শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংকটে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দেশের বাজারে মার্কিন ডলারের সংকট চলছে। ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের মান বাড়ছে। দুর্বল হচ্ছে টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ১ টাকা বেশি। তবে সাধারণ মানুষ, যারা ভ্রমণ করতে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের ৮৭ থেকে ৮৮ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ডলার।

ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য না থাকা, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা কারণে ডলারের বাজারে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রপ্তানি বাণিজ্য ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে কিছুটা উৎসাহিত হলেও বেড়ে যাচ্ছে পণ্য আমদানির ব্যয়। কারণ, আমদানির জন্য বেশি মূল্যে ডলার কিনতে হচ্ছে। ফলে খাদ্যশস্য, ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামালসহ সব আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গেল মাসের ২৮ নভেম্বর থেকে আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ডলারের দাম ধরে ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর ১০ পয়সা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিন থেকে এক ডলারের বিপরীতে আমদানি দায় মেটাতে দেশি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো নিচ্ছে সর্বনিম্ন ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর টাকার বিপরীতে পাঁচ পয়সা বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অন্যদিকে সবশেষ ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, বিদেশ ব্যাংক আল ফালাহ নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সায়। আইএফআইসি ৮৭ টাকা ৩০ পয়সা এবং ব্র্যাক ব্যাংক ৮৭ টাকা ২০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করছে। বেসরকারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮৭ টাকায়। এছাড়া ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক।

এদিকে ডলারের দাম বাড়ালে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমদানিকারক ও সাধারণ ভোক্তারা। কারণ পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। তবে লাভবান হবেন রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলারের দাম বাড়ালে ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারকরা। অন্যদিকে লাভবান হন রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়ে। আর পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। স্বল্প আয়ের মানুষ সমস্যায় পড়েন। তাই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের দাম বাড়ানোর লাভ ক্ষতি কী এটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে জানান প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো অভিযানসহ নানা কারণে একটি গোষ্ঠীর ভ্রমণের নামে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এতে করে ডলারের উপর চাপ পড়েছে। তবে এ চাপ ডলারের খোলাবাজারে বেশি পড়েছে। কারণ, ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গেলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু খোলাবাজার থেকে সহজে টাকা দিয়ে ডলার কেনা যায়। যার কারণে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বেশি। আর এ প্রভাব ব্যাংকগুলোতেও পড়েছে। কারণ এখন আমদানি চাপ থাকায় হঠাৎ করে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনছে। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য না থাকা, বিদেশে অর্থ-পাচারসহ নানা কারণে ডলারের বাজারে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দামও বাড়ছে।

রপ্তানি আয়ের নিম্নগতির প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থ-বছরের প্রথম চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থ-বছরের প্রথম চার মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ২৫১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে এক হাজার ৮১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে অক্টোবর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৫৬২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা) দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। ঘাটতির এ অংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৫৩২ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থ-বছরের একই সময়ে তুলনায় এবার ঘাটতি বেড়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থ-বছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা ঋণাত্মক হয়েছে। প্রথম চার মাস চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79941 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1