বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের টাকা নিয়ে যারা খেলেছে তাদের ছাড় নেই : অর্থমন্ত্রী

নতুনধারা
  ০৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এবং উদ্যোক্তা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট

যারা মানুষের টাকা নিয়ে 'ছিনিমিনি খেলেছে' তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এই নির্দেশনা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই বলেও তিনি ব্যাংকগুলোকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এবং উদ্যোক্তা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, "আমাকে একটু সময় দিন। আমরা কাউকে ছাড় দিব না। যারা খারাপ উদ্দেশ্যে টাকা নিয়েছে তারা কেউ পার পাবে না।

"তবে যারা ভালো উদ্দেশ্যে টাকা নিয়েছে, ব্যবসা করতে গিয়ে লস করেছে। সুদ বেশি হওয়ার কারণে টাকা ফেরত দিতে পারেনি, তাদের বিষয়টা ভিন্ন। আমি কাউকে অপমান করতে আসিনি; কারও ক্ষতি করতে আসিনি।

"কিন্তু যারা মানুষের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, টাকা ফেরত না দেয়ার জন্য নিয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।"

নয়-ছয় সুদহার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। বার বার তাগাদা দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো এটা বাস্তবায়ন করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে অঙ্গীকার করার পরও নয়-ছয় সুদ বাস্তবায়ন করেনি ব্যাংকগুলো।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার ক্ষোভ প্রকাশের পরও ব্যাংক মালিকরা ব্যাংক ঋণে সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনেনি।

সংবাদ সম্মেলনে মুস্তফা কামাল বলেন, "আমরা আজকে ব্যাংকারদের সাথে বসেছিলাম- এ বিষয়টি জানতে আমরা যে বাজেট ঘোষণা করেছি, তারা সেটার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে পারবে কিনা? তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।

"ব্যাংকাররা আমাকে আশ্বস্ত করেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াবে। বিশেষ করে তারা বলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমবে। পাশাপাশি নয়-ছয় বাস্তবায়নের বিষয়টিও আরও এগোবে।"

"ব্যাংকিং খাতের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো তাদের কস্ট অব অপারেশন কমিয়ে আনবে। এসব বিষয়ে ব্যাংকাররা আমাদেরকে কথা দিয়েছে এবং আপনারা সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর ফলাফল দেখতে পাবেন।"

মুস্তফা কামাল জানান, এ মুহূর্তে সরকারিসহ মোট ১৬টি ব্যাংক ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন করেছে।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, খেলাপি ঋণ আর 'এক টাকাও বাড়বে না'।

সেজন্য ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিলসহ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর সে কথা ফলেনি, খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের (রাইট অফ) স্থিতি ছিল ৩৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ যোগ করলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৫০ হাজার ১২২ কোটি টাকা।

'ঢালাও লিখবেন না'

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে 'ঢালাওভাবে' কিছু না লিখতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, "আপনারা পার্টিকুলার ব্যাংক নিয়ে কথা বলতে পারেন। কিন্তু পুরো খাত নিয়ে যদি লেখেন তাহলে সেটা অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।"

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, "আপনারা দেখেছেন দেশের একটি ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংক সমস্যায় পড়েছিল। আমরা সেটি নিয়ে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংক নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি; কাজ চলছে। এটি যেন আবার পুরো শক্তিতে ফিরে আসতে পারে এবং অর্থনীতিতে ভালো অবদান রাখতে পারে আমরা সে ব্যবস্থা করছি।

"আমরা আমেরিকার মতো আমাদের ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দিতে পারব না। এগুলো দেশের মানুষের অনেক কষ্টের টাকায় সৃষ্টি। আমরা এগুলোকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভালো অবস্থায় নিয়ে আসব।"

পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী বলেন, "আমি এটাও বলতে চাই, এই ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য যারা দায়ী অর্থাৎ যারা টাকা মেরে যাওয়ার জন্য নিয়েছে তারা কিন্তু সে টাকা ব্যবহার করতে পারবে না। তাদেরকে কী শাস্তি দেয়া হবে, এখন আমি সেটা বলব না। তবে তারা পার পাবে না।"

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের ব্যাংকগুলোর এ অবস্থায় আসার পেছনে আরও একটি ব্যাপার কাজ করেছে, আমাদের অর্থনীতি যে গতিতে বাড়ছিল হঠাৎ করে তার গতি অনেকটা বেড়ে গেছে। আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমরা এখন ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আস্তে আস্তে তারা সেই সব ক্ষমতা অর্জন করবে।"

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<61321 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1