শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত বেড়েছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ব্যাংক খাতের দুর্দিন চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি তলানিতে এসে ঠেকেছে। ব্যাংক খাতে ঋণ প্রবাহে মন্দা চলছে। ব্যাংক খাতের আমানতের সুদহার কম হওয়ার সুযোগে নিজেদের আমানত বাড়িয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে। মার্চ শেষে এনবিএফআইয়ের মোট আমানতের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে সুদহার বেশি হওয়ার কারণেই এ খাতের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলো থেকে (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়ে হয়েছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রতি বছর নিচের দিকে নামছে।

আলোচ্য সময়ে সরকারি খাতের আমানত বাড়ার ফলেই সামগ্রিক এনবিএফআই খাতের আমানত বেড়েছে। ওই তিন মাসে সরকারি খাতের আমানত বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। একই সময়ে বেসরকারি খাতের আমানত বেড়েছে মাত্র এক দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ৬৪৪ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকা রাখছেন জনগণ। বছর শেষে মুনাফা বেশি পেলেও শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা করা বিপজ্জনক। তাই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ও সরকারি বন্ডসহ আলাদা আলাদা খাতে বিনিয়োগের পরামর্শ এই অর্থনীতিবিদের।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বা লিজিং কোম্পানিগুলোতে মোট আমানতি হিসাব ছিল তিন লাখ ৬৪ হাজার ৫১৯টি। গড়ে প্রতিটি হিসাবে আমানত ছিল ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩০ টাকা। অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বর শেষে হিসাবপ্রতি গড় আমানত ছিল ১২ লাখ ৮৭ হাজার ১০৪ টাকা। তখন মোট হিসাব ছিল তিন লাখ ৫৩ হাজার ৮৯০টি। শাখা ছিল ৫৩২টি। সেই হিসেবে আলোচিত সময়ে এনবিএফআইগুলোর হিসাবপ্রতি গড় আমানত কমেছে।

এছাড়া আলোচিত সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) ঋণ হিসাব সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৭৫ হাজার ১৭৬টি। প্রতিটি হিসাবে গড় ঋণ ছিল ২৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা। আগের ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ঋণ হিসাব সংখ্যা দুই লাখ ৭০ হাজার। হিসাবপ্রতি গড় ঋণ ছিল ২৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা। সেই হিসেবে গড় ঋণও কমেছে।

আলোচ্য ত্রৈমাসিকে এনবিএফআইগুলোতে সরকারি খাতের আমানতের অংশ বেড়ে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে এনবিএফআই'র আমানতের মধ্যে সরকারি খাতের আমানতের অংশ ছিল এক দশমিক ৩৭ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি ২০১৯ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে এনবিএফআই খাতের ঋণ ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে ৬৯ হাজার ৩২৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আলোচ্য সময়ে এনবিএফআইগুলোতে সরকারি খাতের ঋণ দুই দশমিক ২৫ শতাংশ বা ২২১ কোটি টাকা বেড়ে ১০ হাজার ৬৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, একই সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ৮৯০ কোটি টাকা বেড়ে ৫৯ হাজার ২৬১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, মার্চ শেষে এনবিএফআই খাতের আমানতের মধ্যে সরকারি খাতের আমানত ছিল ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতের আমানত ছিল ৯৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে ঋণের ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ সরকারি খাতে এবং ৮৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেসরকারি খাতে বিতরণ করা হয়েছে।

আরও দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে এনবিএফআইগুলোর আমানতের মধ্যে মেয়াদি আমানতের অংশ বেড়ে ৯৬ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে এনবিএফআইগুলোর আমানতের মধ্যে মেয়াদি আমানতের অংশ ছিল ৯৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে মেয়াদি আমানত বেড়েছে ৬৯২ কোটি টাকা বা এক দশমিক ৫৭ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এনবিএফআইগুলোর আমানতের ৯৩ দশমিক ৩৮ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। আমানত সংগ্রহের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এনবিএফআইগুলোর মোট আমানতের ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এসেছে এ বিভাগ থেকে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগ থেকে শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ, সিলেট বিভাগ থেকে শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ, রংপুর বিভাগ থেকে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগ থেকে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ এবং বরিশাল বিভাগ থেকে শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ আমানত এসেছে।

বন্ধকী ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি রয়েছে জমি বা ফ্ল্যাট বন্ধক বা জামানতি ঋণ। প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণের বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক নিয়ে ঋণ দিয়েছে এনবিএফআইগুলো।

আমানতের মতো ঋণের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে এনবিএফআইগুলোর ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত মার্চে দেশে এনবিএফআই'র সংখ্যা ছিল ৩৬টি। অবশ্য গত জুলাইয়ে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি এনবিএফআইকে অবসায়ন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67784 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1