মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রতিক্রিয়া

বাজেটে সবকিছুই ভালো দেখছে এফবিসিসিআই

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০
শনিবার প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম -যাযাদি

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে জনমুখী ও ব্যবসাসহায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তারা বলছে, এ বাজেট ব্যবসাবান্ধব এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে শনিবার আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে এফবিসিসিআই। এতে মূল বক্তব্য পাঠ করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

বিনা প্রশ্নে ফ্ল্যাট, জমি ও শিল্পে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়াকে স্বাগত জানান শেখ ফজলে ফাহিম। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কোনো কারণে অপ্রদর্শিত থাকতে পারে। সেই অর্থ উৎপাদন খাতে গেলে সেটিকে আমরা নেতিবাচক বলে মনে করি না। তা ছাড়া অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হলে অর্থপাচারও বন্ধ হবে।'

চলতি অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটি হলে বেসরকারি খাত বাধাপ্রাপ্ত হয় উলেস্নখ করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস, অবকাঠামো তহবিল, অবকাঠামো বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক উপাদানের ওপর জোর দেয়ার অনুরোধ করেন।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। হয়রানিমুক্ত রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনা ও সঠিক অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, 'আমাদের প্রত্যাশা, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো হয়রানি থাকবে না। ভোক্তাপর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি পাবে না। ব্যবসা সহজীকরণের কোনো বাধা থাকবে না। ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত হবে এবং করের আওতা বৃদ্ধি পাবে।' সুষ্ঠু তদারকিব্যবস্থা জোরদার করলে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ব্যক্তি, বিধবা ও স্বামী-নিগৃহীত নারী, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, চা-শ্রমিকসহ সব উপকারভোগীর সংখ্যা ও আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করা মানবিক পদক্ষেপ। এ ছাড়া যুবকদের জন্য ব্যবসা উদ্যোগ সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, 'কালোটাকা মানে যারা বৈধ পথে আয় করেছে; কিন্তু কোনো কারণে কর পরিশোধ করেননি। ওইসব অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে আমরা। এটি সুযোগ থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে। তবে অবৈধ পথে আয় করা অর্থের বিনিয়োগের পক্ষে আমরা নেই।' নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক-নির্ভরতা বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করবে মনে করছে এফবিসিসিআই।

প্রস্তাবিত বাজেটে বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ উৎসাহিত করতে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, যা একটি প্রশংসনীয় বিষয়। প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির প্রেরিত অর্থ বৈধ পথে দেশে এলে তা নিঃসন্দেহে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে এফবিসিসিআই।

একই সঙ্গে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে গতিশীল বন্ড মার্কেটসহ অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্ট যেমন ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদি বিষয়ে গৃহীত উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনটি।

বাজেটে কৃষকের স্বার্থে শস্যবীমা চালু একটি প্রগতিশীল উদ্যোগ উলেস্নখ করে এফবিসিসিআই জানায়, বছরব্যাপী কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য ও সুষ্ঠু সাপস্নাই চেইন নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত গুদাম নির্মাণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান এবং হ্রাসকৃত করহার বহাল রাখার সিদ্ধান্ত রপ্তানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ সহায়ক হবে।

ফজলে ফাহিম বলেন, 'আমরা প্রস্তাবিত বাজেট আরও বিশ্লেষণ করছি। এফবিসিসিআইয়ের অধিভুক্ত চেম্বার/অ্যাসোসিয়েশনের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের বাজেট পরবর্তী বিস্তারিত প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করব।'

ফাহিম বলেন, '২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ভিশন, ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় প্রণীত এ বাজেটে জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এফবিসিসিআইর মতে, এ বাজেট ব্যবসাবান্ধব এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।'

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, 'এ ধরনের একটি জনমুখী ও ব্যবসাসহায়ক বাজেট দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী এবং বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।' তিনি বলেন, 'বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আরঅ্যান্ডডি, নভেশন ও আইসিটি, অবকাঠামো, আর্থসামাজিক, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবসম্পদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় এ বাজেট যুগোপযোগী।'

তিনি আরও বলেন, 'সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ব্যক্তি, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, চা শ্রমিকসহ সব উপকারভোগীর সংখ্যা ও আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করা মানবিক পদক্ষেপ।'

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, 'বিদু্যৎ ও জ্বালানি যোগাযোগব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে। এসব অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আরও ভূমিকা রাখবে।'

বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, 'নতুন বাজেটে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড, ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড ও অন্যান্য ফিনান্সিয়াল টুলসের ওপর জোর দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।' সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, হাসিনা নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53734 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1