মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের অবস্থা জানতে চেয়েছে বিএসইসি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

পুঁজিবাজারে ব্যাংকপ্রতি সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন ও বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের জন্য সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সার্কুলারের পরিপ্রেক্ষিতে তহবিল গঠন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়ে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে গত ২৯ জুন চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির এ সময়ে দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে প্রতিটি ব্যাংককে বিশেষ তহবিলের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিল গঠন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চেয়েছে কমিশন। চিঠি পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের জন্য সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯-এর এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়ে তহবিল গঠন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান চিঠির বিষয়ে বলেন, পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেটার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানতে চেয়েছি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশেষ তহবিল গঠন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সে বিষয়েও ব্যাংকগুলো আমাদের অবহিত করতে পারে। পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে ব্যাংকগুলোর কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছে কমিশন।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্য সিটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী মাশরুর আরেফিন বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য আমরা সবদিক থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার কারণে আমরা বিনিয়োগ করতে পারিনি। যেদিন ফ্লোর প্রাইস তুলে দেবে, সেদিন থেকে শেয়ারবাজারের সূচকে বড় পতন হবে। এ ভয়ে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন।

বিদেশিরা না ফিরলে দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শুধু বাজারই নয়, বরং দেশ থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করেন মাশরুর আরেফিন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গ্রামীণফোনের সঙ্গে সরকারের বিরোধ বিদেশিদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। এজন্য দলে দলে তারা বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন। সিটি ব্যাংকের শেয়ারের ২১ শতাংশ বিদেশিদের হাতে ছিল। বর্তমানে আইএফসির বিনিয়োগ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। বিদেশিরা না ফিরলে দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। এজন্য গ্রামীণফোনের সঙ্গে সরকারের বিরোধ মিটিয়ে বিদেশিদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিতে হবে। এছাড়া ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার বিষয়ে রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে। এটি হলে বিদেশিরা আস্থা পাবেন। তাদের বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে সাহস জোগায়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিএসইসির পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি তাদের জানা নেই। এখন পর্যন্ত ১৩ ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুমোদন চেয়েছে। এ ব্যাংকগুলো এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এ তহবিলের ১০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

দেশের পুঁজিবাজারে ২০১৯ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই নিম্নমুখিতা চলছে। মাঝেমধ্যে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও সার্বিকভাবে ক্রমশ নিচের দিকেই ধাবিত হয়েছে সূচক। সূচক পতনে বছরের ধারাবাহিকতা দেখা যায় চলতি বছরেও। টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস চরমে উঠে গেলে একসময় তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও করেন। পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো ছিল অন্যতম। চলতি বছরের ১০ ফেব্রম্নয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এর মাধ্যমে তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতিটিকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়।

তহবিল গঠনের বিষয়টি ঐচ্ছিক হলেও বাজারসংশ্লিষ্টদের ধারণা, সব ব্যাংকই হয়তো পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। বিশেষ তহবিল গঠনসংক্রান্ত সার্কুলার জারির পর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল বাজারে। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় সে সময় ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির পরে চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩টি ব্যাংক তহবিল গঠনের আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। অথচ দেশে তফসিলি ব্যাংক রয়েছে ৬০টি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় পুঁজিবাজারেও। তার ওপর করোনাভাইরাস আতঙ্কে পুঁজিবাজারে দরপতন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয় বিএসইসি। ফলে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে আটকে যায় পুঁজিবাজার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104412 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1