বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় বেড়ে দ্বিগুণ

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

প্রাণঘাতী করোনার মধ্যেও দেশে রেমিট্যান্স আহরণে একের পর এক রেকর্ড তৈরি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসীরা প্রায় ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা দেশের ইতিহাসে একক মাস হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।

এদিকে জুলাইয়ে মোট আহরিত রেমিট্যান্সের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশ থেকে এসেছে ১৪৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু সৌদি প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। যা দেশে আসা মোট রেমিট্যান্সের ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থ বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৯১ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জুলাইয়ে সৌদি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৩ কোটি ১২ লাখ ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির কারণে অবৈধ পথে (হুন্ডি) রেমিট্যান্স আসা কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে তা বেড়েছে। এছাড়া সরকার গত অর্থবছর থেকে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বৈধ পথে বেড়েছে প্রবাসী আয়।

করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে অনেক প্রবাসী বেতন ভাতা পায়নি। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে মার্চ ও এপ্রিলে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেননি প্রবাসীরা। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মে মাস থেকে আবারও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। তবে অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরতে জমানো সব অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। এসব কারণে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যেও বেড়েছে রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশের প্রবাসীদের বড় বাজার সৌদি আরব। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০-৬০ হাজারের মত মানুষ বিদেশে কাজ করতে যান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশটি যায় সৌদি আরব। দেশটিতে জানুয়ারি মাসে গেছেন ৫২ হাজার, ফেব্রয়ারিতে ৪৪ হাজার আর মার্চে ফ্লাইট বন্ধের আগ পর্যন্ত গেছেন ৩৮ হাজার মানুষ। বর্তমানে ২২ লাখের মত বাংলাদেশি অভিবাসী সৌদিতে রয়েছেন।

এদিকে সম্প্রতি সৌদি আরবের ইংরেজি দৈনিক সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, মহামারির কারণে এ বছর সৌদির শ্রমবাজারে ১২ লাখ বিদেশি কর্মী চাকরি হারাবেন। দেশটির এক গবেষণা সংস্থার বরাত দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, নির্মাণ খাত, পর্যটন (হজ), রেস্তরাঁসহ বিভিন্ন খাতে এই কর্মচ্যুতি ঘটতে পারে।

জানা গেছে, করোনার কারণে হজের কার্যক্রম না থাকায় সৌদিতে হোটেল-রেস্তরাঁসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রবাসী শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সৌদি ছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।

জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। গত অর্থ বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। চতুর্থ অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। যা আগের বছরে ছিল ১১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ওমান থেকে এসেছে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। গত জুলাইয়ে এসেছিল ১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।

এছাড়া জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য থেকে পঠিয়েছে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কুয়েত থেকে ১৭ কোটি ডলার, কাতার থেকে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স এসেছে আট কোটি ২৮ লাখ ডলার এবং ইতালি থেকে এসেছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যা এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থ বছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<108488 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1