মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গিগ অর্থনীতিতে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান

নতুনধারা
  ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

গিগ ইকোনমি বা শেয়ারড অর্থনীতির ক্ষেত্রে দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স, অনলাইন মার্কেটপেস্নস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অ্যাপভিত্তিক নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন দেশের তরুণরা। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে গিগ অর্থনীতির দিক থেকে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই গিগ অর্থনীতির বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোচিত হচ্ছে।

গিগ ইকোনমির সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে, 'গিগ ইকোনমি' এমন একটা পরিবেশ, যেখানে অস্থায়ী চাকরির ছড়াছড়ি থাকবে আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে স্বতন্ত্র কর্মীদের (ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওয়ার্কার্স) নিয়োগ দেবে। তারা ফুল টাইম কর্মীদের চেয়ে ফ্রিল্যান্সারদের গুরুত্ব বেশি দেবে এবং বেশির ভাগ কাজ এই ফ্রিল্যান্সারদের দিয়েই করাবে। এই ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতাকে বা এই রকম ফ্রিল্যান্স দক্ষতাগুলোকে বলা হচ্ছে, 'গিগ ক্যাপাসিটি'। যেই দেশ বা শহর যত বেশি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ও গতিশীল, সেই দেশে বা শহরে এই 'গিগ ক্যাপাসিটিসম্পন্ন' লোকবলের দরকার বেশি হবে। মজার ব্যাপার হলো, এই গিগস রাই, কিন্তু হবে শহুরে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

অর্থনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, উন্নত বিশ্বে এই ধারা ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ধারণা করা যাচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ আমেরিকান চাকরির এই ধারা (ট্রেন্ড) দ্বারা প্রভাবিত হবেন, যা আস্তে আস্তে পুরো বিশ্বে ছড়াবে। বাংলাদেশও ইতোমধ্যে গিগ অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে চলে এসেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শুধু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপেস্নসে সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিলস্নুর রহমানের মতে, নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গিগ ইকোনমির মতো বিষয়গুলোতে আগ্রহ বাড়ছে। গিগ ইকোনমিতে কাজের বিষয়গুলো কতটা সঙ্গতিপূর্ণ বা টেকসই হচ্ছে কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে। ফ্রিল্যান্সারদের হাত ধরে বাংলাদেশে গিগ ইকোনমির ধারাটি শুরু হয়েছে। এটা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা গবেষণা জরুরি। বিশ্বের অনেক দেশে এখন গিগ অর্থনীতি ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। অনেক কাজ হচ্ছে ঘরে বসে। বাজার অনেক প্রতিযোগিতামূলক আর দ্রম্নত পরিবর্তনশীল। দেশের গিগ ইকোনমি কোন পর্যায়ে, এখন তা জানাটা জরুরি। যে অর্থনীতির দিকে আমরা যাচ্ছি, তার আয়বণ্টন কেমন হবে, শ্রমিকরা কতটুকু পাবেন, নতুন ধারা নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে এটা যে দেশের অর্থনীতির অন্যতম ধারা হবে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, মানসম্মত কর্মসংস্থান। এটা নিয়ে গবেষণা করে তার ফলাফলের ভিত্তিতে নীতিমালা তৈরিতে জোর দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডিসন রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ সালের তুলনায় বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৩০০ গুণ বেড়েছে। প্রায় ছয় কোটি আমেরিকান বর্তমানে ফ্রিল্যান্সের সঙ্গে যুক্ত। এটা ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০২৭ সালের মধ্যে আমেরিকার বেশির ভাগ কর্মীই ফ্রিল্যান্সের সঙ্গে যুক্ত হবেন।

ফ্রিল্যান্সিং পস্ন্যাটফর্ম আপওয়ার্ক ও ফ্রিল্যান্সার্স ইউনিয়নের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট শ্রমশক্তির চেয়ে তিন গুণ দ্রম্নত বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিং শ্রমশক্তি। এ ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি বস্নক চেইন, বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্রিল্যান্সিং কর্মী নিয়োগের ইচ্ছা বড় ভূমিকা রাখবে। দূর-নিয়ন্ত্রিত কর্মীদের চাহিদাও এখন বাড়ছে। ফ্লেক্সজবস নামের অনলাইন পস্ন্যাটফর্মের কর্মকর্তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭০টি ভার্চু্যয়াল কোম্পানি কাজ করছে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২৬। এর মধ্যে রয়েছে অটোমেটিক, আনসার কানেক্ট, ইনভিশন ও টপটালের মতো বড় প্রতিষ্ঠান।

গিগ ইকোনমির দিক থেকে বিবেচনায় এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত। কিন্তু ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে এশিয়ার অন্যান্য দেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে।

বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিং অ্যান্ড আউটসোর্সিং মার্কেটপেস্নস ফ্রিল্যান্সার ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতে গিগ অর্থনীতি দ্রম্নত বিকশিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গিগ অর্থনীতির দিক থেকে ভারত বিশ্ব ও এশিয়া অঞ্চলে নেতৃত্ব দেবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশের গিগ ইকোনমি এগিয়ে নিতে ফ্রিল্যান্সার ও ছোট উদ্যোক্তারা বড় ভূমিকা রাখছেন।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (ওআইআই) ডিজিটাল গিগ ইকোনমি নিয়ে ২০১৭ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই তালিকায় গিগ ইকোনমিতে এশিয়ার দেশগুলোর প্রাধান্য দেখা যায়। ওই প্রতিবেদনে ছয়টি দেশের কথা তুলে ধরা হয়। এই ছয়টি দেশ গেস্নাবাল ফ্রিল্যান্সিং ইকোসিস্টেমের অনলাইন জবগুলোর অধিকাংশ পেয়ে থাকে।

ওই তালিকায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সাপোর্ট কাজগুলো ভালোভাবে করে। বাংলাদেশের সফটওয়্যার নির্মাতাদের সংগঠন বেসিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিকস ডিজাইনসহ বিভিন্ন ধরনের বেশি আয়ের কাজগুলো বাড়ছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আরও দক্ষ কর্মী সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছে। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে অনলাইনে শ্রমদাতা (আউটসোর্সিং) দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63791 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1