বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে মধ্যবিত্ত, বাড়ছে সুপারশপ

আহমেদ তোফায়েল
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও। ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় লাভের অঙ্ক কষছে দেশের সুপারশপ ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে নগরায়নের সংস্কৃতি ও মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়ায় সুপারশপ ব্যবসার দ্রæত প্রসারণের অন্যতম কারণ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে সুপারশপ ব্যবসার বাজার দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত কয়েক বছরের হিসাবে বছরপ্রতি এই খাতের আওতা বেড়েছে ১৫ শতাংশ। বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকায় মুদি ক্রেতারা সুপারশপগুলোতে বেশি ঝুঁকছেন।

জানা গেছে, দেশে ২০০১ সালে সবর্প্রথম এই ব্যবসার সূচনা করে আগোরা। এরপর একে একে স্বপ্ন, মীনা বাজার, নন্দন, আলমাস, কেয়ারফ্যামিলি, পিক অ্যান্ড পে, ডেইলি সুপারশপ, ইউনিমাটর্ এবং আরও কয়েকটি সুপারশপ মধ্যবিত্তদের নজর কেড়েছে।

সাম্প্রতিক আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এক রিভিউ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সারাদেশে সবের্মাট ১২১টি সুপারশপ আউটলেট রয়েছে। যার মধ্যে স্বপ্নেরই রয়েছে ৭৬টি। স্বপ্নের এই আউটলেটগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর ও সিলেট শহরে ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

এ ছাড়া বতমাের্ন আগোরার ১৫টি ও মীনা বাজারের ১৭টি আউটলেট রয়েছে। এই খাতের এক সময়ের গুরুত্বপূণর্ প্রতিযোগী নন্দনের এখন মাত্র দুটি আউটলেট। ঢাকা শহরের অন্যান্য আউটলেটগুলোর মধ্যে রয়েছে আলমাস, কেয়ারফ্যামিলি, পিক অ্যান্ড পে, ডেইলি সুপারশপ, ইউনিমাটর্ এবং প্রিন্স বাজার।

আইডিএলসির ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, সুপারমাকের্ট শিল্পে ২০১৫ সালে বাজার ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার। দ্রæতগতিতে দেশে নগরায়নের ফলে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এই শিল্পের বাজার আরও ১৫ গুণ বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

সাধারণ ব্যবসার আইন অনুযায়ী, এই খাতের শেয়ার মূলধন খুবই সামান্য। আইডিএলসির হিসাব অনুযায়ী, সেটা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। অথর্্যৎ এই খাতের যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি হলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন।

সাম্প্রতিক কয়েক অথর্বছরে দেশের অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। দেশের মধ্যবিত্ত ও ধনী শ্রেণির সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়েছে। ফলে সুপারমাকের্ট ব্যবসায় আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর দেশে মাথাপিছু আয় দঁাড়িয়েছে এক হাজার ৭৫১ ডলার। বাংলাদেশ সারাবিশ্বের মধ্যে ৪২তম বৃহৎ অথর্নীতির দেশ। আর ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বে ৩১তম বৃহৎ অথর্নীতির দেশ।

এদিকে মধ্যবিত্ত ও ধনী শ্রেণির মুদি ক্রেতারা সাধারণত সব মুদি পণ্য এক ছাদের নিচে খেঁাজেন। তাই তারা সুপারমাকের্টগুলোতে এসে তাদের ইচ্ছামতো কেনাকাটা করেন। দেশের সুপারমাকের্টগুলোতে এখন সাধারণত মুদি পণ্য, শুষ্ক খাবার, মাছ, গোস্ত, গৃহস্থালি পণ্য, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সুপারমাকের্ট ওনাসর্ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেছেন, দেশে এই শিল্পের উত্থান হয়েছে ১৭-১৮ বছর আগে। ভোক্তারা এখন সচরাচর বাজারে না গিয়ে সুপারমাকের্টগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। কারণ, এই শিল্প মানুষের সে বিশ্বাস ও আস্থা অজর্ন করতে পেরেছে। তবে জাকির হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, দেশের সুপারমাকের্টগুলোতে চার শতাংশ কর বসানোয় বাড়তি ঝামেলা তৈরি করেছে।

বতর্মান সময়ে সুপারশপ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। এই খাতকে কিভাবে আরও জনপ্রিয় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেদিকেই বেশি নজর দিচ্ছেন সুপারশপের সংশ্লিষ্ট মালিকরা। এই খাত থেকে সরকারও ভালো কর পাচ্ছে। তাই এই খাতকে আরও বেশি গতিশীল করার জন্য উদ্যোক্তরা মনে করছেন ভ্যাটের হার কমানোসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে সেটা আরও বেশি লাভজনক খাত হিসেবে পরিণত হবে।

এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) নিবার্হী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির জানিয়েছেন, এই খাতকে বতর্মানে তারা স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই চেষ্টা করছেন, এই খাতকে কিভাবে আরও বেশি গ্রাহকবান্ধব খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। গত বছরের তুলনায় স্বপ্ন এবং আগোরার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এই খাতটি আস্তে আস্তে জনপ্রিয় ও লাভজনক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

সুপারসপ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখাতে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ল্যাব দরকার। এটি স্থাপন করা না হলে খাদ্যদ্রব্য সহজে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সবকিছু পরীক্ষা করতেও চায় না। কারণ, পরীক্ষা করাটা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। তাই কিভাবে পরীক্ষা করা যায়, এ বিষয়ে ব্যবসায়ী এবং সরকারকে এক সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে নাগরিক জীবনে নিত্যদিনের বাজার ঝামেলার সহজ সমাধান এখন এই সুপারশপগুলো। সাধারণ সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে নিত্যদিনকার তরিতরকারি, মাছ, মাংস সবই পাওয়া যায় সুপারশপে। পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি ভোজ্য অনেক পণ্যের পাশাপাশি কসমেটিকস, তৈজসপত্রসহ বিশ্ব খ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রয়োজনীয় পণ্য। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচ্ছন্ন ও সুবিন্যস্তভাবে এই পণ্যগুলো শপের তাকে তাকে সাজানো থাকে।

বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে সুপারশপের যাত্রা শুরু হলেও উন্নত বিশ্বে এর শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগে। ১৯১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়কের্র ম্যানহাটনে ‘এস্টোর মাকের্ট’ নামে একটি সুপারশপ খোলেন ভিনসেন্ট এস্টোর নামে এক ব্যবসায়ী। তবে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী সুপার মাকেের্টর ধারণা ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে শিল্পোন্নত ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিভিন্ন দোকান থেকে ঘুরে ঘুরে যাচাই করে কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকের কাছেই এটা অনেক সময়সাপেক্ষ এবং বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে দঁাড়ায়। বিশেষ করে, যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই কমর্জীবী, তাদের জন্য বাজারে ঘুরে ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা বেশ কষ্টকর।

প্রতিবছর এ ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা প্রায় ৮-১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০ বছরে দেশের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষের জন্য কেনাকাটার সবচেয়ে নিভর্রযোগ্য পরিসর হবে সুপারশপগুলো। তাকে তাকে সাজানো বাহারি পণ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং মানসম্মত পণ্যের নিশ্চয়তাই শুধু নয়, আধুনিক সুপারশপগুলো অনলাইন সেবা থেকে শুরু করে হোম ডেলিভারির মতো আরও অনেক সেবা দিয়ে ক্রেতাদের আকষর্ণ করছে প্রতিনিয়ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13682 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1