বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ

চলতি অথর্বছরের প্রথম দুই মাস
ইমদাদ হোসাইন
  ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদন করছে। ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে দিন দিন গুরুত্বপূণর্ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ । সা¤প্রতিক সময়ে ওষুধ রপ্তানির গতি বাড়ায় দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এ শিল্প।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নত দেশগুলোতে ওষুধ রপ্তানি ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপাটির্ রাইটস (ট্রিপস) চুক্তি বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এ চুক্তির আওতায় রপ্তানিতে শতর্ শিথিল হওয়ায় স্বল্পন্নোত দেশগুলো উন্নত দেশে সহজ শতের্ ওষুধ রপ্তানি করতে পারে। ২০১৫ সালে নাইরোবিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডবিøউটিও) মন্ত্রীদের সম্মেলনে এ চুক্তির নবায়ন হয়। এর ফলে ২০৩৩ সাল পযর্ন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) ওধুষ রপ্তানি করতে পারবে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত অথর্বছরে (২০১৭-১৮) শুধু দেশের বাজারেই ওষুধ শিল্পের বাজার ছাড়িয়েছে ১০৩.৪৬ মিলিয়ন ডলার। ইপিবি প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই শিল্পে ২০১৬-১৭ অথর্বছরের তুলনায় গত বছরে রপ্তানি আয় ১৬ শতাংশ বেশি ছিল। অথার্ৎ ২০১৬-১৭ অথর্বছরে আয় ছিল ৮৯.১৭ মিলিয়ন ডলার। ইপিবির দেয়া তথ্য বলছে, চলতি অথর্বছরের প্রথম দু’মাসেই ওষুধ রপ্তানি হয়েছে ১৮.৭৭ মিলিয়ন ডলারের। যা গত অথর্বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।

এই শিল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের রপ্তানি নীতির কারণে দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানি রপ্তানি আয় বাড়ছে। তারা বলছেন, উৎপাদনভিত্তিক ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি বাড়ায় এ খাতের উন্নতি হচ্ছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফামাির্সউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে এই খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে। বিশ্ব বাজারে বড় একটি বাজার এখনও হাতছানি দিচ্ছে। আশা করছি বাংলাদেশ সেটি ধরতে পারবে। অনলাইন বাজার গবেষণা সংস্থা স্টাটিস্টিকার তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে সারাবিশ্বে ফামাির্সউটিক্যালস শিল্পের বিক্রি ছিল ৯৯৬ বিলিয়ন ডলারের।

শফিউজ্জামান বলেন, সরকার ইতোমধ্যে অ্যাক্টিভ ফামাির্সউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) ওষুধের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভস ঘোষণা করেছে। আর প্রচলিত ওষুধের রপ্তানির ওপর ক্যাশ ইনসেনটিভস দিয়েছে ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, আমাদের এপিআই উৎপাদন ক্ষমতা ও রপ্তানিতে এখনও তেমন কোনো গতি আসেনি। এপিআই উৎপাদন পুরোদমে শুরু করতে পারলে রপ্তানির পরিমাণও গাণিতিক হারে বাড়বে। ফামাির্সউটিক্যালস শিল্পের উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ফামাির্সউটিক্যালসকে ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।

শফিউজ্জামান বলেন, আমরা আশা করছি রপ্তানির ক্ষেত্রে এসব সুবিধা আমরা আরও এক যুগ পাব। এই সেক্টরকে উন্নতির শেখরে তুলে নেয়ার জন্য এই সময়ই যথেষ্ট। তিনি বলেন, দেশের ফামাির্সউটিক্যালস কোম্পানিগুলো আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে এসব দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ওষুধ শিল্পের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার

ওয়ান ফামার্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগের চেয়েও এখন ড্রাগ রপ্তানিতে বেশ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এই উন্নতির মধ্যেই ওয়ান ফামার্ তিন বছর আগে যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, আমরাই দেশের প্রথম ফামাির্সউটিক্যালস কোম্পানি যারা কিনা বাণিজ্যিক কাযর্ক্রম শুরুর আড়াই বছরের মাথাতেই ওষুধ রপ্তানিতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, তার কোম্পানি ২০১৯ সালের মধ্যে ১০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করতে চায়। তবে বিশ্ব বাজারের দখল নিতে হলে এই খাতে আরও গবেষণাধমীর্ ও নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত পঁাচ বছরে ওষুধ রপ্তানি বেড়ে ৪ কোটি ডলার হয়েছে, যা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। স্থানীয়ভাবে দেশের চাহিদার প্রায় শতভাগ উৎপাদন করে রপ্তানি আয়ে বিশাল অবদান রাখছে এই খাত। এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্ববাজারেও।

স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ‘বষর্পণ্য’ ঘোষণার ফলে এ সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে ওষুধ রপ্তানিতে বিশেষ শতর্ শিথিলের সুবিধাভোগী দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ হিসেবে ওষুধ রপ্তানি করে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বতর্মানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৭ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাই তৈরি পোশাক খাতের মতো ওষুধশিল্পকেও এগিয়ে নিতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ওষুধের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে দেশেই কঁাচামাল (এপিআই) উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি এপিআই পাকর্ স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৫০ বছরে সুবণর্ জয়ন্তী ২০২১ সালে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার কোটি ডলার। আর ওষুধ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার।

ইপিবি সূত্রে জানা যায়, দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার কয়েক বছর ধরে বষর্পণ্যের ঘোষণা দেয়। সেই হিসেবে ওইসব পণ্যের সমস্যা চিহ্নিত করে এর মান উন্নয়নে নীতি সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর ফলে বষর্পণ্যের মান উন্নয়নের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন ও কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর চামড়াকে বষর্পণ্য হিসেবে ১৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়। সরকার বতর্মানে পণ্য ভেদে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পযর্ন্ত রপ্তানি প্রণোদনা দিয়ে থাকে।

ওষুধ শিল্প সমিতির সূত্রে জানা গেছে, দেশে বতর্মানে ডোসেজ ফমের্র উন্নত প্রযুক্তির ওষুধ তৈরি হচ্ছে। ভ্যাকসিন, ইনসুলিন, অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিভাইরাল, হরমোন স্টেরয়েড, তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পরিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের কয়েকটি ওষুধ কম্পানি ইউএস এফডিএ, ইউকে এমএইচআরএ, ইএমএ, টিজিএ অস্ট্রেলিয়া, জিসিসি, এএনভিআইএসএ ব্রাজিল সনদ লাভ করেছে। স¤প্রতি তুরস্ক, কুয়েত, শ্রীলঙ্কা, বেলারুশ, দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানির চুক্তি করেছে। লাইসেন্সিং চুক্তি করে বাংলাদেশের কারখানায় উৎপাদন করে ওষুধ নিতে চায় জাপানি উদ্যোক্তারাও।

জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১ হাজার ৩৩৮টি ছোট-বড় ওষুধ উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো, স্কয়ার, গøাক্সো, রেনেটা, ইনসেপ্টা, হেলথ কেয়ার, এসকেএফ, সেনডোজসহ বেশ কিছু কারখানায় আন্তজাির্তকমানের ওষুধ উৎপাদিত হয়। দেশের উন্নতমানের ৫৪টির বেশি কম্পানি আছে যারা অ্যান্টিবায়োটিকসহ ৩০৩টি গ্রæপের ওষুধ রপ্তানি করে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বে বতর্মানে ওষুধের রপ্তানি বাজার ১৭০ বিলিয়ন ডলারের। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ বাজার ধরা গেলে এ খাতে রপ্তানি আয় দঁাড়াবে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। দেশের ওষুধের গুণগত মান ভালো এবং অন্য দেশের তুলনায় দাম কম হওয়ায় এটা অজর্ন সম্ভব বলে মনে করেন তারা। এ জন্য সরকারের নজরদারি বাড়ানো একই সঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার পরামশর্ দেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<19695 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1