বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক

বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিল হলেও আদায় সামান্য

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বিপরীতে আদায় এক হাজার কোটি টাকা শীষর্ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে আদায়ের পরিমাণ নগণ্য
আহমেদ তোফায়েল
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক গত বছরের নয় মাসে বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিল করলেও শীষর্ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় প্রায় ব্যথর্ হয়েছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংক (জানুয়ারি-সেপ্টম্বর) সময়ে ২ দুই হাজার ৭২২ কোটি টাকা পুনঃ তফসিলের বিপরীতে মাত্র এক হাজার ৩০৮ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিরা আদালতের স্টে অডার্র (স্থগিত আদেশ) নিয়ে আসেন। যার কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ কম। ২০১৮ সালের জুন পযর্ন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির বিভিন্ন মামলায় ৪৬ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা আটকে আছে। তিনি বলেন, অনেক ঋণ খেলাপি একাদশ জাতীয় নিবার্চনে আদালতের স্টে অডার্র নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। যার কারণে নিবার্চনের আগে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় হবে বলে আশা করেছেন সেটি হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অগ্রণী ব্যাংক আলোচ্য সময়ে ৪১৬ কোটি টাকা পুনঃ তফসিল করেছে। এক বছর আগে শীষর্ ২০ খেলাপির কাছ থেকে ২১ কোটি ৪৯ কোটি টাকার বিপরিতে মাত্র ২ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। একই সময়ে শীষর্ খেলাপি ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে ২০৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়। যা এর আগের বছর ছিল ৪৪২.৯২ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংক ২০১৮ সালের প্রথম নয় মাসে শীষর্ ২০ খেলাপির কাছ থেকে ১৫২.৭০ কোটি টাকার বিপরিতে মাত্র ২ কোটি টাকা আদায় করেছে। শীষর্ ২০ খেলাপির বাইরে ১১৩ কোটি টাকা আদায় করে। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৫১.৩০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক গত বছরের নয় মাসে কোন খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেনি।

সোনালী ব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত শীষর্ ২০ খেলাপির কাছ থেকে ৪৮ কোটি টাকা আদায় করে। এর আগের বছরে একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৩১.১৪ কোটি টাকা। তবে শীষর্ খেলাপি ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে আদায় কমেছে। গত বছরের আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছিল ৫৫৫ কোটি টাকা। এর আগের বছরে একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৫৫৯.৫১ কোটি টাকা। গত বছরের নয় মাসে সোনালী ব্যাংক পুনঃ তফসিল করে এক হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ২৩২ কোটি টাকা পুনঃ তফসিল করে।

সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আলোচিত জনতা ব্যাংক নয় মাসে ৮৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ছয়গুণ বেশি। শীষর্ ২০ ঋণ খেলাপি ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে ২৯৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগের বছর হয়েছিল ৪০৫.৭৪ কোটি টাকা। গত বছরের নয় মাসে ব্যাংকটি ৮৩৪ কোটি টাকা পুনঃ তফসিল করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছিল ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। সেখান থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়ে গত বছর এর পরিমাণ দঁাড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে গত বছর মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ পুনঃ তফসিল করতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংকগুলো। এভাবে গত পঁাচ বছরে মোট ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোটের্ এ তথ্য উঠে এসেছে।

ঋণ পুনঃ তফসিলের পূণার্ঙ্গ নীতিমালা সম্পকের্ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাকুর্লার জারি হয় ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। পরবতীর্ সময়ে আরও দুই দফায় সাকুর্লার জারি করে ওই নীতিমালার কিছু শতর্ শিথিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালার সুবিধা নিয়ে ২০১২ সালে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করে ব্যাংকগুলো। এর পরের বছর থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃ তফসিলের গতি বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ পেয়েছিলেন খেলাপি গ্রাহকরা। এরপর ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়। ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করার পর গত বছর আরও ২৪ শতাংশ বেড়ে এর পরিমাণ দঁাড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে শুধু গত পঁাচ বছরেই ব্যাংকগুলো থেকে ৮৪ হাজার ৫০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিলের সুবিধা পেয়েছেন খেলাপি গ্রাহকরা। নিবার্চনী বছর হওয়ায় চলতি বছর দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ পুনঃ তফসিলের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা।

ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রাহক ও ব্যাংক উভয়ের স্বাথের্ই ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে চাপের মুখে প্রভাবশালী গ্রাহকদের পুনঃ তফসিল সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে ব্যাংক। এমনকি একই গ্রাহকের কোনো কোনো ঋণ ১০ বারও পুনঃ তফসিল করতে হয়েছে। এর পরও এসব গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকের টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36016 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1