শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম কবে-কত ছিল

যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১১ জুলাই ২০২০, ১০:১৬

বিশ্বজুড়েই মহামূল্যবান স্বর্ণ। হলুদ রঙের ধাতু, যা গলিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন আকার দেওয়া যায়। গলানোর পর আবার চাইলে আগের অবস্থানেও ফিরিয়ে আনা যায়। কোনো কিছুতেই নষ্ট হয় না। সৌন্দর্যে ভরপুর। উপযোগিতাও অনেক বেশি। কিন্তু দুষ্প্রাপ্য। হ্যাঁ বলছি স্বর্ণের কথা। মূল্যবান ধাতুটি সব সময় নিরাপদ সঞ্চয় হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিলে বড় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে ঝুঁকে পড়েন বেশি। যার ফলে বাড়ে দাম। এই যেমন মহামারি করোনার প্রকোপে এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। হুহু করে বেড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ১৮০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম উঠেছে ১৮১৩ ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এটাই স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম নয়। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ২০১১ সালের আগস্টে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৮২৩ দশমিক ৩০ ডলারে উঠেছিল। সেটাই ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম। তবে দেশের ইতিহাসে বর্তমানে সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬৬ হাজার ৭১৮ এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা। সনাতন পদ্ধতিতে এক ভরি স্বর্ণের দাম ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকা। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নির্ধারণ করে দেওয়া এ দাম গত ২৩ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হয় আউন্স হিসেবে। এক আউন্স স্বর্ণ ৩১ দশমিক ১০৩ গ্রামের সমান। বাংলাদেশে স্বর্ণ বিক্রি হয় ভরি হিসেবে। এক ভরি স্বর্ণে হয় ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম। সে হিসেবে এক আউন্স স্বর্ণে প্রায় তিন ভরি হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণ সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হলেও সহসায় দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়ার কারণে তারা এ আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে যেকোনো সময় স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে। মহামারি করোনায় অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে বড় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ কিনে মজুত করছেন। ফলে প্রায় প্রতিদিনই স্বর্ণের দাম বাড়ছে। তারা বলছেন, বিশ্বজুড়ে মানুষ শেয়ারবাজার, ডলার ও স্বর্ণ তিন খাতে বিনিয়োগ করেন। তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিলে শেয়ার বা ডলারে বিনিয়োগ না করে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ কেনাকেই বেশি পছন্দ করেন। বর্তমান করোনা প্রেক্ষিতেও সেটাই ঘটছে। শেয়ারবাজারের বড় বড় বিনিয়োগকারী নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ কিনে রাখছেন। অবশ্য কেউ কেউ স্বর্ণের দাম বাড়ার পেছনে চীনের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, স্বর্ণের বড় অংশই এখন চীনের দখলে। ফলে স্বর্ণের দাম কমা বা বাড়া এখন অনেকটাই নির্ভর করছে চীনের ওপর। অর্থনৈতিকভাবে চীন এখন সুপার পাওয়ার হয়ে যাচ্ছে। হয় তো করোনা পরবর্তী চীন বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাধর অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৪৫৪ ডলার। এরপর করোনার প্রকোপের মধ্যে ফেব্রম্নয়ারিতে ১৬৬০ ডলারে ওঠে। মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে এক ধাক্কায় প্রতি আউন্স ১৪৬৯ ডলারে নেমে আসে। এ ধাক্কা সামলাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। হুহু করে দাম বেড়ে মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১৭৪৮ ডলারে ঠেকে। এরপর থেকে স্বর্ণের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। সম্প্রতি সেই দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। ইতোমধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১৮১৩ ডলারে পৌঁছেছে। মাত্র ১১ ডলার বাড়লেই আন্তর্জাতিক বাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে যাবে স্বর্ণ। রাজধানীর ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে শিগগিরই দেশেও দাম বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়াতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বর্ণের দাম না বাড়ালে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্বর্ণশিল্পী সমিতির সভাপতি ও বাজুসের সাবেক সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, করোনার প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ স্বর্ণ কিনছেন। এ কারণে স্বর্ণের দাম বেড়েই চলছে। অবস্থা যা তাতে মনে হচ্ছে শিগগিরই স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। স্বর্ণ ব্যবসার দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এ ব্যবসায়ী বলেন, ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৮২৩ ডলারে উঠেছিল। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। এছাড়া সে সময় টাকার মান এখনকার তুলনায় ভালো ছিল। যে কারণে সে সময় স্বর্ণের দাম বাংলাদেশে এত বাড়েনি। স্বর্ণের বর্তমান দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তিনি আরও বলেন, স্বর্ণের দাম অনেক বাড়লেও গহনা খুব একটা বিক্রি হচ্ছে না। তিন মাস ধরে বিক্রিই নেই। কিন্তু মাসে মাসে কর্মীদের বেতন, দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে। সামনের দিনে আমরা কীভাবে চলব তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিক্রি না থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বর্ণের দাম বাড়াতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম ১৮২৩ ডলার। ২০১১ সালে এ দাম উঠেছিল। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে শিগগিরই ওই রেকর্ড ভেঙে যাবে। স্বর্ণের দাম বেড়ে কোথায় ঠেকে এখন সেটাই দেখার বিষয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে