শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুলে থাকল কপারটেক

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রস্তাব দেবে ডিএসই।

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় কপারটেকের ব্যালেন্স শিট অধিকতর নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে (সিআরও) তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়।

ডিএসইর পর্ষদ সূত্রে জনা গেছে, তদন্তে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক হিসাবে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক হিসাবে অসঙ্গতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যেরও সত্যতা মিলেছে। যে কারণে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ডিএসইর পর্ষদ। পর্ষদ সভা শেষে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম মাজেদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ থাকার বিষয়টি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) তদন্ত করছে।

তিনি বলেন, 'এফআরসির ডাকে সাড়া দেয়নি কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। কপারটেক বিতর্কের অবসান ঘটানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডিকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের অন্য পরিচালক দেশের বাইরে রয়েছেন- এমন কারণ দেখিয়ে তারা আসেননি। তাই কপারটেকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।'

গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে ইতোমধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের আবেদন গ্রহণ করছে কোম্পানিটি। তবে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেদনে রয়েছে নানা গরমিল। কপারটেকের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৩৩ শতাংশ কমলেও সুদব্যয় বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল প্রায় ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা নামে ২৬ কোটি টাকায়। কিন্তু আগের বছর যেখানে এ ঋণের বিপরীতে পৌনে ২ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করে, গত বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ১২ লাখ টাকা।

একইভাবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১৭ শতাংশ কমার বিপরীতে সুদ ব্যয় বেড়েছে ৪৬১ শতাংশ। সার্বিক হিসাবে ঋণ ২৬ শতাংশ কমলেও সুদ ব্যয় বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া লিজ ঋণ ৪৫ শতাংশ বাড়লেও সুদব্যয় বেড়েছে ৫ হাজার শতাংশ। অর্থাৎ একদিকে কোম্পানির ঋণ কমেছে, কিন্তু বেড়েছে সুদ পরিশোধের পরিমাণ। এ বৈপরীত্যের বিষয়ে কোম্পানি বা অডিটরের কোনো ব্যাখ্যা বা পর্যবেক্ষণ নেই।

দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরের প্রতিটিতে বিক্রয় কার্যক্রমে খরচ মোট বিক্রির ৭৫ শতাংশ। বিক্রয় বাড়লেও কী করে প্রতি বছর খরচ ৭৫ শতাংশই হলো, তার ব্যাখ্যা নেই কোম্পানির। কপারটেক প্রতি হিসাব বছর শেষে মজুদ পণ্যের যে দাম উলেস্নখ করেছে, তা-ও অবিশ্বাস্য।

গত হিসাব বছরে যেখানে মোট টার্নওভার (লেনদেন) ছিল ৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সেখানে এর ইনভেনটরিজ ৩২ কোটি টাকার। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে যেখানে টার্নওভার ছিল পৌনে ৯ কোটি টাকারও কম, সেখানে ইনভেনটরিজ (মজুদ) ছিল পৌনে ১০ কোটি টাকার। মাঝের বছরগুলোর তথ্যও একই রকম। এমন তথ্য বলছে, কোম্পানিটি তার বাজার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য উৎপাদন করছে, যা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়।

কপারটেক আইপিওতে আসার মাত্র দেড় বছর আগে রাতারাতি পরিশোধিত মূলধন ১৫ গুণ বা ১৫০০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ কোটি টাকা করেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা বেড়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ আইপিওতে আসার লক্ষ্য নিয়ে অযথা শেয়ার বাড়িয়েছে কোম্পানিটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50943 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1