বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বীমা সুবিধা বদলে দিতে পারে পোশাকশিল্পের পরিবেশ

যাযাদি রিপোটর্
  ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

দেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ, ঘন ঘন কমর্স্থল পরিবতর্ন, অসুস্থ থাকাসহ নানা কারণে কমের্ক্ষত্রে শ্রমিকদের অনুপস্থিতি বড় ধরনের সঙ্কটে ফেলে কারখানা মালিকদের। তবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা সুবিধা চালু হলে এ ধরনের সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমেনা বেগম প্রায় তিন বছর আশুলিয়ার মিলেনিয়াম টেক্সটাইল লিমিটেডে অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। নানা কারণে তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। যার কারণে কমের্ক্ষত্রে উপস্থিতির হার তার অনেক কম। কোনো কারণে মাসের মাঝামাঝি অসুস্থ হলে তাকে পরের মাসের প্রথম পযর্ন্ত অপেক্ষা করতে হয় বেতনের জন্য। কারণ তখন তার হাতে চিকিৎসা খরচ চালানোর মতো পযার্প্ত টাকা থাকে না। তবে সম্প্রতি কারখানা থেকে স্বাস্থ্য বীমার একটি বিশেষ পলিসির আওতায় নেয়া হয়েছে তাকে। এই পলিসির আওতায় বাষির্ক মাত্র ১০০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে তিনি ১২ হাজার টাকার হাসপাতাল খরচ এবং ৩ হাজার টাকা ওষুধ সুবিধা পাবেন।

আমেনা বেগমের মতো অনেকেই এখন হাফছেড়ে বেঁচেছেন এটা জানতে পেরে যে, এখন তাদের চিকিৎসা খরচ নিজেদের চালাতে হবে না। এই স্কিমে অন্তুভুির্ক্তর তিন মাসের মাথায় আমেনা বেগম তার পেটে ব্যথা নিয়ে কোম্পানির অনুমোদিত নারী ও শিশু যতœ কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য জান। দ্রæত ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে ওষুধ দেন। সেখানে তার প্রায় এক হাজার টাকার ওষুধ লাগে। যার পুরোটাই বীমা কোম্পানি প্রদান করে। তিনি বলেন, আমি আগে কখনো এমন বীমা সুবিধার কথা শুনিনি। এই সুবিধা না পেলে আমি পরের মাসের বেতন পাওয়া পযর্ন্ত অপেক্ষা করতাম চিকিৎসার জন্য। এখন আর আমার শারীরিক কোনো সমস্যা হলে দেরি করি না।

সাভার, আশুলিয়া এবং গাজীপুরের পঁাচটি কারখানার ১০ হাজার শ্রমিক এই বীমা স্কিমের অন্তভুর্ক্ত। বাষির্ক ৫৭৫ টাকার প্রিমিয়ামের মধ্যে কেয়ার ফর ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও ৪৭৫ টাকা প্রদান করে। এই প্রতিষ্ঠানটি কারখানা মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য কমানোর বিষয়ে কাজ করছে। মিলেনিয়াম টেক্সটাইলসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বাসু দেব বলেন, তাদের মোট ২২০০ শ্রমিকের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৬০০ শ্রমিক এই বীমা স্কিমের আওতায় এসেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ নারী। যারা বিভিন্ন গাইনোকোজলিক্যাল সমস্যায় আক্রান্ত।

এ বছরের প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অথর্নীতি ইন্সটিটিউটের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই বীমা সুবিধা চালুর পর কারখানায় অনুপস্থিত শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। ইন্সটিটিউটের পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, এই সুবিধার কারণে শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে শ্রমিকদের জন্য একটি জীবন বীমা পলিসি চালু করলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

মিলেনিয়াম টেক্সটাইল সম্প্রতি জীবন বীমা সুবিধা চালু করেছে। যার আওতায় কোনো শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে স্বাস্থ্য বীমা বাদে শ্রমিকরা ৩০ হাজার টাকা পাবেন। ‘ওয়াকির্ং উইথ ওমেন টু’ প্রকল্পের আওতায় এসএনভি নামের ন্যাদারল্যান্ডসের একটি উন্নয়ন সংস্থা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা ও জীবন বীমার খরচ এবং স্বাস্থ্য বীমা সম্পকের্ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। সংস্থাটির টিম লিডার পারথীবা রাহাত খান বলেন, ২০১৫-১৬ সালে তিনটি কারখানায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা চালু করি। ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় এখন পুরো তৈরি পোশাক শিল্পে এটি চালুর চেষ্টা করছি।

এই প্রকল্পের জন্য কেয়ারফর ফাউন্ডেশন ২০১৯ সাল পযর্ন্ত তহবিল যোগান দিবে। তবে ‘ওয়াকির্ং উইথ ওমেন টু’ ২০১২ সাল পযর্ন্ত আথির্ক সহায়তা দিবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফাউন্ডেশনের অনুদানের অথর্ দিয়ে খুব অল্প সংখ্যক শ্রমিককে বীমা সুবিধা দেয়া যাবে। তবে গোটা তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিককে বীমার আওতায় আনা কঠিন কাজ। তিনি আরও বলেন, তবে বিজিএমইএ এবং শ্রম ও কমর্স্থান মন্ত্রণালয়ের পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল রয়েছে। যদি কোন শ্রমিক আবেদন করে তবে ট্রেড বডি চাহিদা অনুযায়ী তহবিল থেকে তাদের আথির্ক সহায়তা করে। এছাড়া বিজিএমইএ কমের্ক্ষত্রে আহত শ্রমিকদের জন্য গ্রæপ বীমার ব্যবস্থা করেছে।

এদিকে, বাবুল আক্তার নামের একজন শ্রমিক নেতা বলেন, যদি কোনো শ্রমিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত অথবা কোনো আঘাতের কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন তবে তিনি কল্যাণ তহবিল থেক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে আথির্ক সাহায্য পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের আবেদন বোডর্ মিটিংয়ের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে এবং অনেক কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিতে হয়। যা একটি দীঘের্ময়াদি প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, এসএনভি স্বাস্থ্য বীমার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে, যা খুবই গুরুত্বপূণর্ একটি অংশ। তবে সরকারের এটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা উচিত।

নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ ডা. কনের্ল (অব) শাহজাহান বলেন, তৈরি পোশাক শ্রমিকরা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবে বিভিন্ন ধরনের অসুখে ভোগেন। তারা প্রধানত টনসিলের প্রদাহ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ঠাÐ, কাসি, ডাইরিয়াহ, মাথাব্যথা, অনিদ্রা এবং শাসকষ্টজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া অনেকেই যক্ষায় আক্রান্ত হন।

শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত) অনুযায়ী কোনো কারখানায় ১০০ জনের বেশি স্থায়ী শ্রমিক থাকলেই সেখানে গ্রæপ বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নিউইয়কির্ভত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সোস্যাল একাউন্টিবিলিটি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান প্রশিক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, সকল স্টেকহোল্ডার সরকার, কারখানা মালিক, আন্তজাির্তক ব্রান্ড, ক্রেতা এবং শ্রমিকরা এগিয়ে আসলে স্বাস্থ্য বীমার এ উদ্যোগ আরও অনেক বেশি সফল হবে।

একটি আন্তজাির্তক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাইফুল আলম মালিক বলেন, যদিও আইনে শ্রমিকের স্বাস্থ্যবীমা বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটি করা গেলে কারখানার উৎপাদন বাড়বে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের কমের্ক্ষত্রে অনুপস্থিতির হার এবং চাকরি পরিবতের্নর হার কমাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<29927 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1