বৃহস্পতিবার ব্যালট যুদ্ধের ফল দেখে একবারও মনে হয়নি যে, অর্থনীতির এমন বিবর্ণ ছবিকে সঙ্গী করে ভোট ময়দানে গিয়েছিল মোদি সরকার।
প্রতিশ্রম্নতি ছিল, বছরে দুই কোটি কাজের সুযোগ তৈরির। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো তো দূর, বরং নোটবন্দি আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর খেসারত গুনে কাজ খুইয়েছেন বহু জন।
শিল্পের চাকায় গতি আনতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার হয়েছিল 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্পের। কিন্তু নতুন লগ্নি সেভাবে না আসার পাশাপাশি ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে বহু কারখানার। ধুঁকছে ছোট-মাঝারি শিল্প। ফলে আকাল কল-কারখানায় কাজেরও। কেন্দ্র চাষির আয় দ্বিগুণ করার কথা বলেছে। কিন্তু ফসলের দাম না পেয়ে ধুঁকছেন চাষিরা। এমনকি আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।
তুলনায় মসৃণ বিশ্ব অর্থনীতি আর বিশ্ব বাজারে অপেক্ষাকৃত সস্তা অশোধিত তেলের সুবিধা পেয়েও সম্ভব হয়নি ৮% বৃদ্ধিতে পৌঁছানো।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ব্যালট যুদ্ধের ফল দেখে একবারও মনে হয়নি যে, অর্থনীতির এমন বিবর্ণ ছবিকে সঙ্গী করে ভোট ময়দানে গিয়েছিল মোদি সরকার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ওই সমস্ত অর্থনৈতিক বিষয় আঁচড়ই কাটতে পারল না নির্বাচনী লড়াইয়ে? না কি এ নিয়ে মোদি সরকারকে সেভাবে নাগাড়ে আক্রমণ করতে পারলেন না বিরোধীরা? মোদির জাতীয়তাবাদের জিগির আর কংগ্রেসের রাফাল নিয়ে আক্রমণের মাঝে তা মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেল কি না, ঘুরপাক খেল সেই প্রশ্নও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃদ্ধির হার থেকে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' হয়ে কাজের সুযোগ তৈরির অর্থনীতির অঙ্কে যে তার সরকার খুব ভালো জায়গায় থেকে ভোটে নামেনি, তা বিলক্ষণ জানতেন মোদি। তাই 'অচ্ছে দিন' শব্দবন্ধ প্রায় উচ্চারণ করেননি বলেই চলে। তার বদলে বরং মজবুত সরকার আর জাতীয়তাবাদে জোর দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাদের প্রশ্ন, বিরোধীরাও এই সমস্ত নিয়ে তেমন ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছেন কি? নোটবন্দির সময়ে নরেন্দ্র মোদি বিপক্ষে থাকলে কি এত সহজে পার পেত সরকার? বেকারত্বের হার সাড়ে চার দশকে সবচেয়ে বেশি হলে, কেন্দ্রের সরকারকে কতটা জোর আক্রমণ করতেন তিনি? সে দিক থেকে বিরোধীদের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলছেন তারা। একই সঙ্গে, মূল্যবৃদ্ধির হার কম থাকা, ব্যাংকিং থেকে শুরু করে শৌচাগারের মতো নানা পরিষেবা সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছানো মোদি সরকারের পক্ষে গিয়েছে বলে তাদের অভিমত।
তবে মোদিও বিলক্ষণ জানেন, বারবার বালাকোটের মতো কান্ডে চিঁড়ে ভিজবে না। আগামী দিনে প্রশ্ন উঠবেই অর্থনীতির হাল আর কাজের সুযোগ তৈরি নিয়ে। বিশেষত যেখানে ফি বছর চাকরির বাজারে পা রাখছেন বহু তরুণ-তরুণী। অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে কাজের সুযোগ তৈরিই তাই নতুন মোদি সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ।