বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে কি দাঁড়াবে শেয়ারবাজার?

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপের পর পতনের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশের শেয়ারবাজার। পরপর টানা দুই দিন বাজারে ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা গেছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন দুই বাজারে মূল্যসূচক বেড়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া বেশ কিছু উদ্যোগের পর বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮২ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে দুই দিনের বড় পতনের রেশ কাটিয়ে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কার জরুরি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলছেন, 'সরকারের সম্প্রতি নেওয়া উদ্যোগগুলো বাজারের পতন ঠেকাতে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও বাজার সত্যিকার স্বাভাবিক করতে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কার জরুরি। সংস্কারের মাধ্যমে শেয়াবাজারের মূল সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। না হলে কিছুদিন পর আবারও পতনের ধারায় ফিরবে বাজার।'

আহমেদ রশিদ লালী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের ফলে বাজার কিছু সময়ের জন্য ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। কিন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কার না হলে এই উদ্যোগগুলো বিফলে যেতে পারে।' তিনি বলেন, 'বাজার ঠিক করার জন্য সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)ও আন্তরিক। কিন্তু আমাদের নিজেদের ঘরই ঠিক নেই।'

ডিবিএ-এর সাবেক এই সভাপতি বলেন, 'ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এমন কোনো বিভাগ এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি, যেখানে বাজারের পতনের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করবে। পতনের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন না করে যত উদ্যোগই নেওয়া হোক, দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে এর সুফল পাওয়া যাবে না। এ জন্য প্রথমত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কার দরকার। দ্বিতীয়ত, একটি গবেষণা বিভাগ তৈরি করতে হবে। ওই বিভাগে দক্ষ গবেষক নিয়োগ দিলে তারা গবেষণা করে বাজারের প্রকৃত চিত্র ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদকে নিয়মিত জানাবে। পর্ষদও সেই মতাবেক ব্যবস্থা নিবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত জানতেই পারলাম না, কেন গত দেড় বছর ধরে বাজার নিম্নমুখী হয়ে আছে। বিশ্বের অন্যান্য শেয়ারবাজারেও খারাপ সময় আসে, আবার তারা ঘুরেও দাঁড়ায়। তাদের গবেষকদের সাজেশন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে অল্পদিনের মধ্যেই তাদের বাজার ঠিক হয়। কিন্তু আমাদের কোনও গবেষক নেই, কোনও গবেষণাও নেই। যে কারণে দেড় বছর ধরে নানা উদ্যোগের পরও বাজার নিম্নমুখী থাকছে।'

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ডিএসই-এর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমে ২৬১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসই-এর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৩১০ পয়েন্ট।

বড় ধসের কবলে পড়া শেয়ারবাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই বৈঠক থেকে শেয়ারবাজারের এই অবস্থার উত্তরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী সভায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ শিগগিরই বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সপ্তাহের শেষ দুই দিন পরপর পতন না হলেও বড় ধরনের পতনের কবলে পড়ে গত সপ্তাহে মূল্যসূচক ও লেনদেন উভয়ই কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে বাজার মূলধনও। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের তিন কার্যদিবসই ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। কিন্তু দুই কার্যদিবসে বড় দরপতনে সপ্তাহ শেষে পতনের খাতাতেই নাম লিখিয়েছে শেয়ারবাজার। অর্থাৎ সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মূল্য কমেছে। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মূল্য বেড়েছে। আর মূল্য কমেছে ২৭৭টির। তবে অপরিবর্তিত ছিল ২১টির মূল্য।

তথ্য বলছে, দরপতনের সঙ্গে ডিএসইতে গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনের গতিও কমে গেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয় ২৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৫১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

আর গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৩২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এদিকে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতনে সপ্তাহ শেষে ডিএসই'র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84983 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1