শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক ঋণমুক্ত বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

নতুনধারা
  ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৯-২০ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত

যাযাদি রিপোর্ট

আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বৈদেশিক ঋণমুক্ত বিকল্প বাজেট ঘোষণা করেছে অর্থনীতিবিদদের পেশাদার সংগঠন 'বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি' (বিইএ)। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে নিয়মিত এ প্রস্তাবনা দিয়ে আসছে উন্নয়নশীল বিশ্বে সরকারের বাইরে বিকল্প বাজেট ঘোষণাকারী একমাত্র এ সংগঠনটি। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে এ বিকল্প বাজেটের প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। ঢাকাসহ দেশের ২৬টি জেলা শহরে একই দিনে একই সময় এটি অনুষ্ঠিত হয়।

'বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৯-২০' শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষে এ প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকা, যা অর্থমন্ত্রীর সম্ভাব্য প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বাজেটের কমপক্ষে দ্বিগুণ। প্রস্তাবিত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর ও ৩১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর, অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের যোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়।

আবুল বারকাত বলেন, 'আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে ২০টি নতুন উৎস নির্দিষ্ট করেছি যা আগে ছিল না। এর মধ্যে অর্থপাচার রোধ, কালো টাকা উদ্ধার ও সম্পদ কর এই তিনটি নতুন উৎস থেকেই সরকার মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারেন। আর এ টাকা দিয়ে প্রতি বছর তিনটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব।'

তিনি বলেন, 'প্রস্তাবিত বাজেট অর্থায়নে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না, প্রস্তাব অনুযায়ী বাজেটের আয় কাঠামোতে মৌলিক গুণগত রূপান্তর ঘটবে। বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। জাপানে বাজেট ঘাটতি ২৫৬%।'

অর্থনীতি সমিতির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাতওয়ারি সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে, মোট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তারপর আছে জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদু্যৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্যখাত, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত। চলতি বছরের সরকারি বরাদ্দের চেয়ে বেশি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ অন্যান্য খাতগুলো হলো-কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পলস্নী উন্নয়ন, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস, জনশৃঙ্খলা-নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা।

কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার বিষয়ে আবুল বারকাত বলেন, 'আমরা মনে করি যে প্রস্তাবিত বাজেট বছরেই কৃষি ও কৃষক ভাবনার যথার্থতা বিচারে ১ লাখ ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ২ লাখ বিঘা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া সম্ভব, আর পাশাপাশি ২০ হাজার জলাহীন প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার বিঘা খাস জলাশয় বন্দোবস্ত দেয়া সম্ভব। বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে এ লক্ষ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দসহ বাস্তবায়ন কৌশল সংশ্লিষ্ট পথনির্দেশনা দেয়া জরুরি।'

কৃষি ফসলের উৎপাদন অঞ্চল গঠন ও কৃষককে কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য দেয়ার প্রস্তাব করে বারকাত বলেন, 'এ বছর বোরো ধানে প্রতি মণে কৃষকের প্রকৃত লোকসান হবে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। কৃষককে তার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য জরুরিভাবে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারিভাবে সংগ্রহের ক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের তুলনায় কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়াতে হবে, সেক্ষেত্রে এ বছরের বোরো ধানের মণপ্রতি বিক্রয়মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ১২০০ টাকা।'

দেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে কিন্তু তার মধ্যে ২০ লাখ মানুষেরই কর্মসংস্থান হয় না। সেক্ষেত্রে স্টার্ট আপ পুঁজি সরবরাহ এবং শিক্ষাখাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব দেন আবুল বারকাত।

নারীর উন্নয়নে তার প্রস্তাবগুলো হলো, 'দরিদ্র নারীদের সরকারিভাবে ক্ষুদ্র-অনুদান, প্রশিক্ষণ, গার্মেন্টসসহ কর্মজীবী নারীদের আবাসন ও ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, একশ ভাগ নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, ক্রীড়া খাতে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষায় বরাদ্দ ৩ গুণ বাড়ানো এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধসংশ্লিষ্ট বরাদ্দ এখনকার তুলনায় কমপক্ষে ৩০ গুণ বাড়ানো।'

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আবুল বারকাত প্রস্তাব করেন, 'অভ্যাসগত ঋণখেলাপিদের মোকাবেলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে তাদের পূর্ণউদ্যমে চালু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক হবে না। সমস্যাটি জটিল তবে সমাধান সম্ভব বলে মনে করি।'

আগামী ৩ বছরের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ লাখ ভ্যাট লাইসেন্সধারীকে ভ্যাটের আওতায় আনার প্রস্তাব করে বলা হয়, এনবিআর ও পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্য মতে বাংলাদেশের ভ্যাট লাইসেন্সধারীর সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে বড়জোর ১ লাখ লাইসেন্সধারীর কাছ থেকে (মোট ভ্যাট লাইসেন্সধারীর ১০%) বর্তমানে ভ্যাট আদায় হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ। তিনি বলেন, 'প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ফল। তাও সমিতির গুটিকয়েক ব্যক্তির। আর সরকার যে খসড়া বাজেট আগামী জুন মাসে সংসদে উত্থাপন করবেন তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দেশি-বিদেশি পরামর্শকসহ কয়েক হাজার কর্মকর্তার যৌথ কর্মকান্ড।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51077 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1