শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পণ্য আমদানির এলসি খোলায় রেকডর্

যাযাদি রিপোটর্
  ০৫ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ অতীতের সব রেকডর্ ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবের্শষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, (২০১৭-১৮) অথর্বছরের জুলাই-মে সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৫৪০ কোটি ৪৬ লাখ (৬৪.৪০ বিলিয়ন) ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে।

বতর্মান বিনিময় হারে এই অথের্র পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা; যা চলতি ২০১৮-১৯ অথর্বছরের জাতীয় বাজেটের চেয়েও প্রায় লাখ কোটি টাকা বেশি। এলসি খোলার এই পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে পণ্য আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে এমন উল্লম্ফন আগে কখনো দেখা যায়নি।

২০১৬-১৭ অথর্বছরের জুলাই-মে সময়ে ৪ হাজার ৪১১ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল; প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশের মত।

অথর্নীতিবিদরা বলছেন, বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের আমদানি বাড়ায় এলসি খোলার পরিমাণ বাড়া স্বাভাবিক।

কিন্ত খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের এলাসি খোলার পরিমাণ যে ‘অস্বাভাবিক’ হারে বেড়েছে তাতে ভোটের বছরে বিদেশে অথর্ পাচারের সন্দেহও জোরালো হয়ে উঠেছে।

২০১৭-১৮ অথর্বছর শেষ হয়েছে প্রায় এক মাস হতে চললো, কিন’ বাংলাদেশ ব্যাংক সব শেষ প্রকাশ করেছে মে মাসের হালনাগাদ তথ্য।

চলতি বছরের ১১ মাসের তথ্যে দেখা যায়, এই সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চাল আমদানির জন্য। ২০১৭ সালে বন্যায় ফসলহানির কারণে চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে আনা হয়েছিল। আর এই সময়ে চাল আমদানির এলসি বেড়েছে ২১১০ শতাংশ।

এছাড়া গমের এলসি ৩৫ শতাংশ, পেঁয়াজে ৯০ শতাংশ, জ্বালানি তেলে ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমাদানির এলসির পরিমাণ ২৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।

পলিসি রিসাচর্ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নিবার্হী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য সরঞ্জাম আমদানি সাম্প্রতিক সময়ে আমদানির উল্লম্ফনে ভ‚মিকা রেখেছে। এছাড়া খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানিও ‘অস্বাভাবিক হারে’ বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমদানি বাড়াকে অথর্নীতিতে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হয়। ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া।

‘কিন’ প্রশ্ন হচ্ছে, অনেক সময়ই আমরা শুনি যে, এক পণ্য আমদানির নামে অন্য পণ্য আমদানি হচ্ছে। অনেক সময় শূন্য কন্টেইনারও আসছে। আবার ওভার ইনভয়েসের (আমদানি করা পণ্যের বেশি মূল্য দেখিয়ে) মাধ্যমে অথর্ পাচার করছেন অনেকে।

সে কারণে আমদানির এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে খানিকটা ‘উদ্বিগ্ন’ বলেও জানালেন আন্তজাির্তক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কমর্কতার্ আহসান মনসুর।

আমদানি বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে অথর্ পাচারের একটি পথ হচ্ছে ওভার ইনভয়েস দেখানো। অথার্ৎ যে দামে পণ্য কেনা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে বাড়তি অথর্ বিদেশে পাচার হয়।

আবার যে পণ্য আমদানি হওয়ার কথা, তার বদলে কম দামি পণ্য বা অন্য পণ্য আনা হয় কখনও কখনও।

আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজাভর্ চাপে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আহসান মনসুর বলেন, একটা দিক দিয়ে এতদিন আমরা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিলাম। রিজাভর্ প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে উঠে গিয়েছিল। কিন্ত আমদানি বাড়ায় সেটা আর থাকছে না। আকুর বিল পরিশোধের পরপরই রিজাভর্ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজাভের্র পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজাভর্ কমে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল।

আন্তজাির্তক মানদÐ অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।

আহসান মনসুর বলেন, আমদানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে ধীরগতিতে। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স যদি একই হারে বাড়ত তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অথর্বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১০ দশমিক ৩ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<6502 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1