শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক খাতে অস্থিরতার প্রভাব বেসরকারি ঋণে

ইমদাদ হোসাইন
  ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিতে। এই সঙ্কট চলতে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগই বেসরকারি খাত নির্ভর। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয় তৈরি হয়েছে। ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের পাশাপশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকটকে এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেসরারি খাতে ঋণ বিতরণের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। এই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ কমাটা অর্থনীতির জন্য খুব নেতিবাচক। কেননা এ রকম প্রবণতা থাকলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। পাশাপাশি বাধাগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা। ২০১৭ সালের একই সময়ের তুলনায় গত ফেব্রম্নয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে যা ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। গত কয়েক বছরে ঋণ প্রবৃদ্ধি এত কমতে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও অর্জিত হয় ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই ক্রমাগতভাবে কমছে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি। জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ১৫.৮৫, ১৪.৯৫, ১৪.৬৭, ১৪.৭২, ১৪.০১, ১৩.২০, ১৩.২০ ও ১২.৫৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, মুদ্রানীতিতে ঘোষিত বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা যে অর্জন হতেই হবে বিষয়টা এমন নয়। তবে অর্জন হলে ভালো। ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যা ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার একটি অন্যতম কারণ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন হবে না। কারণ ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বিরাজ করছে। আমানত সংগ্রহে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি নেই। ফলে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনের তুলনায় ঋণ দিতে পারবে না। এতে করে ঋণের সুদহার বেড়ে যাবে এবং দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

উলেস্নখ্য সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী পাঁচ দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। এই সুসংবাদ দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল দিকটির কথাও বলেছে। আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল খাত হচ্ছে ব্যাংক। এখানে ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়। অথচ একই ব্যবসায়ীকে একই যুক্তিতে বারবার পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া যেতে পারে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত প্রকাশনা ডেভেলপমেন্ট আপডেট' প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক ওই প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, বিদ্যমান খেলাপি ঋণ যদি ৩, ৯ ও ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে যথাক্রমে ৬, ২৯ ও ৩৫টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়তে পারে। আবার প্রতিটি ব্যাংকের যদি শীর্ষ তিনজন, সাতজন ও দশজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়ে যান, তবে মূলধন ঘাটতিতে পড়তে পারে যথাক্রমে ২১টি, ৩১টি ও ৩৫টি ব্যাংক। অন্যদিকে জামানতের বিপরীতে রাখা বন্ধকি সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য যদি ১০, ২০ ও ৪০ শতাংশ কমে যায়, তবে যথাক্রমে ২, ৫ ও ৯টি ব্যাংক এমন বিপদে পড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলছে, ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। কেবল ২০১৮ সালেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাঁচটি ব্যাংকে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ আছে, তা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক। মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতেই আছে ৩১ শতাংশ এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন উন্নয়ন ব্যাংকগুলোতে আছে ২২ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ আছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের মতে, ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের অভ্যাস এবং ঋণ অবলোপন করার প্রবণতা বেড়েছে, যা ব্যাংক খাতে চাপ সৃষ্টি করছে। ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<44639 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1