শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৯-২০ অর্থবছর রপ্তানি লক্ষ্য পূরণ করেছে শুধুই পাট

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ জুলাই ২০২০, ১০:১৫

সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ ছয় মাস কেটেছে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ ঝড়ে। এক মাস বন্ধই ছিল প্রায় সব রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা। বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের ফলে ধস নামে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র পোশাক রপ্তানিতে। রপ্তানি পতন হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যেরও। কিন্তু বৈশ্বিক এ সংকটের মধ্যেও ভালো করছে সোনালি আঁশ খ্যাত পাট। রপ্তানির লক্ষ্য পূরণ করেছে শুধু এ পণ্যটিই। রোববার রপ্তানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশ করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার লক্ষ্যের বিপরীতে দেশ থেকে মোট রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য। এ হিসেবে লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ বা ১ হাজার ১৮২ কোটি ডলারের রপ্তানি কম হয়েছে। আবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ৬৫০ কোটি ডলারের বা প্রায় ১৭ শতাংশ রপ্তানি কম হয়েছে। রপ্তানি খাতের শীর্ষ তিন পণ্য হলো পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। বরাবরের মতো গত অর্থবছরেও রপ্তানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে পোশাকের। মোট রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশই ছিল পোশাক পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের, তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি ছিল পাট ও পাটজাত পণ্যের। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ চিত্রে পরিবর্তন এসেছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্যের। পোশাক ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমলেও বেড়েছে পাট ও পাটজাত পণ্যের। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয় ৮১ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রপ্তানি হয়েছে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি লক্ষ্য ছিল ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। এ লক্ষ্যের চেয়ে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয় মোট চারটি ভাগে। এর মধ্যে আছে জুট বা কাঁচা পাট, জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন বা পাটের সুতা, জুট স্যাক্স অ্যান্ড ব্যাগস বা পাটের বস্তা এবং অন্যান্য পাটজাত পণ্য। জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জাহিদ মিয়া বলেন, বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো। আবার দামও আগের তুলনায় কিছুটা বেশি। এ দুইয়ের প্রভাবেই মূলত সংকটের মধ্যেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ভালো করেছে। পাশাপাশি ব্যক্তি খাতে পাটসংশ্লিষ্ট মিল কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতাও নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাট খাতের এই সুসময়ে সরকার আধুনিকায়ন পরিকল্পনা নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে মো. জাহিদ মিয়া বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সরকারের পরিকল্পনা হলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলে মিলগুলো পরবর্তী সময়ে সচল করা। সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয় তা পাট খাতের সম্ভাবনাকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে আমি আশা করি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১২ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়লেও কমেছে পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি। দেশের মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশ অবদান রাখা পণ্য পোশাকের রপ্তানি কমার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রপ্তানিতে। করোনার প্রাদুর্ভাবে একের পর এক কার্যাদেশ বাতিল ও ক্রেতা দেশগুলোর লকডাউন পরিস্থিতিতে রপ্তানি আরো কমেছে। যার প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে ইপিবির পরিসংখ্যানে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই দশকের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে। পাট ও পাটজাত বাদে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি খাতের প্রায় সব পণ্যের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। হিমায়িত ও তাজা মাছ রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। পস্নাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে