শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এসএমই ঋণ

আহমেদ তোফায়েল
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

কী সকাল, কী মধ্যরাত- পুরান ঢাকার কারখানাগুলোর ঝনঝনাঝন শব্দ কানে না এলে কি ওই এলাকার ঐতিহ্য থাকে! এখানে মাঝদুপুরের ঘাম শুকায় বুড়িগঙ্গার গোধূলী বেলায়। মহাজনের আদেশ শুনতে শুনতে সকাল থেকে বিকাল, আর সে বিকালকে রাত বানায় এখানকার শ্রমিকরা। এই তল্লাটের শামপুরে প্লাস্টিক কারখানা চালান আবু তাহের। চলেও জমপেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্লাস্টিকের সামগ্রী তৈরি হয় তার কারখানায়। ছড়িয়ে দেন সারা বাংলায়। তার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প সাদামাটা হলেও রোমাঞ্চকর। ১২ জনের সাধ্যি নিয়ে শুরু করা কারখানায় এখন সাড়ে তিনশ লোকের কমর্সংস্থান। তাকেই হয়তো সাফল্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মানবেন তার অধীনস্থরা।

গল্পটি সেই সত্তরের দশকের, প্রথম প্রকাশ ক্ষুদ্র উদ্যোগের মাধ্যমে। শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় এসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু হৃদয়জুড়ে ছিল ব্যবসার স্বপ্ন। ১৯৯৩ সালে নিজের অথার্য়নে ব্যবসা শুরু করেন। শুরুটা বেশ ধীরগতিতে। ২০০৩ সালে প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা এসএমই ঋণ নেন। এরপর থেকে পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। তাজ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দ্রæত প্রসার পায়। নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের কমর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন আবু তাহের। এত দিন প্লাস্টিকের মগ, জগ, বালতির মতো ছোট সামগ্রী তৈরি করতেন আবু তাহের। এবার ব্যবসা স¤প্রসারণে মনযোগ দিচ্ছেন। প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিলের মতো বড় সামগ্রী নিমাের্ণ আগ্রহী তিনি। শুধু প্রিমিয়ার নয়, ব্যাংক খাত থেকে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত) ঋণ নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন আবু তাহেরের মতো অনেক উদ্যোক্তা।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভনর্র ড. আতিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প মানেই হলো এসএমই উদ্যোক্তাদের গল্প। নতুন নতুন উদ্যোক্তা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছোট ঋণে রীতিমতো অথৈর্নতিক বিপ্লব ঘটিয়েছেন দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশ অবশ্যই পরবতীর্ দশকে বাংলাদেশকে উচ্চ ও মধ্যম কাতারে দঁাড় করাবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এখন সরাসরি পণ্য রপ্তানি করছেন বিদেশে। এক সময়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা একদিন বড়মাপের উদ্যোক্তায় পরিণত হন। গত এক দশকে দেশে ক্ষুদ্রঋণে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পেরেছেন এমন নারী ও পুরুষের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে।

এসএমই খাতের গুরুত্ত¡ বিবেচনায় এবং দেশের অথৈর্নতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সৈয়দা আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ২০০৩ সালে কঁাচপুরে সিএনজি কনভাসর্ন স্টেশন দেন। আথির্ক সংকট কাটাতে ২০১৬ সালে তিনিও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ছয় কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসার আকার বৃদ্ধি করেন। বতর্মানে তার তিনটি কনভাসর্ন স্টেশন আছে। কঁাচপুরে সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং গাজীপুরে আছে অকটেন ফিলিং স্টেশন। তিনি বলেন, ব্যবসা স¤প্রসারণ করতে গিয়ে অথর্ সংকটে পড়েছিলেন। তখন প্রিমিয়ার ব্যাংকের যোগাযোগ করেন। ব্যাংক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। বতর্মানে এই ব্যবসার পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতেও মনযোগ দিচ্ছেন উদ্যোক্তা সৈয়দা আক্তার।

জানা গেছে, মূলত পঁাচটি খাতে এসএমই ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকটি। প্রিমিয়ার গ্রামীণ সনিভর্র কমর্সূিচর আওতায় শহরে বা নগরে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কৃষি, গ্রামীণ পরিবহন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী তাদের সবির্নম্ন ১০ হাজার থেকে সবোর্চ্চ ১০ লাখ টাকা পযর্ন্ত ঋণ দেয়া হয়। মেয়াদ তিন মাস থেকে তিন বছর। সুদের হার ৯ শতাংশ।

এ ছাড়া ব্যাংকটির সমৃদ্ধি কমর্সূচির আওতায় ১০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। সবির্নম্ন ১০ হাজার থেকে সবোর্চ্চ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া যায় এর আওতায়। এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সুদের হার সাড়ে ৯ শতাংশ। প্রিমিয়ার কুইক ট্রেড কমর্সূচির আওতায় সবির্নম্ন ২০ লাখ থেকে সবোর্চ্চ এক কোটি টাকা ঋণ নেয়া যাবে, যা ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে প্রিমিয়ার ই-জিপি ফাইন্যান্স এবং প্রিমিয়ার এসএমই ফ্যাক্টোরিয় ফাইন্যান্স কমর্সূিচর মাধ্যমে ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের আথির্ক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা য়ায়, প্রতিবছর এসএমই খাতে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। ২০১৩ সালে এই খাতে ঋণ ছিল ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে বেড়ে দঁাড়ায় ৯৩২ কোটি টাকায়। ২০১৫ সালে এক হাজার ১৪৬ কোটি, ২০১৬-তে এক হাজার ৮৯৫ কোটি এবং গেল বছর দুই হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। চলতি বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা এসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে, যার মধ্যে গত জুলাই পযর্ন্ত প্রায় এক হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

ব্যাংকের সিএমএসএমই এবং কৃষিঋণ বিভাগের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান কমর্কতার্ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ২০২০ সালের মধ্যে প্রিমিয়ার ব্যাংক একটি এসএমইবান্ধব ব্যাংক হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে এবং আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মোট ঋণের ৬০ শতাংশই হবে এসএমই ঋণ। এই লক্ষ্যে আমরা এসএমই শিল্প খাতকে অধিকতর আথির্ক সেবা প্রদানের জন্য এসএমই খাতের প্রয়োজন অনুযায়ী নানা ধরনের ব্যাংকিং প্রোডাক্ট তৈরি করে রিলেশনশিপ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্রæততার সঙ্গে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছি।‘

জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ এম রিয়াজুল করিম বলেন, প্রিমিয়ার ব্যাংক আগে প্রচলিত মডেলের বড় গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যবসায় বেশি মনোযোগী ছিল। বতর্মানে ফোকাসটি এসএমই ও কৃষির দিকে সরে এসেছে। আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, অন্যান্য ব্যাংকিং সেবাÑ সব ক্ষেত্রেই ক্ষদ্র ও মাঝারি গ্রাহকদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এটি একদিকে যেমন ব্যাংকের ব্যবসা স¤প্রসারণে সহায়ক হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা দিয়ে অথর্নীতিতে অবদান রাখছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। শহরে-গ্রামে সবখানে কৃষি, এসএমইতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সারা দেশের আপামর মানুষের ব্যাংক হতে চায় প্রিমিয়ার ব্যাংক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12720 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1