শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ শতাংশ পিছিয়ে রপ্তানি আয়

নতুনধারা
  ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
চট্টগ্রাম বন্দর - ফাইল ছবি

যাযাদি রিপোর্ট

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি আয়ে ভাটা দেখা দিয়েছে। অর্থবছরের তৃতীয় মাসে এসে এখনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১.০৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ। সেপ্টেম্বর মাসে অধিকাংশ খাতেই রপ্তানি আয়ে ভাটা দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয় করলেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ধাক্কা লেগেছে রপ্তানি আয়ে। গতকাল রোববার রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির হালনাগাদ তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ১১.০৫ শতাংশ কম হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির অর্ডার কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি বাণিজ্য কমেছে। রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রপ্তানি আয় আরও কমে যাবে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ হাজার ৮৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু এ সময়ে আয় হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১.০৫ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি এ বছর প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্য হালনাগাদে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৯১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্য ছিল ৩১৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এছাড়া একক মাস হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩১৪ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট রপ্তানি আয়ে পোশাকের অবদান প্রায় ৮৫ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্য রপ্তানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৯০ শতাংশ। তাই তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলে তার প্রভাব পড়ে পুরো রপ্তানি খাতে।

আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ও কমেছে। অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের এই তিন মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১০ কোটি ৬৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। এ সময় রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল ৮১৯ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

এ বিষয়ে একজন তৈরি পোশাক উদ্যোক্তা জানান, পোশাক রপ্তানিতে আয় কমার মূল কারণ আগের চেয়ে অর্ডার কমেছে, পাশাপাশি মূল্যও কম দিচ্ছি। এছাড়া ভারত, ভিয়েতনাম, পকিস্তান ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা অনেক ক্ষেত্রে নানা সমস্যা ও সুযোগ সুবিধার অভাবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি। এ সব কারণে রপ্তানি আয় কমছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিযোগী দেশগুলো রপ্তানিতে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ অনেক দেশ ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের টাকার ক্ষেত্রে এটি করা হয়নি। এ বিষয়েও সরকারকে বিবেচনা করতে হবে বলে জানান তিনি।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বড় খাত গুলোতেও রপ্তানি আয় কমেছে। প্রথম তিন মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমে ২৬ কোটি ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ডলার। গত বছর একই সময়ে এখাতে রপ্তানি আয় ছিল ২৯ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১০.০৩ শতাংশ। এ খাতে এ বছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ডলার।

পস্নাস্টিক পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তিন মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। গত বছর একই সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.০১ শতাংশ।

ইপিবি বলছে, আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি আশার আলো দেখা গেছে। একই সঙ্গে অর্জন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রাও। তিন মাসে পাট ও পাটজাত খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ২২ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। প্রথম তিন মাসে এখাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। গত বছরের একই সময়ে এ খাতের আয় ছিল ২১ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। সে হিসেবে এখাতের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

তবে কমেছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি। গত তিন মাসে চামড়া পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৫ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.০৬ শতাংশ কমেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার। অবশ্য গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<69944 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1