শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ ব্যাংকে ঋণের সুদ এখনো ৯ শতাংশের বেশি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশেনা সত্ত্বেও অতিরিক্ত সুদহার আদায় করছে বেশকিছু ব্যাংক। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা। অথচ এখনো অনেক ব্যাংক ১২ শতাংশের উপরে ঋণের সুদ আদায় করছে। গত মে মাসে ১৩টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার ছিল ৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৫ ব্যাংকের ঋণের সুদ ১০ শতাংশের বেশি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিনিয়োগে স্থবিরতা। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মন্থর অবস্থা। এর জন্য ঋণের উচ্চ সুদহারকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। তাই অর্থনীতির গতিধারা ঠিক রাখতে সুদহার কমানোর কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী। ফলে ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই হিসেবে এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মে মাস শেষেও নির্দেশনা না মানার তালিকায় রয়েছে সরকারি মালিকানার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি একটি ও বেসরকারি খাতের ১১টি। বাকি সব ব্যাংকের গড় সুদহার নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।

এদিকে, বেশিরভাগ ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ শতাংশের নিচে নামানোর পাশাপাশি আমানতের সুদহার কমিয়ে এনেছে। এতে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান (স্প্রেড) ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস শেষে পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক এখনো ১০ শতাংশের উপরে ঋণের সুদ আদায় করছে। এগুলো হলো- ইউনিয়ন ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ঋণের সুদ নিচ্ছে নতুন প্রজন্মের ইউনিয়ন ব্যাংক। তাদের ক্রেডিট কার্ড সেবা না থাকায় এপ্রিল থেকে ব্যাংকটির ঋণের গড় সুদহার কোনোভাবেই ৯ শতাংশের উপরে থাকার কথা নয়। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ইউনিয়ন ব্যাংক যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে মে মাসেও ব্যাংকটির ঋণের গড় সুদহার উলেস্নখ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। ওই মাসে গড় আমানত ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর মধুমতি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গড় আমানত ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) তাদের বিতরণকৃত ঋণের গড় সুদ নিয়েছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ওই মাসে গড়ে ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গড় আমানত ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ঋণে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং আমানতে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ সুদহার।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক তা নামিয়ে এনেছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক কেন নামিয়ে আনেনি তা আমরা খতিয়ে দেখব।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; যা চলতি বছরের ১ এপ্রিল বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, লক্ষ করা যাচ্ছে বর্তমানে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পসহ ব্যবসা ও সেবা খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেশি হলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ কখনো কখনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় গ্রাহক। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক সক্ষমতা অর্জন, শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণ করেছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ড ব্যতীত অন্যসব খাতে অশ্রেণিকৃত ঋণের উপর সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। কোনো ঋণের উপর উলিস্নখিতভাবে সুদহার ধার্য করার পরও যদি সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয় সেক্ষেত্রে যে সময়কালের জন্য খেলাপি হবে, অর্থাৎ মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে খেলাপি কিস্তি এবং চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে মোট খেলাপি ঋণের উপর সর্বোচ্চ ২% হারে অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তা ঋণ ছাড়া মে মাসে ব্যাংক খাতের গড় সুদহার নেমেছে ৮ দশমিক ০৯ শতাংশে। গত এপ্রিলে যা ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে, যা এপ্রিলে ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অধিকাংশ ব্যাংক ঋণের সুদহার ব্যাপক কমিয়েছে। তবে সেই হারে আমানতের সুদ কমাতে পারেনি। এতে করে ব্যাংকগুলোর স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, যা এপ্রিলে ছিল ২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তা ঋণসহ ব্যাংকিং খাতে মে মাসে গড় সুদহার নেমেছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশে। গত এপ্রিলে যা ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমেছে, যা এপ্রিলে ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ফলে ব্যাংকগুলোর সুদের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশে, যা এপ্রিলে ছিল ২ দশমিক ৯২ শতাংশ।

মে মাস শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ ও ঋণ দিয়েছে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশে। এতে তাদের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১২ শতাংশে। সরকারি মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো আমানতের গড় সুদহার ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ আর ঋণে ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। স্প্রেড ২ দশমিক ০৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে গত এপ্রিল শেষে বেসরকারি খাতে এক বছর আগের চেয়ে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই ঋণ প্রবৃদ্ধি গত প্রায় ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। করোনাভাইরাসের কারণে মে মাসেও অধিকাংশ ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমবে বলে ধারণা করছেন ব্যাংকাররা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105582 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1