বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের পর ভালো পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা

ম তিন মাসের বেশি সময় বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে ম সম্প্রতি বেশকিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ ম বাজেটেও থাকছে প্রণোদনা ম এতে আশায় বুক বাঁধছেন বিনিয়োগকারীরা
নতুনধারা
  ০৮ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

পবিত্র রমজান মাসের অধিকাংশ দিন দেশের শেয়ারবাজার দরপতনের ধারায় থাকলেও ঈদের আগের শেষ তিন কার্যদিবসে বড় উত্থানের দেখা মিলেছে। বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখিতা ঈদের পরও অব্যাহত থাকবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত বিশেষ তহবিল পুনঃবিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়তে সংশোধন করা হয়েছে এক্সপোজার।

পাশাপাশি নতুন আইপিও আবেদন নেয়া বন্ধ করা হয়েছে। পেস্নসমেন্ট শেয়ারে তিন বছর লকিং (বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা) রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তারা বলছেন, তিন মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। সম্প্রতি টানা দরপতনে শেয়ারবাজারের সূচক যেভাবে পড়েছে, তাতে যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক বিষয়।

ঈদের পরে কেমন শেয়ারবাজার প্রত্যাশা করছেন- জানতে চাইলে বিনিয়োগকারী মো. সোহাগ বলেন, সম্প্রতি বাজারের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে ঈদের আগে কিছুটা হলেও বাজারে চাঙাভাবের দেখা মিলেছে। আমাদের প্রত্যাশা ঈদের পরও যেন এমন অবস্থা অব্যাহত থাকে।

তিনি বলেন, তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। রোজার মাসের প্রায় পুরোটাই বাজার মন্দার মধ্য দিয়ে গেছে। ঈদের খরচ জোগাড় করতে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করেছি। পোর্টফোলিওতে যেসব শেয়ার আছে তাতেও লোকসানে আছি। ঈদের পর বাজার ভালো না হলে পথে বসতে হবে।

মনির হোসেন নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি শেয়ারবাজারের জন্য বেশকিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে সরকার শেয়ারবাজারের প্রতি মনোযোগী। শোনা যাচ্ছে বাজেটেও বেশকিছু প্রণোদনা দেয়া হবে। এতে আমরাও আশায় বুক বাঁধছি ঈদের পর বাজার ভালো হবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি শেয়ারবাজার উন্নয়নে বিএসইসি বেশ তৎপর হয়েছে। ২০১০ সালের মহাধসের সময়ও বিএসইসিকে এতটা তৎপর দেখা যায়নি। এখন দেখার বিষয় বিএসইসি যেসব পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলো কতোটা বাস্তাবায়ন হয়।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে নিরব দরপতন হয়েছে তাতে অনেক বিনিয়োগকারী পথে বসার উপক্রম। আমার পোর্টফোলিও দেখলেই তা বুঝতে পারবেন। যে কয়টি কোম্পানির শেয়ার আমার কাছে আছে তারা সবগুলোরই দাম কমেছে। এভাবে দরপতন চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের বাজারের ওপর কোনো আস্থা থাকবে না।

শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি আশা করছি। তবে সম্প্রতি যে দরপতন হয়েছে, তার কোনো যুক্তিসংগত কারণ আমি দেখি না।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়শনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত বিশেষ তহবিল পুনঃবিনিয়োগ এবং ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইপিও, পেস্নসমেন্ট, বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরিচালকদের শেয়ার ধারণের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। বাজেটেও বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হলে বাজেটের পর শেয়ারবাজার ভালো হবে বলে আমরা প্রতাশা করছি।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, শেয়ারবাজার কখন ভালো হবে, আবার কখন খরাপ হবে তা বলা সম্ভব না। তবে বাজারের জন্য সম্প্রতি বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, ডিএসই'র শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা মাঝে মধ্যে দু-একটি কঠোর পদক্ষেপের উদ্যোগ নিলেও ম্যানেজমেন্টের কারণে তা সফলতার মুখ দেখছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং পুঁজিবাজারের প্রভাবশালীরা কিসে সন্তুষ্ট থাকবেন- সে কাজ করতে ব্যস্ত ডিএসই'র ম্যানেজমেন্ট।

এদিকে এসিআই লিমিটেড ও কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্তের উদ্যোগ নেয় ডিএসই'র পরিচালনা পর্ষদ। বছরের পর বছর ধরে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির লোকসান টানায় এসিআই লিমিটেডের আর্থিক আবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যে কারণে ডিএসই পর্ষদের একটি অংশ এসিআই'র সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান 'স্বপ্ন' বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। আর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা তুলতে অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন দেয়ায় কপারটেক ইন্ডাস্ট্র্রিজকে তালিকাভুক্ত না করার দাবি ওঠে।

ডিএসই'র শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের চাপাচাপিতে এসিআই'র বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং কপারটেক'র আর্থিক হিসাব খতিয়ে দেখতে ডিএসই'র সিআরও-কে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি ডিএসই'র পরিচালনা পর্ষদ সভায় কোম্পানি দুটির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসিতে সুপারিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই পর্ষদ সভায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে এক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক প্রথমে ডিএসই'র সিএফও-কে বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানোর আহ্‌বান করেন। তবে কোনো কথা না বলে সিএফও আবদুল মতিন পাটুয়ারী স্থানত্যাগ করেন। এরপর ওই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক সিআরও জিয়াউল হক-কে কথা বলার আহ্‌বান জানান। এ কর্মকর্তাও সিএফও'র পথ অনুসরণ করেন। এ সময় ডিএসই'র ওই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হতাশা প্রকাশ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<52518 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1