমও যথারীতি নিজেদের দর্শকদের প্রতি জানান ভালোবাসা, 'আমাদের দর্শকরা খুবই আবেগী, খুবই নিবেদিত, খুবই ভালো।'
প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে ২০১১ সালে প্রথমবার পেয়েছিলেন ফাফ ডু পেস্নসিস। এরপর তিন সংস্করণ মিলিয়ে নানান সময়ে খেলেছেন আরও ১৩ বার। সময়ে সময়ে বাংলাদেশ দলের তফাত চোখে পড়েছে তার। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এই অধিনায়কের মতে দু-একজনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশ এখন খেলে দল হিসেবে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অল্প কিছু ম্যাচেই পরিসংখ্যান বেশ দুর্দান্ত ডু পেস্নসিসের। ৪ টেস্টে ১৪৫ গড়ে করেছেন ২৯০ রান। ৮ ওয়ানডেতে ৬৩ গড়ে ৩১৫ রান, আর দুই টি২০তে ৯৫ গড়ে ৯৫ রান!
আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ দলের তফাত জানতে চেয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
জবাবে বিস্ফোরক এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান প্রথমেই খুঁজে পেলেন দল হিসেবে তামিমদের দাঁড়িয়ে যাওয়া, 'তখন বাংলাদেশ দুই-একজনের ওপর নির্ভর করে খেলত। ওদের আউট করলেই কাজ সহজ হয়ে যেত। এখন দলটা তৈরি হয়ে গেছে, অনেক পারফরমার উঠে এসেছে। স্পিনারদের শক্তি তো আছেই। সাকিব বরাবরই দারুণ ছিল, এখন বেশ কয়েকজন স্পিনার আছে।'
এই ক'বছরে পেস আক্রমণেও বাংলাদেশের উন্নতি ডু পেস্নসিসের নজর কেড়েছে, তার চোখে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও এখন যথেষ্ট পরিণত, 'বাংলাদেশের পেসাররাও উন্নতি করেছে। উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য এটা বড় বিষয়। দেশের বাইরে গেলে পেস আক্রমণ কত ভালো এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়। অনেক বেশি খেলতে পারছ বলে তোমাদের ব্যাটিংও এখন অনেক ভালো হয়েছে।'
অক্টোবরে সূচি থাকা টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে এখনো আশাবাদী আয়োজক অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি আইসিসি। তবে করোনার বিরূপ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্রিকেটারদের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসছে অনিশ্চয়তার সুর। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ফাফ ডু পেস্নসিসও বিশ্বকাপের ভাগ্য নিয়ে শুনিয়েছেন নিরাশার কথা।
আড্ডার একদম শেষ পর্যায়ে তামিম ডু পেস্নসিসর কাছে বিশ্বকাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চান। ডু পেস্নসিস বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শুনিয়েছেন কিছু কঠিন সমীকরণের কথা। প্রথমেই এসেছে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সীমাবদ্ধতার কথা, 'আমি নিশ্চিত না আসলে (বিশ্বকাপ হবে কি না)। ভ্রমণ একটা বড় ইসু্য হবে অনেক দেশের জন্য। কিছু কিছু দেশে তো আগামী ডিসেম্বর, এমনকি আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে (উড়োজাহাজ চলাচল)।'